ত্যাগ ও তিতিক্ষাই যেন উন্নয়ন ও অগ্রগতি এবং সুনিশ্চিত ভবিষ্যতের হাতছানি দিয়ে যাচ্ছে। তাই এই বছর রজমানের ত্যাগ শুরু হয়েছে আমাদের ত্যাগের ও বিসর্জনের মাস মার্চে। আর এই মার্চেই শুরু হয়েছিল স্বাধীনতা রক্ষায় এবং অর্জনের কঠোর এবং কঠিন যাত্রার। যার শুরুটা ছিল ২৬ মার্চের আগুণঝড়া অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মত বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি কথার মাধ্যমে। সেই স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রতিটি ক্ষণ যেন কতইনা কঠোর ও কঠিন এবং মৃত্যুর শতভাগ ঝুকিতে ঝুকিময় ছিল তার বাস্তবতার সত্যতা ইতিহাসই ধারাবাহিক বর্ণনায় ফুটিয়ে তুলেছে। আজ আমরা স্বাধীন এবং এই স্বাধীনতার পরিপূর্ণ স্বাধ আস্বাধনের দ্বীতিয় ধাপে অবতীর্ণ রয়েছি। এই দ্বিতীয় ধাপই হলো জীবন সংগ্রাম; আর এই জীবন সংগ্রামে লিপ্ত থাকতেই কতনা চড়াই উৎরাই পাড় করতে হচ্ছে। এই জীবনের সকল ক্ষেত্রে সফলতার জন্য এই চলছে দ্বিতীয় যুদ্ধ আর এই যুদ্ধ জয়ের জন্য যুক্ত হয়েছে সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত মূল্যবোধ। আমরা এখন সেই মল্যবোধ সংমিশ্রনে খিমশীম খাচ্ছি। তবে কেউ কেউ পরিপূর্ণ সংমিশ্রন করে সফলতায় এগিয়ে যাচ্ছে আর কেউ কেউ বিভিন্ন বাধায় বাধার সম্মুখিন হচ্ছে। যারা উৎড়িয়ে গেছে তারা কি সত্যিই অসাধারণ না তারা অতি সাধারণ। আর এই অতি সাধারনই এক সময় অসাধারণে পরিণত হয়।
সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত জ্ঞান ও গুনগুলিকে চর্চায় পরিণত করার সময় ও সুযোগ এখনই। যেমনিরূপে বঙ্গবন্ধুর দেয়া ২৬ মার্চের ভাষনের প্রতিটি কথার চর্চায় রূপদান করা হয়েছিল ঠিক তেমনিরূপে ধর্মীয় মূল্যবোধ বা আদেশ-নিষেধগুলি চর্চায় শতভাগ প্রয়োগের ফলেই স্বাধীনতা অর্জন আর সুফল নিয়ে নিশ্চিত ভবিষ্যতের শেষ গন্তর্বের স্থায়ী আবাসে নির্ভয়ে বসবাস করার ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করতে হবে। এখানে নেই কোন ভয়-ডর, লজ্জা এবং অস্বস্তি। জীবন সংগ্রামের সঙ্গে শুধু মূল্যবোধগুলো যা ধর্মীয় আবরণে আদেশ ও নিশেষ হিসেবে পরিগণিত হয়েছে সেইগুলোর সমন্বয় সাধন করুন। দুটি ত্যাগের সম্মিলনে হয়ে উঠুন সতেজ এবং সজিব অভয়ারণ্যের বাসিন্দা। একটি হলো স্বাধীনতা সংগ্রামের ত্যাগ আর একটি হলো এই মার্চের সিয়াম সাধনার ত্যাগ।
সকল ধর্মেই রোজার কথা আছে এবং সকলেই সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্যে রোজা পালন করে থাকেন। এই রোজার ত্যাগ, মহিমা এবং ফজিলত সম্পূর্ণই সৃষ্টিকতা তাঁর সৃষ্টির কল্যাণেই নিহিত রেখেছেন। সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্যে পালিত সিয়াম সাধনা বা আহলান সাহলান মাহে রামাধান এখন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রকে পরিশুদ্ধ করণে ব্যতিব্যস্ত। তাই আসুন আমরা আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এই সিয়াম সাধনার ব্যবহার চর্চায় পরিণত করি। যেমন ধরুন- পরিবারিক জীবনে, স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য জীবনে, সামাজিক জীবনে, কর্মক্ষেত্রে এবং ব্যবসায়িক প্রয়োজনে আর শিক্ষা-দিক্ষায়। যদি আমরা সিয়াম সাধনা সকল ক্ষেত্রে পরিপালন করতে পারি তাহলে ত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীনতা চেয়েও সহজ হবে জীবনের শেষ ইচ্ছা বা স্বপ্নগুলো দৃশ্যমান করা। জীবনে এই যাত্রায় এমনকি শেষ জীবনের নিরাপত্তায় শতভাগ নিশ্চয়তায় এই সিয়াম ভুমিকা রাখবে। জীবনের সকলক্ষেত্রে সিয়াম সাধনা শতভাগ বাস্তবায়ন করুন। লোকদেখানো ছকবাধা এবাদত থেকে বিরত থাকুন এবং সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্যে তাঁর ইচ্ছায় ও অভিপ্রায়ে সিয়ামে সাধনায় মনোনিবেশ করুন। শতভাগ সফলতা ইহকাল এবং পরকালে উপভোগের শতভাগ নিশ্চয়তা নিয়ে পথ চলুন।
বিশ্ব ব্যবস্থায়ও এখন সিয়াম সাধনার প্রয়োজন। রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় সকল ক্ষেত্রে সিয়াম সাধনার বাধতামূলক করণ জরুরী। তবে এই সিয়ামকে আবার রুটি রোজগার এমনকি আয়-উপার্জনের হাতিয়ারে পরিণত করার কাজে ব্যবহার করবেন না; বর্তমানে এই রুটি-রোজগার এবং উপার্জনের হাতিয়ারে ব্যবহার থেকে বের হয়ে এসে এই ক্ষেত্রে সিয়াম সাধনায় মনোনিবেশ করুন। সিয়াম সাধনা একে অন্যের কথা ভাবায় এবং একে অন্যকে সাম্যের কাতারে নিয়ে আসার ব্যবস্থায় শতভাগ সফলতা দৃশ্যমান রাখে। তাই সাম্য এবং ভার্তৃত্ব ও একে অন্যের সঙ্গে বোঝাপড়ার শতভাগ সফলতা পাওয়ার পদ্ধতিকে কথায় ও শিক্ষায় আর বই পুস্তকে নয় বরং ব্যবহারে আর চর্চার পরিণত করুন। যেমনিরুপে স্বাধীনতা যুদ্ধে বাঙ্গালী শতভাগ ঝাপিয়ে পরে সফলতা ঘরে তুলেছিল এবং এই সফলতায় এখন সিয়াম সাধনার শতভাগ চর্চার সংমিশ্রন করুন। শয়তানের কবল থেকে বিশ্ব ব্যবস্থাকে উদ্ধারকরণে সিয়াম সাধনার প্রয়োজন। রাষ্ট্রযন্ত্রের উন্নয়ন ও উন্নতির সোপানে সিয়াম সাধনার প্রয়োজন। যদি সঠিকভাবে স্ব স্ব ধর্মের আলোকে সিয়াম সাধনা পরিপালন করা যায় এবং এই সিয়াম সাধনায় ভুলত্রুটিগুলো চিহ্নিতকরণে একটি ব্যবস্থার উন্মোচন করা যায় এবং ঐ ব্যবস্থার দ্বারা শুদ্ধতার ক্ষেত্রে প্রয়োগের পরামর্শ এবং তদারকীতে উদারতা এবং ভালবাসা মিশ্রীত সহযোগীতা জাগ্রত রাখা যায় তাহলে সিয়াম সাধনার ক্ষেত্রে নতুনত্ব আসবে এবং স্ব স্ব ক্ষেত্রে বা অবস্থান থেকে একে অন্যকে সহযোগীতার বন্ধনে সাম্য এবং ভার্তৃত্ব পুনরুদ্ধার করার সুযোগ তৈরী হবে। দিন দিন আমরা মূল্যবোধ এমনকি সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত নিয়ামত হিসেবে পাওয়া আদেশ ও নিশেধ থেকে দুরে সরে গিয়ে শয়তানের প্রলোভনে প্রলুব্ধ হয়ে একাকার হয়ে যাচ্ছি। তাই এই দুই ত্যাগের মহিমার মহামিলনে আমরা চেষ্টা করি ফিরে পাওয়ার আকাঙ্খাকে পুন:জাগ্রত করে সৃষ্টিকর্তার অভিপ্রায় অনুযায়ী আগামীর জীবন প্রবাহ প্রবাহিত রাখতে।