অবশ্যই জিয়ার শাসনামলের সেনা হত্যার বিচার করব: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বাআ ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন: তার সরকার অবশ্যই সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের শাসনামলে গণহারে সামরিক কর্মকর্তাদের হত্যাকান্ড এবং ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত চক্রের মদদপুষ্ট অগ্নিসন্ত্রাসের বিচার করবে।

প্রধানমন্ত্রী গত ১৮ এপ্রিল তার সরকারি বাসভবন গণভবনে সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের শাসনামলে নিহত সামরিক কর্মকর্তা ও সৈনিকদের পরিবারের সদস্যদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে এ কথা বলেন। তিনি এসময় ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত চক্রের অগ্নিসংযোগে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্য এবং সম্প্রতি বঙ্গবাজার মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও দোকানদারদের সাথেও ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

প্রধানমন্ত্রী এসময় বলেন, আপনাদের সান্তনা দেওয়ার মতো কোন ভাষা আমার জানা নেই। কারণ আমিও একদিন আপনাদেরই মতো শুনেছিলাম যে, আমার আর কিছুই নেই। কিছু অপরাধী ইতিমধ্যে শাস্তি পেয়েছে। আর বাকিরা শাস্তির মুখোমুখি হবে।

তিনি বলেন, জিয়া প্রথমে জাতির পিতাকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যা করেন এবং তারপর একই বছরের ৩ নভেম্বর কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করেন। পরে একের পর এক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে অনেক সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা করেন। জিয়াউর রহমান যেসব সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা করেছিলেন তারা জানেন না, তাদের দোষ কী ছিল। জিয়া শুধু সামরিক কর্মকর্তাদেরই হত্যা করেন নি, আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মীকেও হত্যা করেছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যা মামলার বিচার করতে গিয়ে বিচারকদের বিব্রত বোধ করতে হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, মানুষ কীভাবে মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করতে পারে তা তিনি জানেন না। বিএনপি-জামায়াত কখনই চায় না, দেশের মানুষ ভালো থাকুক। সম্প্রতি রাজধানীতে একের পর এক অগ্নিকান্ডের ঘটনা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি সন্দেহ করছেন যে, বিএনপি-জামায়াত জোট এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে, কারণ তারা অতীতে বিভিন্ন ধরণের অপকর্ম করেছে।

দুঃস্থ মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে তার বাবা দেশ স্বাধীন করেছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমিও একই লক্ষ্যে কাজ করছি। জিয়াউর রহমানের প্রহসনমূলক সামরিক বিচারে ফাঁসিতে ঝুলানো বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সার্জেন্ট দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী নুর নাহার বেগম এসময় বর্ণনা করেন তার স্বামীকে কিভাবে অমানবিকভাবে হত্যা করা হয়েছিল এবং কিভাবে তাকে আজিমপুর কবরস্থানে গণকবরে দাফন করা হয়েছিল। গত ৪৬ বছরে কেউ আমাদের কষ্টের কথা শুনতে চায়নি। তিনি বলেন, কিন্তু আপনি আমাদের কষ্টের কথা ধৈর্য ধরে শুনেছেন, কারণ আপনি আপনার বাবা-মা এবং ভাইদের হারিয়েছেন। আর সেকারণে আমরা ভিতরে কেমন বোধ করছি, তা আপনি বুঝতে পারেন ।

নুর নাহার তার জীবদ্দশায় অবিলম্বে স্বামী হত্যার বিচার দাবি করে বলেন, তাহলে জিয়াউর রহমান কী করেছেন, তা বিশ্বের সব মানুষ জানতে পারবে। এসময় নুর নাহার বেগমের বেদনাদায়ক বর্ণনা শুনে প্রধানমন্ত্রী কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

পুলিশের উপ-পরিদর্শক মকবুল হোসেন জানান, ২০১৩ সালে রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানাধীন সাহেববাজার এলাকায় দায়িত্ব পালনকালে বিএনপি-জামায়াতের বোমা হামলায় দুই হাতের কব্জি হারিয়েছি। পুলিশে যোগদানের দেড় মাস পর আমি আমার কব্জি হারিয়েছি। আমি আমার সন্তানদের হাত দিয়ে আদর করতে পারি না এবং আমার সন্তানরা যখন জিজ্ঞেস করে ‘তোমার হাত কোথায়’ ? আমি কোন জবাব দিতে পারি না। আমি অবিলম্বে বিচার দাবি করছি। এসময় সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের আমলে তথাকথিত কোর্ট মার্শালের নামে সংঘটিত গণহত্যা এবং ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত চক্রের অগ্নিসন্ত্রাসে মানুষ হত্যা ও আহত করার পৃথক দুটি ভিডিও ক্লিপ দেখানো হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published.