প্রশান্তি ডেক্স ॥ সরকারের নিবন্ধন ও রুট পারমিটের আওতায় এলো ইলেকট্রিক মোটরযান। ইঞ্জিনচালিত মোটরযানের প্রচলিত পদ্ধতি অনুযায়ী ইলেকট্রিক মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এর রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস সার্টিফিকেট, ট্যাক্স টোকেন ও রূট পারমিটও হবে ইঞ্জিনচালিত মোটরযানের প্রচলিত নিয়মে। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) থেকে এসব কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে।
গত মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) থেকেই এটি কার্যকর হয়েছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা জারি করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার এই নীতিমালার গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। অবশ্য মোটরযুক্ত বাইসাইকেল ও রিকশা বা রিকশাভ্যান এর আওতায় পড়বে না।
ইলেকট্রিক মোটরযান রেজিস্ট্রেশন ও চলাচল সংক্রান্ত নীতিমালা ২০২৩ এর ইলেকট্রিক মোটরযানের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে-ইলেকট্রিক মোটনযান অর্থ এক বা একাধিক বৈদ্যুতিক মোটরের সাহায্যে চালিত মোটরযান, যার চালিকা শক্তি ওই মোটরযানে বৈদ্যুতিক চার্জ অথবা সংযুক্ত রিচার্জেবল ব্যাটারি। বাইসাইকেল বা রিকশা এবং রিকশাভ্যান এর অন্তর্ভুক্ত নয়।
রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি : ইঞ্জিনচালিত মোটরযানের প্রচলিত রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি অনুযায়ী ইলেকট্রিক মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে; ইঞ্জিনচালিত মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন ও ফিটনেস সার্টিফিকেট এবং ট্যাক্স টোকেন, রুট পারমিট যে ফরম্যাটে প্রদান করা হচ্ছে ইলেকট্রিক মোটরযানের ক্ষেত্রে একই ফরম্যাট ব্যবহারযোগ্য (ইঞ্জিনসম্পর্কিত বিষয়াদি ব্যতীত); কর্তৃপক্ষ বা যাত্রী ও পণ্য পরিবহণ কমিটি সংশ্লিষ্ট এলাকার জন্য নির্ধারিত সিলিং অনুযায়ী ইলেকট্রিক মোটরযান (EV) রেজিস্ট্রেশন প্রদান করবে। এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ বা যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটি ইলেকট্রিক মোটরযানকে অগ্রাধিকার দিবে; বাজারজাতকরণ বা রেজিস্ট্রেশন গ্রহণের পূর্বে স্থানীয় প্রস্তুতকারী/উৎপাদনকারী/সংযোজনকারী/আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে বিআরটিএ থেকে ইলেকট্রিক মোটরযানের মডেল ভিত্তিক Complete Knock Down (CKD), Completely Built Up (CBU) যে-কোনও ধরনের মোটরযানের ক্ষেত্রে টাইপ অনুমোদন নিতে হবে। টাইপ অনুমোদন প্রদানের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রচলিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে; রেজিস্ট্রেশন ব্যতীত ডিলার/এজেন্ট/আমদানিকারক/স্থানীয় প্রস্তুতকারী/উৎপাদনকারী কর্তৃক ইলেকট্রিক থ্রি-হুইলার ও মোটরসাইকেল ক্রেতার নিকট হস্তান্তর করা যাবে না; ইলেকট্রিক মোটরযান (EV) রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে সিলিন্ডার সংখ্যা, কিউবিক ক্যাপাসিটি (CC), অশ্বশক্তি (Horse Power), ইঞ্জিন নাম্বার, জ্বালানির স্থলে যথাক্রমে মোটরের সংখ্যা, মোটরের ক্ষমতা (কিলোওয়াট), ব্যাটারির ক্যাপাসিটি (kWh), মোটরের নম্বর, ইলেকট্রিসিটি উল্লেখ থাকতে হবে; এবং ইলেকট্রিক মোটরযান জনপ্রিয় করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ/প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিশেষ প্রণোদনা ঘোষণা করবে।
ইলেকট্রিক মোটরযানের বৈশিষ্ট্য: ইলেকট্রিক মোটরযান শনাক্তের জন্য বডি বা ফ্রেমে International VIN (Vehicle Identification Number) কোড অনুযায়ী প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের খোদাইকৃত নির্ধারিত ডিজিটের চেসিস নম্বর থাকবে; মোটরযানে ব্যবহৃত মোটর শনাক্তকরণের জন্য এর বডিতে প্রস্তুতকারকের খোদাইকৃত নির্ধারিত ডিজিটে স্পষ্ট মোটর নম্বর থাকবে; মোটর নষ্ট বা অকেজো বা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেলে, তা প্রতিস্থাপন বা বদল করা যাবে; চার্জিং সিস্টেম বাংলাদেশে প্রচলিত বিদ্যুৎ ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যের (ডোস্টেজ, ফ্রিকোয়েন্সি ইত্যাদি) সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে; মোটরযান নির্মাণ, সরঞ্জামাদি ও রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ ও সড়ক পরিবহণ বিধিমালা, ২০২২ (ইঞ্জিন সংশ্লিষ্ট বিধানাবলি ব্যতীত) প্রযোজ্য হবে; ইলেকট্রিক মোটরযানের ব্রেকিং, স্টিয়ারিং, লাইটিং, সাসপেনশন, হর্ন ইত্যাদি সিস্টেম ইঞ্জিনচালিত অনুরূপ মোটরযানের সমতুল্য হতে হবে; নিরাপত্তামান (Safety standard) অনুরূপ ইঞ্জিনচালিত মোটরযানের সমতুল্য হতে হবে; ইলেকট্রিক শক বা অন্য কোনও ঝুঁকি/বিপত্তি এড়াতে ইলেকট্রিক মোটরযানের ব্যাটারি ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক সরঞ্জামাদি/ব্যবস্থাদি এমনভাবে স্থাপন/সংস্থাপন করতে হবে যাতে বাংলাদেশের আবহাওয়ায় যাত্রীদের সুরক্ষা (Safety) নিশ্চিত হয়; লেডেন ওজন অবস্থায় কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত গতিসীমায় চলাচলের সক্ষমতা ইলেকট্রিক মোটরযানের থাকতে হবে; এবং মোটরযানের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা, ওভারহ্যাঙ্গসহ অন্যান্য পরিমাপের (Dimension) ক্ষেত্রে প্রমিতমাণ বিধি প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ ও সড়ক পরিবহণ বিধিমালা, ২০২২ অনুযায়ী প্রযোজ্য হবে।
ইলেকট্রিক মোটরযানের ইকনোমিক লাইফ : ইকনোমিক লাইফ অনুযায়ী নির্ধারিত মেয়াদে ইলেকট্রিক মোটরযান রেজিস্ট্রেশন প্রদান করতে হবে; ইলেকট্রিক মোটরযান বাণিজ্যিকভাবে চলাচলের লাইফটাইম সরকার নির্ধারণ করবে; এবং নির্ধারিত ইকনোমিক লাইফ শেষে ইলেকট্রিক মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন বাতিল এবং স্ক্র্যাপ করতে হবে।
ইলেকট্রিক মোটরযানের ফি ও চার্জ : ইঞ্জিনচালিত যেসব শ্রেণির মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন ফি ইঞ্জিন সিসি’র উপর নির্ধারিত আছে সেসব শ্রেণির ইলেকট্রিক মোটরযান রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে মোটরের ক্যাপাসিটি (kW)-এর ভিত্তিতে রেজিস্ট্রেশন ফি নির্ধারিত হবে। অন্যান্য ক্ষেত্রে আসন/ওজন-এর ভিত্তিতে রেজিস্ট্রেশন ফি নির্ধারিত হবে; সড়ক পরিবহন বিধিমালা, ২০২২ অনুসরণপূর্বক ইলেকট্রিক মোটরযানের ফিচার্জ নির্ধারণ বা পুননির্ধারণ করবে; এবং আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে সড়ক পরিবহন খাতে ব্যবহৃত মোটরযানের ন্যূনতম ৩০% ইলেকট্রিক মোটরযান ক্যাটাগরিতে রূপান্তরের লক্ষ্যে উৎপাদনকারী ও আমদানিকারকের জন্য অর্থ বিভাগ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা করবে।
রুট পারমিট : ইলেকট্রিক মোটরযানের রুট পারমিট প্রদানের ক্ষেত্রে সড়ক পরিবহন আইন এবং রুট পারমিট-সংক্রান্ত প্রচলিত বিধি-বিধান প্রযোজ্য হবে; এবং রুট পারমিট প্রদানের ক্ষেত্রে যাত্রী ও পণ্য পরিবহণ কমিটি বা সংশ্লিষ্ট রুট পারমিট প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের ইলেকট্রিক মোটরযানের ব্যাটারির চার্জ ধারনক্ষমতা (একবার চার্জে সর্বোচ্চ কিলোমিটার চলাচলের সক্ষমতা), চার্জিং অবকাঠামোগত সুবিধা ইত্যাদি বিবেচনা করতে হবে।
ভাড়া : স্টেজ ক্যারিজ বা কন্ট্রাক্ট ক্যারিজ হিসাবে ব্যবহৃত ইলেকট্রিক মোটরযানের ভাড়া সরকার নির্ধারণ বা পুনঃনির্ধারণ করতে পারবে।
আইনানুগ ব্যবস্থা ইলেকট্রিক মোটরযানের ক্ষেত্রে সড়ক পরিবহন আইনে বর্ণিত মোটরযান নিয়ন্ত্রণ এবং অপরাধ, শাস্তি ও পদ্ধতি সংক্রান্ত বিধানাবলি প্রযোজ্য হবে; ইলেকট্রিক মোটরযান চলাচলের সময় রেজিস্ট্রেশন, ড্রাইভিং লাইসেন্স, রুট পারমিট, ফিটনেস সার্টিফিকেট, ট্যাক্স টোকেন, ট্রাস্টি বোর্ডের আর্থিক সহায়তা তহবিলে জমাকৃত অর্থের রশিদ বা প্রত্যয়নপত্র ইত্যাদি কাগজপত্র মোটরযানের সঙ্গে রাখতে হবে; এবং ইলেকট্রিক মোটরযানের চালকদের সড়ক পরিবহন আইন-সংক্রান্ত যাবতীয় আইন, বিধি, প্রবিধান ও নীতিমালা মেনে চলতে হবে।
রেজিস্ট্রেশন নম্বর : ইলেকট্রিক মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন নম্বর প্রদানের ক্ষেত্রে মোটরযানের ধরন অনুযায়ী ইঞ্জিনচালিত মোটরযানের মতো রেজিস্ট্রেশন নম্বর প্রযোজ্য হবে। তবে যেসকল মোটরযানের সিরিজ সিসি’র উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত রয়েছে বা আছে সেসব মোটরযানের জন্য সিসি’র সমতুল্য কিলোওয়াটের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে; ইলেকট্রিক মোটরযানের ক্ষেত্রে রেট্রো-রিফ্লেক্টিভ নাম্বারপ্লেট, আরএফআইডি ট্যাগ, ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট (ডিআরসি), স্টিকার/লেবেল ইত্যাদি প্রযোজ্য হবে; এবং মোটরযান শনাক্তকরণের লক্ষ্যে রেজিস্ট্রেশন সনদে মোটরযানের শ্রেণি বা বডির ধরন বা উপযুক্ত স্থানে ‘ ÔElectric Vehicle (EV)’ সন্নিবেশিত করতে হবে।
নীতিমালার সাধারণ নির্দেশনা: ইলেকট্রিক মোটরযানের ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্ধারিত হারে আয়কর প্রযোজ্য হবে; মোটরযানের চার্জিং চাহিদার ভিত্তিতে বিদ্যুৎ বিভাগ বৈদ্যুতিক যান চার্জিং নির্দেশিকা অনুযায়ী চার্জিং স্টেশন স্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে; স্থানীয় প্রস্তুতকারী বা উৎপাদনকারী/সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ হতে নিবন্ধন গ্রহণ করতে হবে; অনুমোদিত চার্জিং স্টেশন বা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বা সোলার প্যানেল অথবা নবায়নযোগ্য যে কোনও জ্বালানি ব্যবহার করে ইলেকট্রিক মোটরযানের ব্যাটারি চার্জ করা যাবে; মূল বৈদ্যুতিক শক্তি সংরক্ষণের জন্য লিড অ্যাসিড/লিথিয়াম আয়ন অথবা অধিকতর উন্নত ও পরিবেশবান্ধব ব্যাটারি ব্যবহার করতে হবে; মোটরযান আমদানির ক্ষেত্রে অবশ্যই উহা নতুন হতে হবে। ব্যবহৃত ইলেকট্রিক মোটরযান আমদানি করতে হলে সংশ্লিষ্ট ইলেকট্রিক ভেহিকেল (EV) প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত লাইফ টাইম থাকতে হবে; মোটরযানে ব্যবহৃত মেয়াদ উত্তীর্ণ বা অকেজো ব্যাটারি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণপূর্বক পরিবেশবান্ধবভাবে ডিসপোজাল করতে হবে; বিদ্যমান অনিরাপদ ইলেকট্রিক মোটরযান কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান দ্বারা নিরাপদ মডেল অনুসরণপূর্বক রূপান্তর করতে হবে। অন্যথায় চলাচল করতে পারবে না; ধীরগতিসম্পন্ন (৩০ কিলোমিটার/ঘণ্টা) ইলেকট্রিক মোটরযান জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে চলাচল করতে পারবে না; মোটরযান প্রস্তুত ও রূপান্তরকরণে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের সঙ্গে জয়েন্ট ভেঞ্চারের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের জন্য কারখানা স্থাপন করতে পারবে; স্থানীয়ভাবে ইলেকট্রিক ভেহিকেল উৎপাদন ও রপ্তানি উৎসাহিত করতে বন্ডেড ওয়্যার হাউজ সুবিধা প্রদান করা যাবে; চার্জিং স্টেশন স্থাপনে বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করা হবে; সরকার আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ইলেকট্রিক মোটরযান টেস্টিং-এর জন্য এককভাবে অথবা বেসরকারি খাতের সঙ্গে যৌথভাবে টেস্টিং ও রিসার্চ ল্যাব স্থাপন করবে; ধীরগতিসম্পন্ন (৩০ কিলোমিটার/ঘণ্টা) বৈদ্যুতিক মোটরযানের চালকদের প্রশিক্ষণ যাত্রী ও পণ্য পরিবহণ কমিটির পরামর্শক্রমে জেলাভিত্তিক আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠান নিয়োগের মাধ্যমে প্রদান করা হবে; এবং সংশ্লিষ্ট জেলার যাত্রী ও পণ্য পরিবহণ কমিটি পৌরসভা/সিটি করপোরেশনের সঙ্গে পরামর্শ করে ধীরগতিসম্পন্ন ইলেকট্রিক মোটরযানের রুট নির্ধারণ করবে।