প্রশান্তি ডেক্স ॥ যেকোনও সময় নিজের মালিকাধীন জমি বিক্রি করার প্রয়োজন হতে পারে। তবে কেউ যদি কোনও কারণে জেলখানায় বন্দি অবস্থায় থাকেন, সেক্ষেত্রে নিজের মালিকাধীন জমি বিক্রি করাটা অতটা সহজ নয় বলে জানা গেছে। সহজ না হলেও বন্দি অবস্থায় তিনি নিজের জমি বিক্রি করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে তাকে দেশের প্রচলিত কিছু নিয়ম-কানুন মানতে হবে বলে জানিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়।
ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, বন্দি অবস্থায় নিজের সম্পত্তি বা জমি বিক্রির প্রয়োজন হলে জমির মালিককে প্রথমেই একজন আইনজীবী নিয়োগ দিতে হবে। এই আইনজীবীর মাধ্যমে তিনি তার মালিকানাধীন জমি বিক্রির সব কাজ সম্পন্ন করবেন। সেক্ষেত্রে জেল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করতে হবে এবং অনুমতি নিতে হবে। তা না-হলে মামলা ব্যতীত অন্য কোনও কাজের জন্য আসামির সাক্ষাৎ চাওয়া, কথাবার্তা বা কাগজপত্র লেনদেন করা, বা টাকা-পয়সা লেনদেনে ব্যাংকের হিসাব নিকাশ করার অনুমতি জেল কর্তৃপক্ষ নাও দিতে পারে। জেল কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া একজন বন্দি কোনোভাবেই নিজের জমি বিক্রি করতে পারবেনা। এক্ষেত্রে জেল কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে প্রচলিত নিয়মেই ওকালতনামার মাধ্যমে একজন বা একাধিক আইনজীবী নিয়োগ করতে পারবেন কারাগারে বন্দি থাকা জমির মালিক।
ভূমি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জেলে বন্দি জমির মালিক তার নিয়োগকৃত আইনজীবীকে নিজের মালিকানাধীন জমির বৈধ কাগজপত্র সরবরাহ করবেন। এ ক্ষেত্রে বন্দি তার আত্মীয়স্বজনের সহায়তা নেবেন। অবশ্যই জমির ক্রেতা কে হবেন এবং জমির দাম কত হবে, কিভাবে সেই মূল্য পরিশোধ হবে এসব বিষয় জমির মালিকের সঙ্গে পরামর্শ করেই নিষ্পত্তি করতে হবে। আগ্রহী ক্রেতা ও জেলখানায় বন্দি জমির মালিক দুজনে জমির দরদামের বিষয়টি চূড়ান্ত করলে পরবর্তী কাজগুলো সম্পন্ন করবেন বন্দির নিয়োগ করা আইনজীবী।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের সূত্র আরও জানায়, নিয়োগকৃত আইনজীবী জমির মালিকানার কাগজপত্রসহ ক্রেতাকে সঙ্গে নিয়ে একজন নিবন্ধনকৃত দলিল লেখকের সঙ্গে পরামর্শ করবেন। এরপর নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে দলিল লেখার কাজটি সম্পন্ন করবেন। দলিল লেখার কাজ শেষ হলে তা রেজিস্ট্রেশনের জন্য জমির ক্রেতা-বিক্রেতা উভয় পক্ষ সাব রেজিস্ট্রারের দফতরে যাবেন। এক্ষেত্রে চাইলে জমির বিক্রেতার নিয়োগকৃত আইনজীবীর সঙ্গে তার (বন্দির) আত্মীয়স্বজনরাও উপস্থিত থাকতে পারবেন। তবে এর আগে অবশ্যই জমি বিক্রির বিনিময়ে চুক্তি অনুযায়ী টাকা লেনদেনের বিষয়টি ফয়সালা করবেন। তবে জেলখানায় বসে জমির মালিক তার জমি বিক্রির ক্যাশ টাকা গ্রহণ করতে পারবেন না। এ ক্ষেত্রে জেল কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ টাকা তার নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করবেন, অথবা কোনও আত্মীয় বুঝে নেবেন। জমি বিক্রির টাকা ব্যাংকে লেনদেনের পর, বা কোনও আত্মীয়ের কাছে জমা দেওয়া টাকা তিনি যে বুঝে পেয়েছেন, তা নিশ্চিত করে লিখিত কাগজে বন্দি সম্মতি দেবেন। কারণ, জমি রেজিস্ট্রেশনের সময় বিক্রিত জমির টাকা বিক্রেতা বুঝে পেয়েছেন কিনা, তা জানতে চাইবেন সাব রেজিস্ট্রার। এ কারণেই সম্মতির বিষয়টি প্রয়োজন হবে। এই সম্মতিপত্রের সঙ্গে লিখিত দলিল রেজিস্ট্রি করবেন সাব রেজিস্ট্রার। এ ভাবেই জেলখানায় বসে কোনও বন্দি নিজের প্রয়োজনে নিজের জমি বিক্রি করতে পারবেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি উপজেলার সোহাগদল গ্রামের বাসিন্দা আবু বকর জানিয়েছেন, পারিবারিক এক কোন্দলে তার বড়ভাই একটি মামলায় জড়িয়ে কিছুদিন জেলখানায় আটক ছিলেন। তখন তার বড় ভাই টাকার প্রয়োজনে জমি বিক্রি করেছিলেন। সেই সুবাদে এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানার সুযোগ হয়েছিল।
তিনি জানান, জেল কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে একজন আইনজীবী নিয়োগ করেছিলাম। তিনিই সব কাজ করেছেন। আমরা শুধু দলিল রেজিস্ট্রির সময়ে সাব রেজিস্ট্রারের অফিসে উপস্থিত ছিলাম। তিনি আরও জানান, বিক্রিত জমির দাম বাবদ বেশিরভাগ টাকা আমার ভাইয়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে লেনদেন হয়েছে। কোনও সমস্যা হয়নি। আর বাকি টাকা ক্রেতা আমার ভাইয়ের ছেলের কাছে দিয়েছেন।
জানতে চাইলে বরিশাল জেলা দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম ফারুক ডাবলু বলেন, ‘এটি একটি প্রচলতি পদ্ধতি। তেমন জটিল নয়। পুরো কাজটিই আইনজীবীর মাধ্যমে করতে হয়। সে ক্ষেত্রে জেলখানায় বন্দি জমি বিক্রেতা নিজে স্বাধীনভাবে এ কাজটি করতে পারেন না বলে তার মন কিছুটা খারাপ থাকে বলে আমরা জেনেছি।’
এই আইজীবী জানান, জমির প্রবাসী মালিকের পক্ষে দেশে নিজের জমি বিক্রি করা যত জটিল, জেলখানায় অবস্থানকারী বন্দির পক্ষে নিজের জমি বিক্রি করা ততটা জটিল নয়।
জানতে চাইলে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা সৈয়দ মো. আব্দুল্লাহ আল নাহিয়ান বলেন, এ ক্ষেত্রে নিয়মটি খুবই সিম্পল। একজন আইনজীবীর মাধ্যমেই জেলখানায় আটক ব্যক্তি নিজের প্রয়োজনে নিজের জমি বিক্রি করতে পারেন। কোনও ধরনের জটিলতার কোনও সংবাদ আমরা এখনও পর্যন্ত পাইনি।’