প্রশান্তি আন্তর্জাতিক ডেক্স ॥ পূর্বাঞ্চলীয় ছোট শহর বাখমুত দখলে রুশ সেনাদের মরিয়া আক্রমণ প্রতিরোধের দায়িত্বে থাকা ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী অস্ত্র সংকটে রয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক সরেজমিন প্রতিবেদনে বাখমুতের ইউক্রেনীয় সেনাদের গোলাবারুদের ঘাটতির কারণে হতাশার কথা উঠে এসেছে। সেনারা আশঙ্কা করছেন, চলতি বছরে ইউক্রেন যদি যুদ্ধে জয়ী হওয়ার মতো কিছু করতে না পারে তাহলে পশ্চিমাদের সহযোগিতা ও সমর্থন কমতে শুরু করবে।
খবরে বলা হয়েছে, এক বছর আগে ১৭তম ট্যাংক ব্যাটালিয়নের ভলোদিমির ও তার বাহিনী এক সঙ্গে বিএম-২১ গ্রাদ রকেটের ৪০টি ব্যারেল থেকে গোলাবর্ষণ করেছেন। কিন্তু এখন তারা রুশ লক্ষ্যবস্তুতে মাত্র কয়েকটি গোলা ছুড়তে পারছেন। তিনি বলেন, আমাদের অস্ত্রের জন্য পর্যাপ্ত গোলাবারুদ নেই।
ভলোদিমির বলছেন, ইতোমধ্যে ইউক্রেনে নিজেদের গ্রাদ গোলাবারুদ শেষ করে ফেলেছে। তারা এখন অপর দেশের পাঠানো রকেটের ওপর নির্ভর করছেন। চেক রিপাবলিক, রোমানিয়া ও পাকিস্থান থেকে গোলাবারুদ আসছে। পাকিস্থান থেকে আসা রকেটগুলোর মান খুব একটা ভালো না।
যুদ্ধ যত দীর্ঘায়িত হচ্ছে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে আরও বেশি অস্ত্র ও গোলাবারুদ পাঠানোর আহ্বান জোরালো হচ্ছে। দেশটি এখন রাশিয়ার বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু রুশ আক্রমণ মোকাবিলা করে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতেই ইউক্রেনীয় বাহিনীকে প্রচুর গোলাবারুদ ব্যবহার করতে হচ্ছে।
বিভিন্ন মিত্র দেশের কাছে থেকে ট্যাংক ও আরমড যানের মতো আধুনিক অস্ত্র আসতে শুরু করলেও ইউক্রেনকে এখনও নিজেদের সোভিয়েত আমলের অস্ত্রভান্ডারের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। দেশটির কাছে থাকা গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে রুশনির্মিত বাক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এই অস্ত্রটি রাশিয়াকে ইউক্রেনের আকাশসীমার দখল নিতে দেয়নি।
এক বাক কমান্ডার জোসেফ বলেছেন, এই অস্ত্রটি রাশিয়ার এখন এক নম্বর লক্ষ্যবস্তু। এটির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চরম সতর্কতা অবলম্বন করছেন। এগুলোর সংরক্ষণ কঠিন হয়ে পড়ছে এবং ইউক্রেনের এমন অস্ত্র আরও প্রয়োজন।
বাখমুতের আরেকটি স্থানে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর ৮০তম ব্রিগেড মোতায়েন রয়েছে। রুশ হামলা ঠেকাতে তারা প্রতিদিন কয়েক শ’ রাউন্ড কামানের গোলা ছুড়ছে। ইতোমধ্যে তারা পশ্চিমাদের সরবরাহ করা কিছু অস্ত্রের ব্যবহার শুরু করেছে। এখানকার কমান্ডার সেরহি ও তার সেনারা ব্রিটিশ নির্মিত এল১১৯ হালকা কামান ব্যবহার করছে। সেরহি বলেছেন, এগুলোরও ব্যবহার সীমিত করা হচ্ছে। দিনে গড়ে তারা ৩০ রাউন্ড ছুড়ছেন।
সেরহি বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের পর্যাপ্ত গোলা রয়েছে। কিন্তু আমাদের গোলাবারুদ প্রয়োজন। গোলাবারুদ এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। চলতি বছর ইউক্রেন জয়ী বা পরাজিত হবে কিনা প্রশ্নের জবাবে সেরহি বলেন, এই বছর যদি আমরা আক্রমণে যাই এবং নিজেদের ভূখন্ড পুনরুদ্ধার করতে পারি, তাহলে আমরা জিতব। কিন্তু এমনটি যদি না ঘটে, তা হলে আরও পাঁচ থেকে দশ বছর যুদ্ধ করার মতো সরঞ্জাম আমাদের নেই।
ভলোদিমিরের সোজা কথা, ‘দেশ বিপর্যস্ত, অর্থনীতিও’। তার আশঙ্কা, এই বছর যদি রণক্ষেত্রে ইউক্রেনের পদক্ষেপ ফল নির্ধারক না হয় তাহলে হয়ত পশ্চিমাদের সমর্থন কমতে শুরু করবে। তিনি বলেন, আমরা আশঙ্কা করছি, আমাদের পশ্চিমা মিত্ররাও আমাদের সহযোগিতা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ছে।
সূত্র: বিবিসি