৫মে কোন কর্মসূচি নেই হেফাজতের

প্রশান্তি ডেক্স ॥ ইসলামের হেফাজতকারী স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা। তাই হেফাজতে ইসলামকে ইসলামের হেফাজতকারী না ভেবে গোষ্ঠী ও স্বার্থেও হেফাজতকারী ভেবে ক্রমবদ্ধমান সংস্কৃতিতে নব্য গোষ্ঠী বা দল ভাবা উচিত। এই দলের নেতা ও কর্মীরা বিভিন্ন সময়ে মানবতা এবং সৃষ্টিকর্তা এমনকি নিতী ও নৈতিকতা বিরোধী কাজে লিপ্ত যা প্রমানিত। বিভিন্ন সময়ে নেতাকর্মীরা কারাবন্দি হলেও বিতর্কিত ৫ মে উপলক্ষে এবার কোনও কর্মসূচি নেই হেফাজতে ইসলামের। তবে এদিন তাদের প্রয়াত ও কারাবন্দি নেতাকর্মীদের জন্য মোনাজাতেই সীমাবদ্ধ থাকবেন বলে জানিয়েছেন হেফাজত নেতারা। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, হেফাজতের কাঁধে মামলা ঝুলছে ২০৩টি, যার বেশিরভাগেরই এখনও তদন্ত শেষ হয়নি। যেগুলোর তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর বিচার প্রক্রিয়াও চলছে ধীরগতিতে।

রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের অবস্থান কর্মসূচি ও সহিংস ঘটনার ১০ বছর পূর্ণ হচ্ছে গত ৫ মে শুক্রবার। ১০ বছর আগে ২০১৩ সালের এ দিনে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনায় হতাহত হয়েছিলেন অনেকেই। হেফাজত নেতাকর্মীরা নাশকতা চালায় রাজধানীজুড়ে। ২০১৩ সালের ৫ মে’র পর থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে নাশকতা, দাঙ্গা-হাঙ্গামাসহ নানা অভিযোগে হেফাজতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অন্তত ২০৩টি মামলা হয়। এসব মামলা থেকে নেতাকর্মীদের শর্তহীন অব্যাহতি চান হেফাজত নেতারা। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন তারা। বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, হেফাজতের সঙ্গে সরকারের অলিখিত সমঝোতা হয়েছে। যে কারণে তারা এবার কোনও কর্মসূচি হাতে নেয়নি। তবে প্রকাশ্যে বিষয়টি নিয়ে কেউ মন্তব্য করতে রাজি নন।

গত মাসের ১৪ এপ্রিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল হাটহাজারী মাদ্রাসায় যান হেফাজতের প্রয়াত শীর্ষ নেতা আল্লামা শফীর কবর জিয়ারতের জন্য। সেখানে হেফাজতের বর্তমান শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হেফাজত নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মামলায় জামিনের বিষয়টি কোর্টের এখতিয়ার। হেফাজতের কারাবন্দি নেতাদের জামিনে মুক্তির বিষয়টি বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। আমরা পর্যায়ক্রমে সুপারিশ করছি। আদালত সেগুলো বিবেচনা করছে। অনেকগুলোই (জামিন) হয়ে গেছে। যেগুলো বাকি আছে, সেগুলোরও প্রক্রিয়া চলছে। আশা করি সেগুলোও হয়ে যাবে।’ হেফাজতের সঙ্গে বর্তমানে সরকারের সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তখন বলেছিলেন, ‘সরকার কারও সঙ্গেই বৈরী সম্পর্ক রাখতে চায় না।’

সূত্র বলছে, সরকারের সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের বর্তমান সুসম্পর্কের অংশ হিসেবে সংগঠনটির বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতেও পুলিশ সদর দফতর থেকে পুলিশের সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে পুলিশ সদর দফতরের কোনও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিষয়টি স্বীকার করেননি। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কোনও কোনও কর্মকর্তা হেফাজতে ইসলামের মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ফৌজদারি আইনের কোনও মামলা পুলিশের নিষ্পত্তি করার কোনও সুযোগ নেই। পুলিশের কাজ হচ্ছে তদন্ত শেষে মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) কিংবা ফাইনাল রিপোর্ট (চূড়ান্ত প্রতিবেদন) আদালতে দেওয়া। মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তির বিষয়টি আদালতের এখতিয়ার।’

২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীজুড়ে ব্যাপক সহিংসতা হয়। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ, বাগেরহাট, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ সাত জেলায় হেফাজতের কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এসব ঘটনায় রাজধানীতে ৫৩টি মামলা দায়ের করা হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন বলেন, ৫৩টি মামলার মধ্যে ৪টি মামলার তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। বাকি ৪৯টি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। এর বেশি কিছু বলতে তিনি রাজি হননি।

২০২১ সালের ২৬ মার্চ রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ এলাকায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে আগমনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক বিক্ষোভ করে হেফাজতে ইসলাম। বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় হেফাজতের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। যার রেশ ছড়িয়ে পড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রামের হাটহাজারী, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, কিশোরগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। এসব ঘটনায় সারা দেশে আরও ১৫৪টি মামলা দায়ের হয়। সব মিলিয়ে হেফাজতের ইসলামের সংশ্লিষ্টতায় সহিংসতার ঘটনায় ২০৩টি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে বলে পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে।

বিভিন্ন সময়ে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ প্রশাসনের সঙ্গে দেনদরবার চালিয়ে যান হেফাজত নেতারা। তার অংশ হিসেবে হেফাজতের অনেক নেতাই এখন জামিনে মুক্ত। তবে এখনও ১১ নেতা কারাগারে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মীর মুহাম্মদ ইদরিস। তিনি জানান, এখনও কারাগারে থাকা নেতাদের মধ্যে আছেন মাওলানা মামুনুল হক, মুফতি সাখাওয়াত হুসাইন রাজী, মুফতি মুনির হোসেন কাসেমী, মুফতি হারুন ইজহার, মুফতি নুর হুসাইন নুরানী, মুফতি মাহমুদুল হাসান গুনবী, আবদুল মান্নান ও দিদারুল আলম।

মাওলানা ইদরিস আরও বলেন, তারা এবার কোনও কর্মসূচি গ্রহণ করেননি। ১৩ দফা দাবি নিয়ে অবস্থা বুঝে হেফাজত বিভিন্ন সময় কর্মসূচি দিয়েছে। ২০১৩ সালের ৫ মে’র আগে ব্লগাররা যেভাবে দেশে আল্লাহ ও তার রাসুলকে (সা.) কটাক্ষ করে মাঠে নেমে রাস্তা অবরোধ করেছিল, তখন আল্লামা আহমদ শফীর নেতৃত্বে আমরাও মাঠে নেমেছিলাম। বর্তমানে তো তারা প্রকাশ্যে মাঠে নাই। সেজন্য আমরাও প্রকাশ্যে মাঠে নাই। প্রয়োজনে মাঠে নামবো।

তিনি বলেন, গত ‘শুক্রবার (৫ মে) আমাদের জন্য একটা স্মরণীয় দিন। আমাদের জন্য এ দিনটি কান্না ও দুঃখজনক একটা দিন। যেহেতু কোনও দিবসভিত্তিক দুঃখ প্রকাশ ইসলামে নেই, সেজন্য আমরা কোনও কর্মসূচি দেইনি। তবে আমরা আমাদের শহীদ নেতাকর্মী ও বন্দি নেতাকর্মীদের জন্য দোয়া করতেছি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published.