নির্বাচনের সময় প্রশাসন থাকবে ইসির অধীনে—আইজিপি

প্রশান্তি ডেক্স ॥ নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী, জাতীয় নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে বলে জানিয়েছেন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। আসন্ন ৫ সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

নির্বাচনে স্থানীয় প্রার্থীদের মাধ্যমে পুলিশ প্রভাবিত হওয়ার বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পুলিশ প্রধান। গত বৃহস্পতিবার (১৮ মে) গাজীপুর, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে ইসি। আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশ প্রধান, বিজিবি, র‍্যাব, ডিজিএফআই, এনএসআইসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

বৈঠক শেষে আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। জাতীয় নির্বাচন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘প্রসঙ্গক্রমে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়টি এসেছে। জাতীয় নির্বাচনের সময় আমরা নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকবো। নির্বাচন কমিশন যে নির্দেশনা দেবে, তার আলোকে আমরা দায়িত্ব পালন করবো।’

তিনি জানান, বৈঠকে তফসিল ঘোষিত ৫টি সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন আমাদের অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দিয়েছে। তারা সব সংস্থার কাছ থেকে তথ্য নিয়েছে। আমাদের সহযোগিতা কামনা করেছে। আমরা সহযোগিতা প্রদান ও নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী দায়িত্ব পালনের বিষয়ে আশ্বস্ব করেছি।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার প্রশ্নে আইজিপি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের পরিপত্র অনুযায়ী, অস্ত্র উদ্ধার, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য যেসব কার্যক্রম গ্রহণ প্রয়োজন, তা গ্রহণ করবো। এক্ষেত্রে রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে আমাদের স্থানীয় ইউনিট সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে কাজ করছে।’

কোনও কোনও সময় পুলিশ স্থানীয় প্রার্থীদের দ্বারা পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে থাকে সিইসির এমন বক্তব্য অস্বীকার করে পুলিশ প্রধান বলেন, ‘আমি সেটা মনে করি না। আইন অনুযায়ী আমাদের যে দায়িত্ব, আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ নির্বাচনের সে দায়িত্ব পালন করছি। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যে দায়িত্ব পালন করা দরকার, বাংলাদেশে পুলিশের প্রতিটি সদস্য তা যথাযথভাবে পালন করছে।’

এর আগে গত সোমবার জাতীয় পার্টির সঙ্গে বৈঠক শেষে সিইসি বলেছিলেন, স্থানীয়ভাবে যে নির্বাচনগুলো হয়, সেখানে কিন্তু পুলিশকে পক্ষাশ্রিত করার জন্য প্রার্থীরাই চেষ্টা করে থাকেন। সেখানে কীভাবে পুলিশকে নিউট্র্রালাইজড করা যায়, সে জন্য জাতীয় পার্টি আমাদের সহায়তা চেয়েছেন। আমরা বলেছি, আমরা চেষ্টা করবো এবং সরকারের সদিচ্ছার ওপর আমরা বারবার জোর দেবো। সেটা সরকারকেও করতে হবে, আমরা জিনিসটা ভেবেচিন্তে পরে দেখবো।

পুলিশপ্রধান বলেন, ‘ইসির সঙ্গে বৈঠকে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা এখানে ছিলেন। তাদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। সিটি নির্বাচনে সেই ধরনের কোনও চ্যালেঞ্জের কথা বলেননি। আমরা আশা করছি একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভোটের দিনে শঙ্কা আমরা দেখছি না। তবে যেকোনও ধরনের উদ্ভূত আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো। আমরা সব ক্ষেত্রেই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, জঙ্গিসহ সব বিষয় বিবেচনায় নেই এবং সেই অনুযায়ী নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করছি।’

এদিকে ইসি সচিব জাহাংগীর আলম বলেন, ‘আসন্ন ৫টি সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনের বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও সচিবরা উপস্থিত হয়েছিলেন। জননিরাপত্তা বিভাগের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করেছে। আজকের সভায় নির্বাচনপূর্ব, নির্বাচনকালীন ও নির্বাচন-পরবর্তী আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কার্যক্রম কীভাবে সমন্বয় হবে, সেই বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তারা যেসব পরামর্শ দিয়েছে, কমিশন সেই বিষয়ে বসে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেবে।’

তিনি বলেন, ‘ইসির পক্ষ থেকে সুষ্ঠু নির্বাচনে সবার সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের আহ্বান জানানো হয়েছে। উপস্থিত সবাই সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। যে যার অবস্থান থেকে সুষ্ঠু নির্বাচনে সর্বাত্মক পদক্ষেপ অব্যাহত রাখবে।’

সচিব বলেন, ‘মাঠ প্রশাসন থেকে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে, এই নির্বাচনকে ঘিরে বড় ধরনের কোনও নাশকতা বা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির কোনও সম্ভাবনা এখন পর্যন্ত নেই।’

Leave a Reply

Your email address will not be published.