প্রশান্তি আন্তর্জাতিক ডেক্স ॥ যুক্তরাজ্যে স্কিলড ওয়ার্কার ভিসা ব্যবহার করে মানবপাচারের মতো ব্যবসার অভিযোগ উঠেছে। দক্ষকর্মী আনার ভিসা ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে ভুয়া পরিবারের সদস্য বা স্পাউস সাজিয়ে মানবপাচারের এমন ব্যবসা চলছে বলে স্কাই নিউজের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। তবে এ অনুসন্ধানে বাংলাদেশ থেকে মানবপাচার বা কোনও বাংলাদেশির সম্পৃক্ততা এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রগুলো নিয়োগকারী সংস্থা খুলে বিপুল অর্থের বিনিময়ে যুক্তরাজ্যে ভিসা ও চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে সাধারণ মানুষকে ব্র্রিটেনে আসায় প্রলুব্ধ করছে। পরে চুক্তিমতো বিমানবন্দরে স্বামী, স্ত্রী ও সন্তান সাজিয়ে তাদের একই পরিবারের সদস্য বলে যুক্তরাজ্যে বিমানবন্দরে ব্রিটিশ ইমিগ্র্রেশনের কাছে দাবি করে থাকে। এমন প্রতারণা চলছে বলে স্কাইনিউজের প্রতিবেদক লিসা হল্যান্ডের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
দক্ষকর্মী বলে যাদের ব্র্রিটেনে আনা হচ্ছে, তাদের একটি বড় অংশই স্কিলড ওয়ার্কার ভিসার জন্য অযোগ্য। স্কাই নিউজের ভিডিও প্রতিবেদনে জানা গেছে, একজন নারী দাবি করেছেন তিনি কেয়ার ওয়ার্কার হিসেবে ব্রিটেনে কাজের জন্য দক্ষকর্মী ভিসা পেতে শ্রীলঙ্কায় ৬৫ হাজার পাউন্ড কথিত নিয়োগকারী চক্রের হাতে তুলে দেন।
অন্য একজন নারীর ক্ষেত্রে দেখা গেছে, তিনি কাজের ভিষায় লন্ডনে আসার সময় তার স্বামী এবং সন্তানের পরিচয় দিয়ে আরও তিনজনকে নিয়ে এসেছিলেন।
পরে ওই নারীকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে স্কাই নিউজ ওই ভয়া পরিবারের সন্ধান পায়। তারা ওয়েস্ট মিডল্যান্ডসের স্টাফোর্ডশায়ারে বসবাসকারী ৪৮ বছর বয়সী শ্রীলঙ্কার ধান চাষী রাথাকে খুঁজে পেয়েছে। রাথা দাবি করেছেন, তিনি এজেন্টকে পঞ্চাশ হাজার পাউন্ড দেন তাকে যুক্তরাজ্যে নিয়ে যেতে। একটি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এবং পরবর্তীতে স্থানীয় বসবাসের জন্য আবেদনের সুযোগ করে দেওয়া।
রাথার ছেলে পরিচয়ে হিন্থুজান নামের একজন আত্বীয়দের সঙ্গে লিভারপুলে থাকেন। হিন্থুজানের পরিবার তাকে যুক্তরাজ্যে আসার ব্যবস্থা করেছিল। রাথা ও হিন্থুজান দু’জনই যুক্তরাজ্যে আশ্রয়ের জন্য ইতোমধ্যে আবেদন করেছেন।
যুক্তরাজ্যের ভিসা ব্যবস্থার অপব্যবহার:
ব্র্রেক্সিটের পরবর্তী ব্যাপক কর্মী ঘাটতি মোকাবিলায় বাইরে থেকে দক্ষ কর্মী আনার পথ খুলে দেয় দেশটির সরকার। দক্ষকর্মী ভিসার উদ্দেশ্য ছিল বিভিন্ন সেক্টরে শ্রম ঘাটতি জরুরি ভিত্তিতে পূরণ করার জন্য নির্দিষ্ট পর্যায়ের দক্ষতা সম্পন্ন কর্মীদের আকৃষ্ট করা। আর এ ভিসার সুযোগ কাজে লাগিয়ে গড়ে উঠে কিছু সংঘবদ্ধ চক্র। নিয়োগকারী দালালরা স্থায়ীী বসবাসের পথসহ দক্ষকর্মী ভিসার প্র্রতিশ্রুতি দেয়। একবার প্রলুব্ধ হয়ে গেলে, বিভিন্ন উপায়ে চাপ দিয়ে দফায় দফায় অর্থ হাতিয়ে নেয়।
এসব ঘটনা জানতে পেরে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, আমরা ঘটনাগুলো তদন্ত করছি। আমাদের অভিবাসন ব্যবস্থার অপব্যবহার করে মিথ্যা নথি ব্যবহার, ব্যক্তিগত পরিস্থিতিকে ভুলভাবে উপস্থাপন করেছে বা অন্য কোনও উপায়ে প্রতারণা করেছে, তাদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হবে।
লন্ডনের লেক্সপার্ট সলিসিটর্সের ব্যারিস্টার শুভাগত দে এ প্রসঙ্গে গত বৃহস্পতিবার (১ জুন) বলেন, স্কিলড ওয়ার্কার, ওয়ার্ক পারমিট বা কেয়ার ভিসার নামে নিয়োগকারীর কোনও কর্মীর কাছ থেকে টাকা নেওয়া সম্পূর্ণ অবৈধ। কথিত যেসব নিয়োগকারী ভিসা বিক্রি করে তাদের উদ্দেশ্য স্পষ্টভাবেই প্রতারণা। এদের ব্যাপারে সতর্ক থাকার কোনও বিকল্প নেই।