বাআ ॥ সম্প্রতি বাংলাদেশের জন্য আমেরিকা যে ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে, তারপর থেকেই কপালে চিন্তার ভাঁজ জমেছে বিএনপির। কারণ বুঝতে হলে আমেরিকার ভিসা নীতিতে কী আছে সেটি খেয়াল করুন। তারা বলেছে: যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে করা যে কোনো বাংলাদেশি ব্যক্তির জন্য ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপে সক্ষম হবে। এরপর বলেছে: গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কাজের মধ্যে রয়েছে- ভোট কারচুপি , ভোটারদের ভয় দেখানো , সহিংসতার মাধ্যমে জনগণকে সংগঠিত হবার স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার প্রয়োগ করতে বাধা দেয়া, এবং বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ বা গণমাধ্যমকে তাদের মতামত প্রচার করা থেকে বিরত রাখা।
কিন্তু বিএনপি নড়েচড়ে বসেছে এই পয়েন্টগুলোতে এসেই। কারণ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিএনপি সবসময় প্রতিটা নির্বাচনের সময়ই ঠিক এই অপকর্মগুলো করে থাকে। এখন আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এতো কম সময়ে তারা তাদের পুরনো সহিংসতার অভ্যাস কী ত্যাগ করতে পারবে!
ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, সহিংসতার মাধ্যমে সংগঠিত হবার স্বাধীনতা খর্ব করা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বাধা দেওয়া প্রভৃতি কর্মকান্ড ঐতিহাসিকভাবে বিএনপির সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। বিশেষ করে ২০০১ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তারা ছয়মাস আগে থেকেই যেভাবে আওয়ামী লীগ নেতাদের ওপর হামলা, অঙ্গহানি ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে; তা যে বর্বরতার সর্বোচ্চ সীমা অতিক্রম করে গেছে সেটা বুঝতে একবার ওই সময়ের গণমাধ্যমের সংবাদগুলোয় চোখ রাখলেই স্পষ্ট হয়ে যায়।
সেই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগেও তারা একই প্রক্রিয়ায় নাশকতা চালিয়েছে। ২০১৩ সালজুড়ে পেট্রোল বোমা হামলার মাধ্যমে শত শত জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারা, সহস্রাধিক মানুষকে পঙ্গু করে তাদের পরিবারকে পথে বসানো, হাজার হাজার কোটি টাকার অর্থনৈতিক ক্ষতিসাধন করা; এমনকি ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগেও আওয়ামী লীগ নেতাদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালানোর জন্য বর্বর হামলার ঘটনা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরা প্রত্যক্ষ করেছেন।
১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠনের পর, তাদের তীব্র সন্ত্রাসের কারণে ১৯৯৪ সালের ৩০ জানুয়ারি রাজধানী ঢাকার মেয়র নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীকে ভোট দিয়ে জয়ী করে। এরপর ৩১ জানুয়ারি লালবাগের নবাবগঞ্জে আওয়ামী লীগের বিজয় মিছিলে বিএনপির পরাজিত প্রার্থী মির্জা আব্বাসের ক্যাডার বাহিনীর গুলি ও বোমা হামলায় নিহত হন ৭ জন এবং আহত হন শতাধিক। এদের মধ্যে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসা নিয়ে প্রাণে বাঁচলেও স্থায়ী পংগুত্ব বরণ করেন ২৩ জন। হামলার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলের সিনিয়র বিএনপি নেতা এবং খালেদা জিয়া সরকারের খাদ্যমন্ত্রী লে. জে. (অব.) মীর শওকত আলী এবং বিএনপি নেতা শাহীন। ভোটারদের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে এরপর চকবাজারের দোকানপাট ভাংচুর এবং সাধারণ মানুষদের বাড়ির জানালা দিয়ে এসিড ছুড়ে বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বিএনপির চিহ্নিত ক্যাডাররা।
এরপর ১৯৯৪ সালের ২০ মার্চ মাগুরার উপনির্বাচনেও পরাজয়ের মুখোমুখি হয় বিএনপি। ভোট গ্রহণের শুরু থেকে কারচুপি করলেও আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে জনতার গণভোট পড়ায় স্তম্ভিত হয়ে যায় খালেদা জিয়ার সরকার। ফলে ভোট গণনার একপর্যায়ে নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরে রাষ্ট্রীয় মদতে ব্যালট-বাক্স ছিনতাই করে তারা। আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নিশ্চিত বিজয়ের ফলাফলকে পাল্টে দিয়ে বিএনপির প্রার্থী কাজী সলিমুল হককে কারচুপির মাধ্যমে জিতিয়ে আনেন স্বয়ং খালেদা জিয়া। এভাবেই ভোট কারচুপি ও সহিংসতার মাধ্যমে গণতন্ত্রকে প্রকাশ্যে টুঁটি চেপে হত্যা করে বিএনপি-জামায়াত জোট। পরবর্তীতে সরকারে থাকা কিংবা বিরোধী দলে থাকার সময়েও জাতীয় নির্বাচন এলেই তার কিছুদিন আগে থেকে ত্রাসের মাধ্যমে জনগণকে ভয় দেখানো, রাজনৈতিক দলের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বাধা, ভোট কারচুপির জন্য সন্ত্রাস করাটা নিয়মিত কার্যক্রমে পরিণত হয় বিএনপির।
২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে ভোটদানে বাধা, সহিংসতা চালিয়ে জনমনে ভীতি সৃষ্টি করে বিএনপি: ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রায় এক বছর আগে থেকেই নাশকতা ও সহিংসতা চালিয়ে জনমনে ত্রাস ছড়াতে শুরু করে বিএনপি-জামায়াত জোট। সন্ত্রাসী কার্যক্রমের মাধ্যমে বছরজুড়ে ১৫ জন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে বিএনপি-জামায়াত। ২০১৩ সালে জামায়াত-শিবিরের রাজনৈতিক সহিংসতার ৪১৯টি প্রধান ঘটনায় ৪৯২ জন মানুষ প্রাণ হারান এবং ২২০০ জন আহত হন। তাদের বর্বর সন্ত্রাসের কারণে ২০১৩ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত রাষ্ট্রের ক্ষতি হয়েছে কমপক্ষে ৪৯ হাজার কোটি টাকা। আগুন দিয়ে সরকারি অফিস ভষ্মীভূত করা, সামাজিক সন্ত্রাসের মাধ্যমে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অকার্যকর করা এবং পেট্রোল বোমা ছুড়ে শতাধিক মানুষ হত্যা ও সহস্রাধিক ব্যক্তিকে পঙ্গু করে তারা। এমনকি স্কুল কলেজে বোমা মেরে ও আগুন দিয়ে কয়েকশ স্কুল পুড়িয়ে শিক্ষাঙ্গনকে অচল করে দেয় এই দুর্বৃত্তরা। উপড়ে ফেলে রেললাইন, কেটে দেয় মহাসড়ক, তাদের আগুনে পুড়ে যায় কয়েক হাজার বাস-ট্রাক এবং রেলের বগি ও রেলওয়ে স্টেশন।
২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারি প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। বেসরকারি সংস্থা সিপিডি-এর অর্থনৈতিক পর্যালোচনায় বলা হয়- রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতির জন্য ছয় মাসে ৪৯ হাজার ১৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে দেশে। অর্থনীতিবিদরা জানান, বিএনপি-জামায়াতের এই নৃশংস নাশকতার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কৃষি, কৃষিজাত খাত ও পরিবহন খাতের ক্ষুদ্র উৎপাদকেরা, যার সঙ্গে দেশের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী যুক্ত। এরপরেই আছে রফতানিমুখী শিল্প, যার সঙ্গে অন্তত এক কোটি মানুষের জীবিকার সম্পর্ক। ফলে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াত জোটের এই বর্বরতার কারণে দেশের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়ে।
নাশকতার কারণে পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে পথে বসে পড়ে স্বল্প আয়ের মানুষরা। ভবিষ্যতের স্বপ্ন নিয়ে যে মেধাবী শিক্ষার্থী বেড়ে উঠছিল, তার অকাল মৃত্যু এবং পংগুত্বের কারণে স্বপ্ন লুট হয়ে যায় অনেক নিম্নমধ্যবিক্ত পরিবারের। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সরাসরি নির্দেশে রাজনীতির নামে এভাবেই দেশকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা।
পরবর্তীতে, ২০১৫ সালের ২১ জানুয়ারি প্রথম আলো পত্রিকার অনুসন্ধানী সংবাদে এসব নাশকতার পৃষ্ঠপোষকদের ব্যাপারে স্পষ্ট তথ্য উঠে আসে। জানা যায়, রাজধানীজুড়ে নাশকতার জন্য ৪৫ থেকে ৫০ জনের একটি দলকে শনাক্ত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এই নাশকতাকারীদের সমন্বয় করতো বিএনপি দলীয় ১২ জন সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর। বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস, আমানুল্লাহ আমান, সালাউদ্দীন আহমেদ, সাদেক হোসেন খোকা, কফিলউদ্দীন ও এস এ খালেকের ছেলে সাজুসহ কয়েকজন নাশকতার জন্য অর্থ দেয়।
২০১৩ সালের ২ জুন দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকার সংবাদে জানা যায়, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি ড. সুমনকে হাসপাতালে প্রবেশের পথে অতর্কিত কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে চিহ্নিত শিবির ক্যাডাররা। ১২ জুলাই জনকণ্ঠের খবরে বলা হয়, নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার গোলনা ইউনিয়নের বঙ্গবন্ধু হাটে ভয়াবহ তান্ডব চালায় জামায়াত-শিবির। রাতে অতর্কিত হামলায় পেট্রোল ঢেলে ১৫টি দোকান জ্বালিয়ে দেয় তারা। জামায়াত-বিএনপির এই পৈশাচিক অগ্নিসন্ত্রাসে দোকানে থাকা ৯ জন ব্যক্তি গুরুতর অগ্নিদগ্ধ হন এবং আহত হন বাজারের আরো ২১ জন সাধারণ মানুষ। পুলিশ জানায়, ১১ এপ্রিল রাতে সড়কে অগ্নিসন্ত্রাস ও ভয়াবহ ভাংচুর চালানো হয় কুখ্যাত শিবির নেতা ফেরদৌস আহমেদের নেতৃত্বে। জামায়াত-শিবিরের চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ওই এলাকার আওয়ামী লীগ সমর্থকদের বাড়িতে হামলা করে এবং হাটের দোকানগুলোতে পেট্রোল বোমা হামলা চালায়।
২০১৩-১৪ সালে পুলিশের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ভোট কারচুপির নীলনকশা করে বিএনপি: বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়ে সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে দেশবাসীকে জিম্মি করে ২০১৪ সালের নির্বাচনে ক্ষমতা দখলের নীলনকশা করেছিল বিএনপি-জামায়াত চক্র। সেজন্য ভোটের আগের বছর তথা ২০১৩ সালজুড়ে সন্ত্রাসী হামলার মাধ্যমে ৫ জন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে বিএনপি-জামায়াত। ভোটের তিনমাস আগে থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপর চোরাগোপ্তা হামলা চালাতে শুরু করে তারা, যাতে জনগণ ভয় পেয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে ভোটকেন্দ্রে না যায়।
২০১৩ সালের ১৮ জুলাই জনকণ্ঠের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিএনপি-জামায়াতের চোরাগোপ্তা মিছিল থেকে সশস্ত্র হামলায় রাজধানীর শাহজাদপুরে গুরুতর আহত হন পাঁচ পুলিশ। পুরান ঢাকার বংশালে ওসির গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে ও ককটেল নিক্ষেপ করে বিএনপি-জামায়াত ক্যাডাররা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় জামায়াতের উপর্যপুরি পেট্রোলবোমা হামলায় মৃত্যু ঘটে পুলিশের জামাল নামের একজন কনস্টেবলের। দুর্বৃত্তদের হামলায় গুরুতর আহত হয় সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানা পুলিশের এসআইসহ তিন পুলিশ সদস্য। বগুড়ায় পুলিশের ওপর পিকেটিং করে ছাত্রদল-শিবিরের নেতাকর্মীরা। এসময় তাদের উপর্যুপুরি ককটেলের আঘাতে পুলিশের পিএসআই জুলহাস ও কনস্টেবল রমজান গুরুতর আহত হন।
২০১৩ সালের ১৬ জুলাইয়ের পত্রিকার সংবাদে জানা যায়, হরতালের নামে ঢাকার বাংলামোটর পুলিশ বক্সে মোটরসাইকেল নিয়ে অতর্কিত বোমা হামলা এবং মহাখালীর ওয়্যারলেস এলাকায় পুলিশের একটি পিকআপ-ভ্যানে পেট্রোল বোমা মেরে অগ্নিসংযোগ করে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা। ১৫ জুলাই জনকন্ঠের সংবাদে থেকে আরো জানা যায়, রাজধানীর পল্টনের সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের এএসআই রকিবুলকে থামিয়ে বর্বরভাবে মাটিতে ফেলে পেটায় জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। সেখানে অতর্কিত সশস্ত্র মিছিল বের করে আশেপাশের বেশ কয়েকটি মাইক্রোবাস ও কার পুড়িয়ে দেয় তারা। এছাড়াও পল্টন, বিজয়নগর এলাকায় পুলিশের সহকারী কমিশনারের গাড়ি ও পুলিশ কর্মকর্তাদের ২০-২৫টি মোটরসাইকেলে পেট্রোল বোমা মেরে অগ্নিসংযোগ এবং ভাংচুর চালায় এই সন্ত্রাসীরা।
সেই ধারাবাহিকতায় জঙ্গি হামলা চালিয়ে ২০১৪ সালেও দেশজুড়ে থানালুট এবং পুলিশ ফাঁড়িতে রাতের অন্ধকারে নিরস্ত্র ঘুমন্ত পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা ও অগ্নিসংযোগ, দিনের বেলায় টহল পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর, এমনকি পেট্রোল বোমা ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে অতর্কিত হামলা চালিয়ে প্রায় বিশ জন পুলিশ সদস্যকে হত্যা এবং শতাধিক পুলিশ সদস্যকে আহত করে এই বিএনপি-জামায়াত চক্র।
২০০১ সালের নির্বাচনের আগে দেশজুড়ে গুলি ও বোমা হামলা চালিয়ে ভোটারদের ভয় দেখায় বিএনপি: মানুষ হত্যা, ধর্ষণ, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও লুটপাটের কারণে জনগণের ভোটের ওপর আস্থা নেই বিএনপি-জামায়াত জোটের। মানুষ তাদের ভোট দেবে এই বিশ্বাস নেই নিজেদের ওপর, একারণে নির্বাচন এলেই গুলি-বোমা-অগ্নিসন্ত্রাসের মাধ্যমে আতঙ্ক সৃষ্টি করে তারা। প্রতিটি নির্বাচনের আগে তাই নাশকতার মাধ্যমে মানুষকে ভোটদানে বিরত রাখা, ছাপ্পা ভোট মারা এবং ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে ক্ষমতা দখলের নীলনকশা করে তারা। ২০০১ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের আগেও দেশজুড়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রতি গুলি বর্ষণ এবং আওয়ামী লীগ অফিস ভাংচুর করে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা।
২০০১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর জনকণ্ঠ পত্রিকার সংবাদ থেকে জানা যায়- সাধারণ মানুষ যাতে নাশকতার ভয়ে ভোটকেন্দ্রে না যায়, সেজন্য নির্বাচনি আসনভিত্তিক বর্বর সন্ত্রাস চালানো হয় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সরাসরি তত্ত্বাবধানে। ৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় নির্বাচনি প্রচারণা চালানোর পর আওয়ামী লীগ নেতা ও সদ্য সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের গাড়ি লক্ষ্য করে ভোলায় গুলি চালায় বিএনপির সন্ত্রাসীরা। এরপর সেখানে আওয়ামী লীগের প্রধান নির্বাচন সমন্বয়কারী আসাদুজ্জামানের বাড়িতে বোমা হামলা চালায় বিএনপির ক্যাডাররা, পুড়িয়ে দেয় জিপ গাড়ি। এর আগে জেলার লালমোহনে আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িতেও হামলা চালায় তারা। বোরহানউদ্দীনে আওয়ামী লীগের ৬টি অফিস ভেঙ্গে দেয় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা।
এছাড়াও একই দিন মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের কলমা আওয়ামী লীগ অফিস গুড়িয়ে দেয় বিএনপির দুর্বৃত্তরা। এমনকি বিকালে আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভাতেও হামলা চালায় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা। বরিশালের আগৈলঝালার সুজনকাঠি গ্রামে আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িতে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট এবং মসজিদে অগ্নিসংযোগ করে বিএনপির ক্যাডাররা।
২০০১ সালের ৮ সেপ্টেম্বরের দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকা থেকে জানা যায়, অক্টোবরের জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পুরো সেপ্টেম্বর মাসজুড়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর নিধনযজ্ঞ চালিয়েছে বিএনপি। ৭ সেপ্টেম্বর রাজধানীর সূত্রাপুর এলাকায় আওয়ামী লীগের ১০টি নির্বাচনি অফিস ভেঙ্গে দেয় বিএপির সন্ত্রাসীরা। কয়েকটি অফিস পুড়িয়ে দেওয়া হয় আগুন দিয়ে। স্থানীয়রা জানান, বিএনপির কর্মীদের বর্বর হামলায় কমপক্ষে ২০ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী গুরুতর আহত হন।
৭ সেপ্টেম্বর রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলায় আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপরেও হামলা চালায় বিএনপির ক্যাডাররা। উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ফরিদুল হাসান ওদুদকে বিএনপির সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে আহত করে। এরপর দুই দিন ধরে পুরো জেলাজুড়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে হামলা, লুটপাট ও নির্যাতন চালাতে থাকে তারা।
জাতীয় নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসে, বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাবাদী কর্মকান্ড ততই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ২০১৪ সালে পেট্রোল বোমা মেরে তারা যেমন হাজার হাজার পরিবারকে পথে বসিয়েছে, তেমনি ২০০১ সালের নির্বাচনের আগেও জেলায় জেলায় সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। জনমনে ভীতি সৃষ্টির জন্য প্রতিটি এলাকায় সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের মহড়া চালায় তারা। ২০০১ সালের ১৩ এবং ১৪ সেপ্টেম্বরের দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকা থেকে এসব সংবাদের তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। এমনকি অক্টোবরের নির্বাচনের আগে আগে দেশব্যাপী কমপক্ষে পাঁচ হাজার প্রগতিশীল নেতাকর্মীকে গ্রেফতারের নীল নকশাও করে তারা। যাতে বিভিন্ন মামলায় দন্ডপ্রাপ্ত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ভালো প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে।
এমনকি দেশের জেলাশহরগুলোতে বিএনপির প্রার্থীরা ভাড়া করা সন্ত্রাসীদের দিয়ে সশস্ত্র শোডাউন করিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। ভোলা-২ আসনের দৌলতখান ও বোরহানউদ্দীন উপজেলায় কমপক্ষে ১০০ বহিরাগত সন্ত্রাসী নামায় তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু গিয়াসউদ্দীন আল মামুনের ভাই হাফিজ ইব্রাহিম। যশোরের বাবু নামের সুপরিচিত সন্ত্রাসী বাহিনীর এই লোকেরা শটগান, পিস্তল, রিভলবার নিয়ে পুলিশ ও বিডিআর-এর সামনেই ভোলার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর ব্যাপক তান্ডব চালায়।
২০০১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকার সংবাদ থেকে আরো জানা যায়, ১ অক্টোবর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সেবছর। সেই নির্বাচনের দুই সপ্তাহ আগে প্রকাশ্য জনসভা থেকে নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানকে মেরে ফেলার ঘোষণা দেয় জামায়াতের তৎকালীন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবু তাহের। সে বলে যে, ১ অক্টোবর নির্বাচনের পর শামীম ওসমানকে হত্যা করে দাফন করা হবে।
একই সসময়, চট্টগ্রামের রাউজানে বেছে বেছে আওয়ামী পরিবারগুলোর ওপর নির্যাতন চালাতে শুরু করে কুখ্যাত রাজাকার এ বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বাহিনী। গহিরার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলামকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দেয় সাকা। দলবল নিয়ে সিরাজ চেয়ারম্যানকে খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়ে আওয়ামী লীগ কর্মী মৃদুল বড়ুয়াকে ডেকে সাকা চৌধুরী বলে- দুদিনের মধ্যে সিরাজ এলাকা না ছাড়লে তাকে হত্যা করা হবে। এমনকি গভীর রাতে শিলক, পদুয়া, কোদালা, রাজানগর এবং পোমরা এলাকায় আওয়ামী সমর্থকদের বাড়িতে গিয়ে হত্যার হুমকি দিয়ে আসে সাকার ক্যাডার বাহিনী।
২০০১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর জনকণ্ঠ পত্রিকার সংবাদ থেকে জানা যায়, ১ অক্টোবর নির্বাচনের দুই সপ্তাহ আগে, ১৪ সেপ্টেম্বর জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে বিএনপির ক্যাডারদের হামলায় নিহত হন স্থানীয় ছাত্রলীগ সভাপতি শাহ কামাল এবং আহত হন আরো ১০ জন। ১৫ সেপ্টেম্বর শরীয়তপুরের জাজিরায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে প্রাণ হারান একজন আওয়ামী লীগ নেতা শাহজাহান ব্যাপারী। বাগেরহাটে আওয়ামী লীগের সমাবেশে হামলা করে ৩০ জনকে হাসপাতালে পাঠায় বিএনপির ক্যাডাররা।
বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জে বিএনপি-জামায়াতের হাতে নিহত আওয়ামী লীগ নেতা শাহজাহানের পরিবারের ওপরের হামলা চালায় জামায়াত-শিবির। মামলা তুলে না নিলে পরিবারের সদস্যদেরও হত্যা করার হুমকি দেয় তারা। ফলে নিহত পরিবারের সদস্যরাও পালিয়ে বেড়াতে বাধ্য হয়। এমনকি নিহতের বাড়িতে গিয়ে তার অশীতিপর বৃদ্ধ বাবাকেও হত্যার চেষ্টা করে জামায়াতের কর্মীরা। যশোর-১ আসনে ঘরে ঘরে গিয়ে নৌকায় ভোট না দেওয়ার জন্য সাধারণ মানুষদের শাসিয়েছে বিএনপির চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা। এই আসনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা বেনাপোলের ভোটব্যাংক দখল নিতে বিশেষভাবে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে মহড়া চালায় মৌলবাদী শক্তি।
২০০১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বরের জনকণ্ঠ পত্রিকা থেকে জানা যায়, বাগেরহাট-১ আসনের নির্বাচনি প্রচারণা চালানোর সময় আওয়ামী লীগ নেতা এবং বঙ্গবন্ধুর প্রয়াত ছোট ভাইয় শেখ নাসেরের ছেলে শেখ হেলালের জনাকীর্ণ জনসভায় ভয়াবহ বোমা হামলা চালায় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা। মঞ্চে ওঠার সময় বোমা বিস্ফোরণ হলে শেখ হেলালকে তৎক্ষণাত ধাক্কা দিয়ে পাশে ফেলে প্রাণ রক্ষা করেন পুলিশ সদস্যরা। এসময় হাত ভেঙে আহত হন তিনি। কিন্তু ঘটনাস্থলে বোমার আঘাতে মারা যান আট জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী। গুরুতর আহত হয়ে পংগুত্ব বরণ করেন শতাধিক ব্যক্তি।
নির্বাচনের আগের একমাসে ভোলায় বিএনপি-জামায়াতের হামলায় আহত হন শতাধিক ও নিহত হন ৬ জন। এর মধ্যে ২৩ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের গাড়িবহরকে তিনদিক থেকে ঘিরে ধরে বোমা হামলা চালায় বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা। এসময় তোফায়েল আহমেদকে প্রাণে বাঁচাতে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে মুখোমুখি বন্দুকযুদ্ধ হয় পুলিশের। বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীদের গুলিতে প্রাণ হারান এক আওয়ামী লীগ কর্মী। এরপর দুর্বত্তরা আওয়ামী লীগের আটটি নির্বাচনি অফিস ভেঙ্গে আগুন ধরিয়ে দেয়।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকা থেকে জানা যায়, নির্বাচনের এক মাস আগে থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দখল নেওয়ার জন্য সেখানে অসাংবিধানিকভাবে পেশীশক্তির প্রভাবে ১৪৪ ধারা জারি করে ছাত্রশিবির। রগ কাটার ভয় দেখিয়ে শিক্ষকদেরও অফিসে যাওয়া বন্ধ করে দেয় এই বর্বর পিশাচরা।
পরবর্তীতে সেই ধারাবাহিকতায়, মেডিক্যাল কলেজগুলোতে সিনিয়র ছাত্রলীগ নেতাদের ফাইনাল পরীক্ষা পর্যন্ত দিতে দেয়নি ছাত্রদল-শিবিরের গুন্ডারা। রংপুর মেডিক্যালে ফাইনাল পরীক্ষা দিতে গেলে ছাত্রলীগ নেতাদের ওপর নির্মম হামলা চালায় শিবির ক্যাডাররা। বরিশাল মেডিক্যাল কলেজেও শিবির-ছাত্রদল ও ড্যাব একযোগে হামলা চালায় অধ্যক্ষের ওপর। বিএনপির জোটসঙ্গী ও ক্যাডার-বাহিনী শিবিরের আক্রমণের কারণে বরিশাল মেডিক্যালের শত শত শিক্ষার্থীও মেডিক্যালের বর্ষ সমাপনী পরীক্ষা দিতে পারেনি।
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে ভোটদান থেকে বিরত রাখার জন্য নির্বাচনের আগে বিএনপির নাশকতা: নির্বাচনে যাতে দেশের প্রায় ১০ শতাংশ সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী ভোট দিতে না যান, সেজন্য আগে থেকেই তাদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন শুরু করে বিএনপি-জামায়াত। ২০০১ সালে জাতীয় নির্বাচনের আগে চাঁদপুর, ফরিদপুর, যশোর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ, নোয়াখালী, পিরোজপুরের বিভিন্ন স্থানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় উগ্রবাদীরা।
২০০১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকার সংবাদ থেকে আরো জানা যায়, দেশের মোট সোয়া এককোটি সংখ্যা লঘু ভোটারের মধ্যে ৭০ লাখের বেশি ভোটারই হিন্দু। সেসময় নির্বাচনী প্রচারণাকালে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও বিএনপি-জাাময়াতের হাতে সংখ্যালঘুদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা সংবাদে এসেছে। এমনকি উগ্রবাদীদের বিজয় নিশ্চিত করার জন্য বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা সংখ্যালঘু ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার নির্দেশও দিয়েছে। যশোর, মনিরামপুর, কেশবপুর, ঝিকরগাছা, বাগডাঙ্গা, নলডাঙ্গা, বেজপাড়াসহ কিছু অঞ্চলে সংখ্যালঘু ভোটারদের হুমকি দিয়ে বলা হয়েছে- ভোটকেন্দ্রে গেলে আর ফেরত আসতে পারবা না কেউ। পরিবারসহ হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে সংখ্যালঘুদের।
পিরোজপুরের সংখ্যালঘুদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালায় দেলোয়ার হোসেন সাঈদী বা দেইল্যা রাজাকারের বাহিনী। চাঁদপুরের কচুয়ার কয়েকটি গ্রামে ও বাজারে সংখ্যালঘুদের ওপর বেপরোয়া হামলা চালায় বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা। এমনকি তাদের বাড়িতে লুটপাটের পর অগ্নিসংযোগ পযর্ন্ত করা হয়। ঐতিহাসিকভাবে স্বাধীনতাবিরোধি বিএনপি-জামায়াত সবসময়ই সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন করে এসেছে এবং ঘৃণা পোষণ করে। একারণে সংখ্যালঘুরাও তাদের প্রতি আস্থাহীনতায় ভোগেন। তাই নির্বাচন এলেই সংখ্যালঘুদের ওপর অমানবিক তান্ডব চালিয়ে তাদের ভোটদান থেকে বিরত রাখার অপচেষ্টা করে বিএনপি-জামায়াত উগ্রবাদী চক্র।
২০০১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর জনকণ্ঠ পত্রিকার সংবাদ থেকে জানা যায়, খুলনার সাংবাদিক শামসুর রহমানের পলাতক খুনি লিটু ও হীরকের ক্যাডার বাহিনী সরাসরি খালেদা জিয়ার সমাবেশে উপস্থিত হয়ে নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নেয়। এমনকি অক্টোবরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের দুই সপ্তাহ আগে যশোরের আটটি উপজেলার লক্ষাধিক হিন্দু ভোটারদের বাড়িতে হামলা চালায় বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা। হুমকি দিয়ে বলা হয়, নৌকায় ভোট দিলে পরিবারসহ হত্যা করা হবে তাদের। এমনকি বাংলাদেশে থাকতে হলে চাঁদা দিতে হবে বলেও তাদের ওপর নির্দেশনা জারি করে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা। সংখ্যালঘু নারীরা যেনো ভোটকেন্দ্রে না যায়, সেজন্য আতঙ্ক সৃষ্টি করতে কোলে থাকা ছোট শিশুদের কেড়ে নিয়ে উঠানে ছুড়ে ফেলার মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটায় তারা। এমনকি মানিকগঞ্জের একাধিক স্থানে হিন্দুদের উপাসান কালীমূর্তি পর্যন্ত ভেঙ্গে ফেলে জামায়াত-শিবিরের এই বর্বরেরা।
চাঁদপুরের কচুয়ায় বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের হুমকি ও হামলার পরিপ্রেক্ষিতে হিন্দু নারীরা শাখা-সিঁদুর খুলে ফেলতে বাধ্য হন। পুরুষদের বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াতে হয়। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর জাতীয় নির্বাচনের মাত্র দুই সপ্তাহ আগে ১৪ ও ১৫ সেপ্টেম্বর কচুয়ার ৮টি গ্রামে নির্মম হামলা চালায় বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা। এসময় তারা কমপক্ষে ৬০টি বাড়িঘর, আওয়ামী লীগের নির্বাচনি অফিস, সাধারণ মানুষের দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন দেয়, ভাংচুর করে এবং নারীদের ওপর নিপীড়ন চালায়। ১৪ সেপ্টেম্বর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কচুয়ায় সমাবেশের পরপরই বিএনপির চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের নেতৃত্বে গ্রামে গ্রামে এই বর্বর হামলা চালানো হয়।
২০০১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর জনকণ্ঠ পত্রিকার সংবাদ থেকে জানা যায়, চট্টগ্রামের রাংগুনিয়ায় রাজাকার সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরীর বাহিনীর তান্ডবে তটস্থ হয়ে পড়ে সাধারণ মানুষ। ৭টি একে ৪৭সহ ২০ জন কুখ্যাত ও দন্ডপ্রাপ্ত সন্ত্রাসী মাঠে নামায় বিএনপি নেতা সাকা। রাঙ্গুনিয়ার ৫০ হাজার সংখ্যালঘু ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দিতে তাদের ওপর ব্যাপক নিপীড়ন চালায় সাকা চৌধুরীর ক্যাডাররা।
২০০১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বরের জনকণ্ঠ পত্রিকা থেকে জানা যায়, ভোলা ও ফেনীতে সংখ্যালঘুদের ওপর বিএনপি-জামায়াতের বর্বর হামলায় গৃহহীন হয়ে পড়ে হাজার হাজার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। ভোলার দৌলতখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের বিএনপি-জামায়াতের হামলা থেকে প্রাণে বাঁচতে সহযোগিতা করায়, বশির নামের এক যুবককে জবাই করে হত্যা করে খালেদা জিয়ার নরপিশাচরা।