যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিটেন্স বৃদ্ধি উৎকণ্ঠা নাকি অর্জন!…?

উইলিয়াম প্রলয় সমদ্দার (বাপ্পি) ॥ হঠাৎ করেই রাজনীতিতে গণতন্ত্র, সুষ্ঠু নির্বাচন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে আলোচনায় বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে। মার্কিন ‘ভিসা নীতি’ ও সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিটেন্সের প্রবাহ বৃদ্ধি, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সব একসাথে গুলিয়ে ফেলছেন অনেকেই। বিষয়টিকে যে যার মতো করে তাদের পক্ষে প্রমাণের চেষ্টা করছেন। যে কোন কারণেই হোক হঠাৎ রেমিটেন্সের বাহুল্যকে রাজনীতির নেতিবাচক অর্জন বিবেচনা করে সরকারকে নতুন চ্যালেঞ্জে ফেলতে চাচ্ছেন বিরোধী দল।

তাদের আগ্রহ ও জিজ্ঞাসা ‘ভিসা নীতি’ ঘোষণার পরেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেন এতো রেমিটেন্স? রেমিটেন্সের প্রবাহ বৃদ্ধির বিপরীতে তাদের এই আচরণ জাতির জন্য দুঃখজনক। ‘কলা ছিললা কেনো? বুজাইয়া দেও’-এর মতো রিজার্ভ কমে গেছে, রেমিটেন্স প্রবাহ নিম্নমুখী বলে এতদিন যারা গলা শুকাচ্ছিল এখন রেমিটেন্স বাড়ল কেন? আওয়ামী লীগ সরকার জবাব চাই? অবনমনেও জবাব চাই, বৃদ্ধিতেও জবাব চাই।

এবার আসুন রেমিটেন্স বৃদ্ধির কারণসমূহ বিশ্লেষণে যাই, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্যাক্স সেশন শুরু হয় ফেব্রুয়ারি-মার্চে। এ বছর চাইল্ড ক্রেডিট-এর আওতায় যাদের ১টি সন্তান রয়েছে তারা প্রায় ৮ থেকে ৯ হাজার ডলার চাইল্ড ক্রেডিট কর্মসূচির আওতায় ডলার হাতে পেয়েছে এপ্রিল-মে মাসে। সুতারাং যাদের ২টি সন্তান তারা প্রায় ১৬-১৮ হাজার ডলারের উপরে পেয়েছে। যার ফলে একটি বিরাট অংকের অর্থ হাতে এসেছে কয়েক লক্ষ আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশীদের। এক্ষেত্রে কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা যেতে পারে- ইনডিপেন্ডেন্ট কন্ট্রাকটর; যেমন ট্যাক্সি বা উবার ড্রাইভার বা ফুড ডেলিভারিতে আমাদের দেশের অনেক প্রবাসীরাই জড়িত, কাজের স্বাধীনতা আছে এবং আয়ও ভালো। এই পেশায় জড়িতদের আয় ২০২০-২১’র পেনডেমিকের কারণে প্রায় শূন্যের কোঠায় চলে গিয়েছিল, কিন্তু ২০২২-২০২৩ সেই অবস্থার উন্নতি হয়েছে ব্যাপক ভাবে। সুতরাং যারা ২০২০-২০২১-এ পেনডেমিকের কারণে দেশে রেমিটেন্স পাঠাতে পারেনি তাদের জন্য অতিরিক্ত টাকা পাঠানোর একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। ফলে রেমিটেন্স বৃদ্ধির এটা একটা কারণ হতে পারে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রর ব্যাংকের সুদের হারে উর্ধ্বগতি; পূর্বে ট্যাক্স সেশন বা ইনসেন্টিভ-এর সময়ে বাঙালি অভিবাসিরা সাধারণত এই এককালীন পাওয়া অর্থ বিনিয়োগ করতো-বাড়ি, প্রোপার্টি ও গাড়ি ইত্যাদি দীর্ঘ মেয়াদী অর্থনৈতিক বিনিয়োগে। সাম্প্রতিক সময়ে আমেরিকা অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ব্যাংক সুদের হার প্রায় ২/৩ গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে, ২০২০-২০২১ এ বাড়ি বা প্রোপার্টি কেনার জন্য নেওয়া ঋণের সুদের হার ছিলো সর্বোচ্চ ৩%, যা আজকে এই মুহূর্তে প্রায় ৭-৮ শতাংশ গিয়ে দাঁড়িয়েছে। সুতরাং নতুন প্রোপার্টি বা বিজনেসে যাদের আগ্রহ ছিলো তারা ‘ধীরে চলো নীতি’ গ্রহণ করেছে। এখানে বলা দরকার, এই ব্যাংক সুদের হার কবে আবার কমবে বা আদৌ কমবে কিনা- তা নিয়ে বিশ্লেষকদের পরিষ্কার কোন ধারণা নাই। তারল্যের সংকট ও হঠাৎ করে বড় বড় ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের সঞ্চয় সেদেশে নিরাপদ মনে করেছে না কেউ কেউ, কোনো কোনো ক্ষেত্রে। সেই বিবেচনায় অতিরিক্ত সঞ্চয়ের অর্থ দেশে পাঠাচ্ছে হয়তো অনেকেই।

২০২৩ সালে ডলারের দাম কপালের উপরে গিয়ে ঠেকেছে, সরকারি বৈধ চ্যানেলে প্রতি ডলারের দাম প্রায় ১০৮টাকা করে পাওয়া যাচ্ছে যা সকল সময়ের রেকর্ড ছাড়িয়েছে। রেমিটেন্সে প্রণোদনা; বৈদেশিক মুদ্রা বৈধভাবে সংগ্রহের আগ্রহ তৈরিতে সরকারের ইনসেন্টিভ নীতিমালা দারুণভাবে উৎসাহ যুগিয়েছে। যার ফলে ডলারের উর্ধ্বমূল্য এবং সেই সাথে ২.৫% ইনসেন্টিভ চাঙ্গা করেছে প্রবাসীদের বৈধ প্রক্রিয়ায় টাকা পাঠানোর প্রক্রিয়ায়।

ডলারের মুদ্রা বাজারের নেতৃত্ব ধরে রাখার বিষয়ে সংশয়, রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের পরে স্যাংশন-এর পরিপ্রেক্ষিতে মুদ্রা বাজারে রাশিয়া ও চায়না নতুন নীতিমালা গ্রহণ করে। আন্তর্জাতিক লেনদেনে ডলারকে বাদ দিয়ে নিজেদের মুদ্রা ‘রুবল ও ইউয়ান’-এ লেনদেনের সিদ্ধান্ত নেয় এই বিশাল দেশ দুটো, পাশাপাশি ভারতও রূপিতে আমদানি রপ্তানি নিয়ে ভাবছে। সেই ক্ষেত্রে এই উদ্দেশ্য যদি সফলতা পায় তবে ডলারের মুদ্রা বাজারের নেতৃত্বে না থাকার কথাও ভাবছে অনেকে, ফলে হঠাৎ করে ডলারের দর পতন হলে প্রবাসীদের সঞ্চিত অর্থে টান পড়বে। এই আশঙ্কায়ও কিছু অতিরিক্ত ডলার আসতে পারে বলেও মনে করছেন অনেকেই।

প্রকৃতপক্ষে বিএনপি কর্তৃক আওয়ামী লীগ সরকারের সকল অর্জনকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করার এই ব্যাধি যে জাতীয় উন্নয়নে ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে তার কোন চেতনা নাই পথভ্রষ্ট জাতীয়তাবাদীদের। একটা বিষয় পরিষ্কার করা প্রয়োজন, জাতীয় রাজনীতিতে অতিমাত্রায় ক্ষমতালোভী উচ্চাশার পথে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ কে? তা নির্ণয়ে আমাদের সীমাবদ্ধতা আসলেই লজ্জার। বিরোধী দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে কোণঠাসা করার অপচেষ্টা- চরম ভুল হিসেবে গণ্য হচ্ছে, রাষ্ট্রকে প্রতিপক্ষ বানানোর ভুল সিদ্ধান্তের ফলে আজ এই অর্জন- ‘মার্কিন স্যাংশন’। যার ফলে রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অর্বাচীন রাজনৈতিক নেতাদের দূরদর্শিতার অভাবে যে ঘটনা ঘটেছে তা সত্যিই দুঃখজনক।

রাষ্ট্রের উন্নয়ন, প্রবৃদ্ধি ও বৈদেশিক অর্থপ্রবাহ এবং রিজার্ভকে সস্তা রাজনীতির রোষানলের শিকার করা হচ্ছে অসচেতনভাবে। তবে এখানে বলা যেতে পারে বিএনপির প্রাইওরিটি কি? দেশের উন্নয়ন না রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়া? হোক না তাতে দেশের ক্ষতি, রাষ্ট্রের ক্ষতি, জনগণের দুর্ভোগ। এগুলোতো তাদের বিবেচনায় নাই, বিবেচনায় নাই দেশের সাধারণ মানুষ। কমে যাক রেমিটেন্স, রিজার্ভ ফুরিয়ে যাক, উন্নয়ন বন্ধ হয়ে যাক, আইন শৃংখলার অবনতি হোক, করোনায় লক্ষ লক্ষ মানুষের লাশ পড়ে থাকুক রাস্তায়- তবুও ক্ষমতায় আসতে হবেই তাদের। যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকা এ্যাম্বাসি কর্তৃক ওয়াশিংটন ডিসির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠিতে উল্লেখিত চরম ভয়ংকর সন্ত্রাসী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর ১৪ বছর আগে নিষিদ্ধ হওয়া ভিসা নীতির আওতায় প্রথম বাংলাদেশী ‘তারেক জিয়া’কে ক্ষমতায় আনতেই হবে, এটাই তাদের আজকের জাতীয়তাবাদ। অথচ আজকের মানুষ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখতে চায়। কোনো অপশক্তির হুংকারে ভীত নয় আওয়ামী লীগ সমর্থিত জনগণ। জনগণের সদিচ্ছায় স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য দেশ-বিদেশি কোনো প্রতিবন্ধকতা সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে না বলে আমরা মনে করি।

সৌজন্যেঃ সারাবাংলা.নেট

Leave a Reply

Your email address will not be published.