কসবার কুটিতে মসজিদ কমিটিকে কেন্দ্রকরে দু’গ্রুপের সংঘর্ষে মুক্তিযোদ্ধাসহ আহত-৩; থানায় মামলা

ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা (ব্রাক্ষণবাড়িয়া) প্রতিনিধি ॥ কসবার কুটিতে মসজিদের  কমিটিকে কেন্দ্র করে  প্রতিপক্ষরা কুপিয়ে এক মুক্তিযোদ্ধাসহ ৩ জনকে মারাত্নক জখম করেছে। মাথায় ও দেহে  গুরুতর জখমী অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে এম্বুলেন্স যোগে বীর মুক্তিযোদ্ধা মহসীন মুলক (৭৩) ও হাবিবুর রহমান (৬৫) কে  ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে  পাঠানো হয়েছে।

সেখানে মহসীন মুলককে আইসিউতে রাখা হয়েছে বলে তার পরিবারের লোকজন জানায়। এ ঘটনায় গতকাল রবিবার সকালে ৪২ জনকে আসামী করে বীর মুক্তিযোদ্ধা মহসীন মুলকের ছোট ভাই মোঃ সোহরাওয়ার্দী বাদী হয়ে কসবা থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

খোজঁ নিয়ে জানা যায়, গত দু’বছর যাবত কসবার কুটি ইউনিয়নের জাজিয়ারা কেন্দ্রিয় মসজিদ ওয়াকফা এস্টেট কমিটির সংগে পাশ্ববর্তী অপর একটি মসজিদ কমিটির নেতৃবৃন্দের বিরোধ চলে আসছিলো। এ নিয়ে ওয়াকফা এস্টেট কমিটির সভাপতি মোঃ সোহরাওয়ার্দি মসজিদের ধান চুরি ও মসজিদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গ্রামের ওবায়দুল হক, আবু তাহের, ইয়াছিন আরাফাত, ফয়েজ আহাম্মদ ও আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে ২০২২ সালে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট অভিযোগ পেশ করেছিলেন । এবং তাদের বিরুদ্ধে কসবা থানায় প্রাণনাশের হুমকি সংক্রান্ত একটি সাধারন ডাইরী করেন তিনি।

স্থানীয়রা জানান, পাশ্ববর্তী আহলে হাদিস মতাদর্শের মসজিদ কমিটির লোকজন দীর্ঘদিন যাবত ওয়াকফা এস্টেট মসজিদ দখল করার জন্য নানাভাবে তৎপর ছিলো। তাদের দলকে শক্ত করার জন্য সমাজের উশৃঙ্খল ও দুস্কৃতিকারীদের তাদের দলে জড়ো করেন। ফলে জাজিয়ারা গ্রামের সাধারন মানুষদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। স্থানীয় কুটি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছাইদুর রহমান স্বপন ও সহকারী কমিশনার (ভ’মি) সনজিব সরকার একাধিকবার দু’পক্ষের মধ্যে সমঝোতা করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।

গত শনিবার (১০ জুন) বিকেলে কসবা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আমিমুল এহসান খান ঘটনাস্থলে গিয়ে দু’পক্ষের সংগে আলোচনা করেন এবং কেন্দ্রিয় ওয়াকফা প্রশাসক কর্তৃক অনুমোদিত কমিটির মাধ্যমে মসজিদ পরিচালনা করার নির্দেশ দিয়ে সহ অবস্থান করার পরামর্শ দেন। উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ঘটনাস্থল থেকে চলে আসেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার চলে আসার পরপরই জাজিয়ারা কেন্দ্রিয় জামে মসজিদ ওয়াকফ এস্টেট কমিটির সমর্থকদের পেছন থেকে প্রতিপক্ষের লোকজন রাম দা, কিরিচসহ দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে উপুর্যপুরি হামলা চালায়। এতে বীর মুক্তিযোদ্ধা মহসিন মুলক (৭৩), হাবিবুর রহমান (৬৫) মাথায় ও মুখে কোপের আঘাতে মারাত্মক জখম করে। হামলায় ছেচা ফুলা জখম প্রাপ্ত হন জাজিয়ারা কেন্দ্রিয় মসজিদ ও ওয়াকফা এস্টেটের সভাপতি মামলার বাদী মোঃ সোহরাওয়ার্দী। খবর পেয়ে কসবা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আমিমুল এহসান খান জানান, তিনি শান্তিপুর্নভাবে দু’পক্ষের মধ্যে সমঝোতা করে চলে আসেন। তিনি চলে আসার পর অনাকাঙ্খিত হামলার ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। তিনি বলেন, বিষয়টি এখন আইনগতভাবে দেখা হবে।

অফিসার ইনচার্জ কসবা থানা মোহাম্মদ মহিউদ্দিন জানান, তিনি খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন। তিনি বলেন এ ব্যাপারে একটি মামলা গ্রহন করা হয়েছে। আসামীদের ছাড় দেয়া হবে না। এ বিষয়ে অভিযুক্ত পাশ্ববর্তী আহলে হাদিস মতাদর্শের নাজমুল হাসানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তার ভাই নিয়ামুল হাসান মারামারি ছুটাতে গিয়ে আহত হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া হাসপতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আমরা তাদের মসজিদে যাইনা, আমরা আহলে হাদিস মসজিদে নামাজ পড়ি। আমি এবং আমার ভাইকে আসামী করে মামলা দেয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.