প্রশান্তি ডেক্স ॥ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক দল গণতন্ত্রী পার্টির দুই গ্রুপের মধ্যে পাল্টা-পাল্টি বহিষ্কারের ঘটনা ঘটেছে। ঢাকা-১৭ আসনে দলীয় প্রার্থীর মনোনয়নকে কেন্দ্র করে গ্রুপ দুটি মুখোমুখি অবস্থান নেওয়ায় এই অস্থিরতায় তৈরি হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
সূত্রমতে, গত মঙ্গলবার (২৭ জুন) গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি ব্যারিস্টার মোহাম্মদ আরশ আলীসহ দুই জন প্রেসিডিয়াম সদস্যকে বহিষ্কার করে দলের সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বাধীন গ্রুপ। এরপর আজ শনিবার (১ জুলাই) দলের সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন ও ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কামরুল আহসান খান পারভেজকে পাল্টা বহিষ্কার করেছে সভাপতি ব্যারিস্টার মোহাম্মদ আরশ আলীর গ্রুপ।
শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর কাকরাইলে গণতন্ত্রী পাটির্র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন ও ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কামরুল আহসান খান পারভেজকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এই সভায় সভাপতিত্ব করেন দলের সভাপতি ব্যারিস্টার মোহাম্মদ আরশ আলী। সভা সূত্র জানায়, শনিবারের সভায় সংগঠনের বেশিরভাগ প্রেসিডিয়াম সদস্য, সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য ও সাধারণ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
পাল্টাপাল্টি বহিষ্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি ব্যারিস্টার আরশ আলী জানান, কোনও আলোচনা ছাড়াই ঢাকা-১৭ আসনে বাবু অশোক ধরকে মনোনয়ন দিয়েছে সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন। এটি গঠনতন্ত্র ও সাংবিধানিক পরিপন্থী। গঠনতন্ত্র ও সাংবিধানিক অনুযায়ী, সবার সঙ্গে আলোচনা করে মোহাম্মদ কামরুল ইসলামকে আমি প্রার্থী মনোনীত করেছি। উভয় প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ হলেও একই প্রতীকে ২ জন প্রার্থী হওয়ায় দুই জনের মনোনয়নপত্রই বাতিল হয়ে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনায় গত ২৭ জুন অনৈতিক, অগণতান্ত্রিক ও অগঠনতান্ত্রিকভাবে একটি মিটিং ডেকে সভাপতি, দুই জন সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্যকে বহিষ্কার করেন সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার বিকালে বৈঠক ডেকে সর্বস্মতিক্রমে ডা. শাহাদাত হোসেন এবং ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কামরুল আহসান খান পারভেজকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে। সেইসঙ্গে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে ভুপেন্দ্র ভৌমিক দোলনকে।’
এ বৈঠকে অংশ নিয়েছেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক ডা. শহিদুল্লাহ সিকদার, নুরুর রহমান সেলিম, আসারণ, অনলাইনে যুক্ত হন জহুরুল ইসলাম, বাবুল দে, সম্পাদকমন্ডলী এবং সদস্যদের মধ্যে বৈঠকে অংশ নেন— আরিফ মিয়া, শহীদুল ইসলাম, গিয়াসউদ্দিন, কাসেম, ফরিদ হোসেন, খায়রুল ইসলাম, মিরাজ জামান, হালিম, কোমল প্রমুখ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা শাহাদাত হোসেন বলেন, অতীতের মতোই গঠনগত ও সংবিধান অনুযায়ী, ঢাকা-১৭ আসনে আমি দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছি। সভাপতি সিলেটে অবস্থান করায়, তার সঙ্গে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য সচিব হিসেবে অন্য সবার সঙ্গে আলোচনা করেই বাবু অশোক ধরকে প্রার্থী করা হয়েছে। প্রার্থী বাছাই করা নিয়ে অতীতে কোনও সমস্যা হয়নি। কিন্তু এবার কেন হলো, সেটি বুঝতে পারছি না। সভাপতি যে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছেন, তার প্যাডে দলের ঠিকানা ব্যবহার করা হয়নি। পুরানা পল্টনের বদলে তিনি কাকরাইলের ঠিকানা ব্যবহার করেছেন। বিষয়টি রিটার্নিং কর্মকর্তাকেও অবহিত করা হয়েছে।
শনিবারের বৈঠকে যাদের অংশ নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, তাদের অনেকের সঙ্গে কথা হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, দলের বেশির ভাগ লোক আমার সঙ্গে আছেন। তারা সভায় অংশ নেননি। মোবাইল করে তাদের মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে। তারা দলে ভাঙ্গন চান না। আমাদের বহিষ্কার দলের গঠনতন্ত্র ও সংবিধান অনুযায়ী হয়নি। এটি আমরা মানি না।