প্রশান্তি ডেক্স ॥ আগামী ১০ দিনের মধ্যেই সরকার পতনের এক দফা দাবি আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবে বিএনপি ও দলটির সঙ্গে যুগপতে যুক্ত বিরোধী দলগুলো। এই ঘোষণায় পৃথকভাবে রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখা দেওয়া হবে। পাশাপাশি সম্মিলিতভাবে প্রস্তুত ‘এক দফা’ দাবি ও নতুন কর্মসূচি উপস্থাপন করবে দলগুলো। এরইমধ্যে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। আগামী ১০ জুলাই গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বৈঠকের পর আনুষ্ঠানিকভাবে দিনক্ষণ ঘোষণা করবে বিএনপি।
বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানিয়েছেন, যুগপতে যুক্ত বিএনপি, গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণফোরাম-পিপলস পার্টিসহ বিরোধী দলগুলো পৃথকভাবে এক দফা দাবি উপস্থাপন করবে।
‘যুগপৎ ধারায় বৃহত্তর গণআন্দোলনের এক দফার যৌথ’ শীর্ষক শিরোনামের সম্ভাব্য ঘোষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের জনগণের ভোটাধিকার হরণকারী বর্তমান ফ্যাসিবাদী, কর্তৃত্ববাদী সরকারের পদত্যাগ ও বিদ্যমান অবৈধ সংসদের বিলুপ্তি, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ/তত্ত্বাবধায়ক/অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন করে তার অধীনে অবাধ, নিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি, রাষ্ট্র কাঠামো মেরামত ও তার গণতান্ত্রিক রূপান্তরের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক ও শাসনতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার এক দফা দাবিতে রাজপথে সক্রিয় বিরোধী রাজনৈতিক দল ও জোটগুলো যুগপৎ ধারায় ঐক্যবদ্ধ বৃহত্তর গণআন্দোলন গড়ে তোলা ও তা সফল করার ঘোষণা প্রদান করছে।’
বিএনপির সিনিয়র নেতারা জানান, অতি দ্রুত এই যৌথ ঘোষণা দেওয়া হবে। বিএনপির পক্ষ থেকে সমাবেশের মাধ্যমে ঘোষণা দেওয়ার জন্য যুগপতে যুক্ত দলগুলোকে উৎসাহিত করা হয়েছে। তবে কোনও কোনও জোট ও দল সক্ষমতার প্রশ্নে বিকল্প পদ্ধতিতে ঘোষণা করার কথা জানিয়েছে।
দলের একাধিক স্থায়ী কমিটির সদস্য জানান, গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির প্রধান আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বর্তমানে দেশের বাইরে রয়েছেন। তিনি ফিরে আসার পর ১০ জুলাই মঞ্চের সঙ্গে বৈঠক হবে। ওই বৈঠকের পরই চূড়ান্ত দিনক্ষণ নির্ধারণ করবে বিএনপি।
বিএনপির একাধিক নেতা মনে করেন, এই জুলাইয়ে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ভারতের একটি প্রতিনিধি দলের ঢাকা সফরের কথা রয়েছে। দলের উচ্চ পর্যায় যেকোনোভাবে তাদের সফর চলাকালে এই ঘোষণা দেওয়ার পক্ষপাতি।
তবে, বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের একাধিক সূত্রের দাবি, বিএনপি ঢাকায় সমাবেশের মাধ্যমে নতুন এই ঘোষণা দিতে চায়। এক্ষেত্রে অতি দ্রুতই ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ দেখা যেতে পারে। এছাড়া যৌথ এক দফা ঘোষণার পাশাপাশি নতুন করে কর্মসূচিও দেবে বিএনপি। যদিও সমমনা একাধিক দলের সন্দেহ রয়েছে বিএনপি এখনই চূড়ান্ত আন্দোলনে প্রবেশ করবে কিনা। এক্ষেত্রে ২২ জুলাই ঢাকায় তারুণ্যের সমাবেশ করার পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি থাকায় ওই কর্মসূচির দিকেও নজর রাখছেন যুগপতে যুক্ত নেতারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু আমাদেও প্রতিনিধিকে বলেন, ‘খুব তাড়াতাড়ি ঘোষণা আসছে। অপেক্ষা করুন।’
বিএনপির বাইরে গণতন্ত্র মঞ্চের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, জুলাইয়ের ১৫ তারিখের মধ্যেই যৌথভাবে একক ঘোষণা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে গণতন্ত্র মঞ্চ সভা-সমাবেশ, সংবাদ সম্মেলন বা যেকোনও একটি পদ্ধতিতে নতুন ঘোষণা ও কর্মসূচি দেবে। এরইমধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চের চট্টগ্রাম অভিমুখে রোডমার্চ কর্মসূচি রয়েছে আগামী ১৯ থেকে ২১ জুলাই। এছাড়া ঢাকার বাইরে একাধিক বিভাগীয় শহরে সমাবেশ কর্মসূচি রয়েছে মঞ্চের।
জানতে চাইলে মঞ্চের অন্যতম নেতা জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে আমাদের ১০ জুলাই মিটিং আছে। সে মিটিংয়ের পর জানা যাবে কবে ঘোষণা আসবে।’ মঞ্চের সমন্বয়ক সাইফুল হক বলেন, ‘আগামী ১০ জুলাই বিএনপির সঙ্গে মঞ্চের লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক আছে। আশা করি সেই মিটিংয়ে যৌথ এক দফার চূড়ান্ত তারিখ নির্ধারণ করতে পারবো, যৌথ ঘোষণার পাশাপাশি আন্দোলনের কর্মসূচিও দিতে পারবো।’
গত বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) বিকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেছেন ১২ দলীয় জোটের সিনিয়র নেতারা। ওই বৈঠকেও বিএনপির পক্ষ থেকে এক দফা দাবি ও কীভাবে ঘোষণা করা হবে, তা নিয়েও মত দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ‘বৈঠকে আমরা মতামত দিয়েছি। আমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বিএনপি। যে সিদ্ধান্ত নেবে, ১২ দলীয় জোট তা বাস্তবায়ন করবে।’
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার (৭ জুলাই) বিকালে গণফোরাম-পিপলস পার্টির সঙ্গে কথা বলবে বিএনপি। গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বৈঠকটি হবে বলে জানান দলের মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান।