প্রশান্তি ডেক্স ॥ লোডশেডিং ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় কেউ যেন ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) কোনও স্থাপনায় হামলা করতে না পারে, সেজন্য কড়া নিরাপত্তা চাওয়া হয়েছে। সম্প্রতি ডিপিডিসির উপ-মহাব্যবস্থাপক (নিরাপত্তা) রফিকুল ইসলাম এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। র্যাব ও পুলিশের পাশাপাশি সরকারের প্রভাবশালী দুই গোয়েন্দা সংস্থার কাছেও এই চিঠি পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, গ্রীষ্মকালীন বিদ্যুতের চাহিদা বেশি হওয়ার কারণে লোডশেডিং হচ্ছে। এতে জনমনে অসন্তোষ রয়েছে। এ কারণে বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র, কন্ট্রোলরুমসহ অন্যান্য স্থাপনায় নিরাপত্তা ঝুঁকির আশঙ্কা রয়েছে। এমতাবস্থায় যেকোনও ধরনের অনাকাঙি্ক্ষত পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে নিরাপত্তা জোরদার করা জরুরি।
চিঠিতে বলা হয়, বঙ্গভবন, গণভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, জাতীয় সংসদ ভবন এবং বাংলাদেশ সচিবালয়সহ রাজধানী ঢাকার বেশিরভাগ এলাকা এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে নিয়োজিত সংস্থা ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ২৯টি উপকেন্দ্রসহ মোট ৭০টি উপকেন্দ্র, সুইচিং স্টেশন, ৩৬টি বিভাগীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। এছাড়া বিদ্যুৎ বিতরণ সচল রাখার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি বা খুচরা যন্ত্রাংশ ব্যবহার করতে হয়। এই যন্ত্রপাতি বা খুচরা যন্ত্রাংশ বিভিন্ন স্টোরে রক্ষিত থাকে এবং ডিপিডিসির স্টোরগুলো গাজীপুর মেট্রোপলিটন এলাকা ও ঢাকা জেলার সাভার উপজেলায় অবস্থিত।
চিঠিতে ডিপিডিসির গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর একটি তালিকা দিয়ে সেসব জায়গায় নিরাপত্তা জোরদারের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে সার্বক্ষণিক পুলিশ ফোর্স মোতায়েন ও টহল জোরদার করার অনুরোধ করা হয়েছে।
ডিপিডিসির উপমহাব্যবস্থাপক (নিরাপত্তা) রফিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সাধারণত কেউ বিদ্যুৎকেন্দ্র বা উপকেন্দ্রে হামলা করে না। তবু আমরা নিরাপত্তার স্বার্থে চিঠি দিয়েছি। আমাদের সব বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র বা কেপিআই স্থাপনাগুলোতে সবসময়ই আনসার সদস্যরা নিয়োজিত থাকে। আমরা সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়েছি। একইসঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়মিত গোয়েন্দা নজরদারি করার অনুরোধ করা হয়েছে।’
ডিপিডিসির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘বর্তমানে স্থানীয় থানা পুলিশ সপ্তাহে একবার এসে খোঁজ-খবর নেয়। এছাড়া টহল পুলিশের দলও নজরদারি করে। আপাতত নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই, তবু নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের জুন-জুলাই মাসে তীব্র লোডশেডিংয়ের কারণে একাধিক জায়গায় বিদ্যুৎ অফিস ও উপকেন্দ্রে হামলার ঘটনা ঘটেছে। ফেনীর ছাগলনাইয়ার পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে হামলা চালিয়ে অফিসের গেট, আসবাবপত্র, দরজা-জানালার কাঁচ ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। এছাড়া সম্প্রতি সিলেটেও বিক্ষুব্ধ লোকজন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে। পটুয়াখালীতেও একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলা চালানো হয়।
ডিপিডিসির একজন কর্মকর্তা জানান, সাধারণত ঢাকা ও এর আশপাশের বিদ্যুৎকেন্দ্র সাধারণ মানুষ হামলা করে না। এতে তারা নিজেরাও যে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তা বুঝতে পারে। কিন্তু ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় তৃতীয় কোনও পক্ষ সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে সুযোগ নিতে পারে। সেজন্য আগে থেকেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার কাছে ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের বিদ্যুৎ বিতরণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অফিস, উপকেন্দ্রসহ সব কেপিআই স্থাপনার ঠিকানা দেওয়া হয়েছে। এমনকি কোন থানার অধীনে কোন স্থাপনা এবং র্যাবের কোন ব্যাটালিয়ানের অধীনে কোনও স্থাপনা তাও উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে। যাতে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ বা র্যাবের ব্যাটালিয়ান নিরাপত্তা দিতে পারে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, ডিপিডিসি থেকে আসা চিঠি ডিএমপির সব ক্রাইম-ডিসি ও গোয়েন্দা পুলিশের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। থানা পুলিশকে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে নজরদারি ও নিরাপত্তার জন্য বলা হয়েছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, ডিপিডিসির তালিকা অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট জোনাল টিমের সদস্যরা নজরদারি শুরু করেছেন। লোডশেডিং বা রাজনৈতিক পরিস্থিতির অস্থিতিশীলতার সুযোগ নিয়ে কেউ যাতে নাশকতা বা অন্য কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে, সেজন্য নিয়মিত সাদা পোশাকে নজরদারিও করা হচ্ছে।