অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং অকৃতজ্ঞ এইসকল পূর্বেই ছিল এবং বর্তমানেও আছে আর ভবিষ্যতেও থাকবে বলে দৃশ্যমান অবস্থানগুলো আমাদেরকে জানান দেয়। কথায় ছিল বাঙ্গালীরা অকৃতজ্ঞ। হঁ্যা তা যে শুধু বাঙ্গালীদের বেলায়ই বলা যাবে তা কিন্তু নয় বরং বর্তমানে বলা যায় সকল মানুষই অকৃজ্ঞ। আর আজ এই সময়ে এসে এই অকৃতজ্ঞতা প্রকাশের সুযোগ বোঝার সময় ও প্রেক্ষাপট দৃশ্যমান হয়েছে। তবে বর্তমানে এই অকৃতজ্ঞতাকে বৈধতা দিয়ে বিশ্ববাসী নিজেদের প্রয়োজনে স্বীকৃতিও দিয়ে যাচ্ছে। সাধারণ ও অসারণ এমনকি যে কোন মানুষই একটু চিন্তা করলেই এই বিষয়টি বুঝতে পারেন কিন্তু স্থায়ীভাবে মনে রাখতে পারেন কিনা অথবা নিজেদের জীবনে প্রয়োগ বা ব্যবহার করতে পারেন কিনা তাই এখন খতিয়ে দেখার বিষয়। বাবা আদম ও মা হাওয়ার সৃষ্টির পর থেকে অদ্যাবদি পর্যন্ত এই অকৃতজ্ঞতা বিরাজমান রয়েছে। আল্লাহর অবাধ্য হওয়ার কারণে বেহেস্ত থেকে বিতাড়িত হয়ে পৃথিবীতে আসার পর থেকে এই অকৃতজ্ঞতা অদ্যবদি বিরাজমান রয়েছে।
সমস্ত নবী ও রাসুলগণের কিতাব বিশ্লেষণ করলে এই অকৃতজ্ঞতার জলন্ত প্রমান আমাদের সামনে দিবালোকের মত স্পষ্ট হয়ে উঠে। মানুষ যখনই তার চাহিদা এবং প্রত্যাশার অনুসন্ধানে নামে তখনই মানুষ পাওয়ার আশায় কৃতজ্ঞচিত্তে অপেক্ষা করে। প্রয়োজন মিটিয়ে গেলে নতুন চাহিদার সন্ধানে আবার আপন আপন প্রত্যাশার জাল বৃদ্ধি করে অগ্রসর হয় এবং ঐ অগ্রসর হওয়ার সময়ই ধৈয্য এবং অপেক্ষার বাধ ভেঙ্গে অকৃতজ্ঞতার স্বীকারে পরিণত হয়। যেমনি করে মান্না ও ছালুয়া খাওয়ার সময় মানুষ করেছিল। হযরত মূসা এবং ঈসা (আ:) আল্লাহর কাছ থেকে ফয়সালা এবং আদেশ -নিষেধ নিয়ে ফিরে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে না পেরে অকৃতজ্ঞ হয়ে দিক বিদিক ছোটাছোটি করেছিল। বর্তমানেও তাই হচ্ছে। একজনের উপর আস্থা ও বিস্থাস রাখার ক্ষেত্রে ঐ ধরণের অকৃতজ্ঞতার বহি:প্রকাশ ঘটিয়ে যাচ্ছে।
সৃষ্টিকর্তার ছুরুতে সৃষ্টি মানুষ দিন দিন সৃষ্টিকর্তাবিমুখ হচ্ছে। বিশাল দুরত্ব তৈরী করে ঐ অকৃতজ্ঞতার ব্যাপ্তি বৃদ্ধি করে যাচ্ছে। আজ পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে এইসকল বিষয়গুলোকে পুর্বের বিষয়গুলোর সাথে মিলিয়ে নিয়ে নিজেকে পরিশুদ্ধ করার সময় ও সুযোগ এসেছে। কিভাবে মানুষ সৃষ্টিকর্তা এবং সৃষ্টিবিমুখ হয়ে শুন্যে ভাসমান থেকে জীবনের মূল্যবান সময়গুলোকে উপভোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। সৃষ্টিকর্তা থেকে আশির্বাদপুষ্ট হয়ে পৃথিবীতে এসে নবি-রাসুলগণ এবং এখন মানুষে মানুষে বিভেদ, বিসমবাদ এবং লোভ লালসার গভীরে নিমজ্জ্বিত হয়ে ইতিবাচক এবং নৈতিকতা ও ঈমান, আমল এবং বিশ্বাস হারিয়ে দিশেহারা গতিহীন জীবনে বিচরণ করে যাচ্ছে।
পৃথিবীর বর্তমান রীতি হলো যে, যে যার বেশী উপকার করবে সে তার তত বেশী ক্ষতি করবে। অথবা নতুন কোন উপকারের বা চাহিদার লোভে বৃহৎ ক্ষতি সাধনে লিপ্ত হবে। খুবই অল্প সময়ের মধ্যে মনোভাব এবং দৃষ্টিভঙ্গি এমনকি কাজের ধারাবাহিতকা পরিবর্তন করবে। এই সকল বিষয়গুলো হরহামেশাই দৃশ্যমান। বিশ্বব্যবস্থা এবং বিশ্ব ক্ষমতা ও ঈমান- আমল আর বিশ্বাসের চর্চায় এবং অকৃতজ্ঞতার জোয়ার বহমান। বর্তমানে বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও তাই ঘটে যাচ্ছে। তবে কতজ্ঞতাকে সাধুবাদ জানাই এবং যুগ যুগ ধরে এই কৃতজ্ঞতা লড়াই করে টিকে আছে এবং ভবিষ্যতেও টিকে থাকবে। আর এই টিকে থাকার পিছনের মুল উৎসই বা শক্তিই হলো সৃষ্টিকর্তা। তিনিই এবং তাঁর নিজের হওয়া মানুষগুলো আজ পর্যন্ত ঐ কৃতজ্ঞতাকে ধারণ ও লালন করে মানসপটে দৃশ্যমান রাখছে। আর এই দৃশ্যমানতাই প্রমান করে সত্য এবং কৃতজ্ঞতা টিকে থাকবে। যত বৈধতাই দেয়া হওক না কেন; যতই পরিবর্তন এবং পরিমার্জন করা হউক না কেন ঐ কৃতজ্ঞতা আবার পৃথিবীকে বদলে দেবে এবং সকল মানুষকে ঐকবদ্দতায় আবদ্ধ করে সৃষ্টিকর্তার গুনজ্ঞান প্রকাশে নিয়োজিত রাখবে।
আমাদের বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এই অকৃতজ্ঞতা বারবার জাতিকে ভোগিয়েছে, কষ্ট দিয়েছে, পিছিয়ে নিয়ে গেছে; কিন্তু সৃষ্টিকর্তা সেই অকৃতজ্ঞতাকে অস্থায়ী করে স্বায়ী কৃতজ্ঞতাকে বার বার জাগিয়ে তুলেছেন এবং জাতিকে দিক নির্দেশনা দিয়ে বুঝিয়েছেন আগামীর গন্তব্য ঠিক করতে। তবে এই চেতনা থেকে শিক্ষা নেয়ার মানুষিকতায় আমাদের এই জাতি বড়ই অলস এবং ক্ষমতা ও ক্ষমতাহীন উভয়েই আজ নির্বোদের মত গতি ও ছন্দময়তা হারিয়ে অকৃতজ্ঞদের কাতারে নিজেদেরকে সামিল করতে দৌঁড় প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হয়েছে। তবে এই যবনিকাপাত টানার এখনই সময়। অকৃতজ্ঞতাকে পাশ কাটিয়ে কৃতজ্ঞতাকে পুন:প্রতিষ্ঠা করার। চলমানকে আরো গতিশীল করতে সকলের অবস্থানেই কৃতজ্ঞতা এবং ক্ষমা ও ভালবাসার নি:শর্ত বন্ধন সুদৃঢ়করণের আশু প্রয়োজনীয়তার বাস্তবায়ন অত্যাসন্ন হয়ে পড়েছে। আমরা আজ এক কঠিন রূঢ় বাস্তবতার মুখোমুখি কিন্তু এর থেকে বেড় হওয়ার পথে কৃতজ্ঞতা একটি উপাদান। আসুন এই কৃতজ্ঞতাকে আলিঙ্গনে এবং বাস্তবায়নে সচেতন হয়ে চর্চায় অগ্রসর হয় এবং সেই সাথে ক্ষমা ও ভালবাসা এবং বিশ্বাস স্থাপন ও অর্জনে নিজ নিজ ক্ষেত্রে কাজ করি। আল্লাহ আমাদের সকলকে হেফাজত করুন। কৃতজ্ঞ জাতি হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করুন।