কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা খালে আবারো বইবে স্বচ্ছ পানি আর চলবে নৌকা

প্রশান্তি ডেক্স॥ অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে ঢাকার কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা খাল উদ্ধারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ জন্য “শুভাঢ্যা খাল পুনঃখনন এবং খালের উভয় পাড়ের উন্নয়ন ও সুরক্ষা (১ম পর্যায়)” নামে প্রকল্প গ্রহণ করেছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, রাজধানীর অদূরে বুড়িগঙ্গার ওপারে কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা খালে বইবে স্বচ্ছ পানি, চলবে নৌকা, দুপাড়ে হাঁটবে সাধারণ মানুষ-এমন পরিকল্পনাই করছেন সরকার সংশ্লিষ্টরা। যেখানে বর্তমানে কঠিন ও তরল বর্জ্যে খালের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে যাওয়ার উপক্রম। এই খালের পাড় যেটুকু বাকি আছে সেখানে অবৈধ দখলদারদের হাতে অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে বাড়িঘর, দোকানপাট, কলকারখানা ও মসজিদ ইত্যাদি। এসব রোধে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৩১৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকা জোগান দিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো)। আগামী ২০২৫ সালের ৩০ জুন নাগাদ প্রকল্পটি শতভাগ বাস্তবায়নের কথা রয়েছে।

জানা গেছে, অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে শুভাঢ্যা খাল ও খালের পাড় সুরক্ষাকরণ, খাল খনন, উন্নয়ন ও সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ, খালের অভ্যন্তরীণ নৌযোগাযোগ ব্যবস্থা আবার চালু করা এবং স্থানীয় জনগণের জন্য খালের পাড়ে বিনোদনমূলক সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টির লক্ষ্যে “ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ উপজেলাধীন শুভাঢ্যাখাল পুনঃখনন এবং খালের উভয় পাড়ের উন্নয়ন ও সুরক্ষা (১ম পর্যায়)“প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। যা গত ২৯ আগস্ট জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন করা হয়।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পের আওতায় ১৪ দশমিক ২৬ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন করা হবে। ১৩ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার পাড় সংরক্ষণসহ ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে। এর জন্য ৩ একর ভূমি অধিগ্রহণ বা ক্রয় করা হবে। প্রকল্পের আওতায় খালের দুই পাড়ে বৃক্ষরোপণ করা হবে ২ হাজার ৬০০টি। প্রকল্পটি গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত আছে।

পরিকল্পনা কমিশন বলেছে, প্রকল্পটি সরকারের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সাথে সংগতিপূর্ণ। সরকারের ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ ও ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার পানি সম্পদ সেক্টরের অন্যতম উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হচ্ছে, নদী তীর সংরক্ষণের মাধ্যমে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নদী ভাঙ্গন রোধ করে দুর্যোগ ঝুঁকি প্রশমন করা। এ উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের সাথে প্রস্তাবিত প্রকল্পটির কার্যক্রম সামঞ্জস্যপূর্ণ। এছাড়া, এসডিজি’র নির্দেশক ৬.৫.১: সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনার সাথেও প্রকল্পটি সংগতিপূর্ণ বলে মনে করে পরিকল্পনা কমিশন।

একনেকের অনুমোদন প্রত্যাশা করে পরিকল্পনা কমিশনের মতামতে বলা হয়, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে শুভাঢ্যা খাল ও খালের পাড় অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে সুরক্ষা এবং কঠিন ও তরল বর্জ্য নিক্ষেপসহ খালের পাড়ে অবৈধভাবে বাড়িঘর, দোকানপাট, কলকারখানা ও মসজিদ ইত্যাদি গড়ে উঠা রোধ করা সম্ভব হবে বিধায় প্রকল্পটি অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়।

এমতাবস্থায় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক প্রস্তাবিত প্রকল্পটি সম্পূর্ণ জিওবি অর্থায়নে মোট তিনশত সতেরো কোটি উনষাট লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে এপ্রিল ২০২৩ থেকে জুন ২০২৫ পর্যন্ত মেয়াদে বাস্তবায়নের নিমিত্ত একনেকে অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হলো।

প্রকল্পটি প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, রাজধানীর অদূরে বুড়িগঙ্গার ওপারে কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা খালটি এখন ব্যবহারের অযোগ্য। খালটির অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার উপক্রম। এ অবস্থায় খালটিকে আগের চেহারায় ফিরিয়ে আনার তাগিদ থেকেই প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এ খালে আগের মতোই বইবে স্বচ্ছ পানি, সেখানে চলবে নৌকা। খালের দুপাড়ে সাধারণ মানুষের হাঁটার ব্যবস্থা করা হবে। এজন্য সেখানে করা হবে ওয়াকওয়ে। এমন পরিকল্পনাই করছেন সরকার সংশ্লিষ্টরা। অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে খালটিকে রক্ষা করে এর আশেপাশে অবৈধভাবে গড়ে তোলা বাড়িঘর, দোকানপাট, কলকারখানা অপসারণ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.