বিএনপির অস্পষ্ট ও নড়বরে অবস্থান, যুগপৎ কর্মসূচির দিনক্ষণ নিয়ে চিন্তিত বিরোধী দলগুলো

প্রশান্তি ডেক্স॥ সরকার পতনের এক দফা দাবি আদায়ে পরবর্তী কর্মসূচির দিনক্ষণ নির্ধারণ নিয়ে চিন্তায় পড়েছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন যুগপতে যুক্ত বিরোধী দলগুলো। আগামী দুই মাসের মধ্যে সরকারবিরোধী আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার পূর্ব আলোচনা থাকলেও সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে এই ভাবনা। এক্ষেত্রে নতুন করে বিএনপির অবস্থানকে কেন্দ্র করে এই চিন্তা আরও বেড়েছে বিরোধী নেতাদের।

গণতন্ত্র মঞ্চ ও অন্যান্য বিরোধী দলের নেতারা মনে করছেন, অতি সম্প্রতি মাঠের কর্মসূচি নিয়ে বিএনপির অবস্থান অনেকটাই অস্পষ্ট। এরমধ্যে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের বেশিরভাগ রয়েছেন দেশের বাইরে। এই পরিস্থিতিতে বিরোধী নেতাদের কারও কারও মত – বিএনপি কেবলই মার্কিন অবস্থানের ওপর নির্ভর করে আন্দোলন ও নীতি-কৌশল নির্ধারণ করছে। সে কারণে মাঠের আন্দোলনে খানিকটা ঝিমুনি এসেছে।

বিএনপির নেতারা বলছেন, নীতিনির্ধারকদের অনেকে দেশের বাইরে থাকলেও তারা মূলত চিকিৎসা নিচ্ছেন। গত সোমবার (২৮ আগস্ট) সিঙ্গাপুরে সকাল থেকে হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তারা দুজনেই স্থানীয় হোটেলে উঠেছেন বলে দলের স্থায়ী কমিটি ও দায়িত্বশীল সূত্র জানায়।

এছাড়া সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিচ্ছেন স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। গত সোমবার (২৮ আগস্ট) সন্ধ্যায় তিনি আমাদের প্রতিনিধিকে বলেন, ‘আমি ভালো আছি। আরও কিছু দিন এখানে থাকতে হবে। নিয়মিত চিকিৎসা চলছে।’

গণতন্ত্র মঞ্চের একাধিক নেতার ভাষ্য; আগামী মধ্য সেপ্টেম্বরের আগে যুগপতের নতুন কর্মসূচি আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা চলায় কর্মসূচির ধরন নিয়েও আলোচনা করছেন নেতারা।

মঞ্চের একজন নির্ভরযোগ্য নেতা জানান, গত সোমবার বিকালে মঞ্চের নেতারা দীর্ঘ বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সামনের কর্মসূচি, দিনক্ষণ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সেই আলোচনায় বিএনপির বর্তমান অবস্থাও উঠে আসে। বিশেষ করে মাঠের রাজনীতিতে দলটিকে আগের চেয়ে নিষ্ক্রিয় মনে করছেন মঞ্চের নেতারা।

গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘আমরা জানি, বিএনপি নেতারা স্বাস্থ্যগত পরীক্ষার জন্য সিঙ্গাপুরে গেছেন। এটা তাদের নিয়মিত চেকআপের বিষয়, আগে থেকেই জানতাম আমরা। কর্মসূচির চাপে তারা আগে যেতে পারেননি। অন্য কিছু মেলানো সমীচীন না। তারা দ্রুত ব্যাক করবেন।’

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, আগামী ১ সেপ্টেম্বরের আগেই চিকিৎসা শেষ হওয়া সাপেক্ষে দেশে ফিরবে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মির্জা আব্বাসও চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরবেন।

যুগপতে যুক্ত নেতাদের কারও কারও ভাষ্য সরকার পতনের কর্মসূচি হিসেবে পদযাত্রা, গণমিছিলের মতো কর্মসূচি বাদ দিয়ে হরতাল, অবরোধ, অবস্থান ধর্মঘটের চাপ রয়েছে নেতাকর্মীদের তরফে। নেতাকর্মীরা চাইছে, সরকারকে বাধ্য করা যাবে এমন কর্মসূচি। সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ নাও থাকতে পারে। এ নিয়ে অবশ্য মার্কিন ভিসানীতির বিষয়টিকেও বিবেচনায় রাখছেন নেতারা।

স্থায়ী কমিটির একজন প্রভাবশালী সদস্য গত সোমবার রাতে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে উল্লেখ করেন, ‘সরকার চাইছে বিএনপি যেন সহিংসতা করে। কিন্তু আমরা সেটা করবো না।’

কর্মসূচির বিষয়ে মঞ্চের নেতা সাইফুল হক বলেন, ‘আমরা লিয়াজোঁ কমিটির সভা করেছি কিছু দিন আগে। আন্দোলনের ফরম্যাট ও সময় নিয়ে আলাপ করেছি। সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে আবারও কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারবো বলে আশা করি, যা ১৫-২০ সেপ্টেম্বর থেকে সর্বাত্মক রূপ নেবে।’

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘আমরা আন্দোলনে আছি। নতুন কর্মসূচি খুব শিগগিরই ঘোষণা করা হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published.