লাখ টাকা মনে বাংলার ইলিশ

প্রশান্তি ডেক্স॥বরিশালে ইলিশের দাম নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে চলে গেছে। হারিয়ে যেতে বসেছে মিঠা পানির রুপালি ইলিশও। যেখানে প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার মণ ইলিশ আসতো সেখানে মাত্র একশ থেকে দেড়শ’ মণ ইলিশ আসছে পোর্ট রোড ইলিশ মোকামে। এতে ইলিশের মোকাম দখল করেছে সাগরের বিভিন্ন মাছ। এদিকে, সংকটকে পুঁজি করে জাতীয় মাছের দামও আকাশচুম্বী। এর থেকে পরিত্রাণে ভোক্তা অধিকারকে অভিযানের অনুরোধ জানিয়েছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা।

পোর্ট রোডে মাছ কিনতে আসা গোপাল সরকার জানান, তিনি ইলিশ মাছ কিনতে আসেননি। দীর্ঘ ছয় মাসের অধিক সময় ধরে তার বাসায় ইলিশ কেনা হয় না। কারণ এখন দাম এত বেড়েছে এটি বিত্তবানদের মাছ। এ কারণে ইলিশের দামও জিজ্ঞাসা করেন না। তবে পোর্ট রোডে সাগরের মাছের দাম কিছুটা কম হওয়ায় কিনেছেন।

তিনি প্রশ্ন রাখেন ইলিশের প্রজনন বৃদ্ধিতে সরকার জাটকা নিধন ও মা ইলিশ রক্ষায় নানা ধরনের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ওই প্রকল্প বাস্তবায়নে কোটি কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। কিন্তু তাতেও নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের পাতে ইলিশ জুটছে না। তার দাবি, জাটকা ও মা ইলিশ নিধন বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীতে ইলিশের সংকট দেখা দিয়েছে।

আড়তদার জহির সিকদার জানান, গত বৃহস্পতিবার পাইকারি বাজারে দেড় কেজি ওজনের ইলিশের মণ বিক্রি হয়েছে এক লাখ টাকা দরে। এক কেজি ওজনের মণ ৬৪ হাজার, এলসি ৫২ হাজার, ভেলকা ৪৪ হাজার ও ছোট সাইজের (জাটকা) ইলিশের মণ বিক্রি হয়েছে ৩৪ হাজার টাকায়। যা খুচরা বাজারে আরও বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।

তিনি জানান, ইলিশের ভরা মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকেই নগরীর পোর্ট রোডের মোকামে তেমন একটা ইলিশের দেখা মিলছে না। প্রতিদিন গড়ে একশ’ মণ ইলিশ আসছে। মাঝেমধ্যে দেড়শ’ মণ আসছে। তবে এর মধ্যে বেশিরভাগ ইলিশ সাগরের। নদীর মাছ তেমন একটা নেই বললেই চলে। এতে ব্যবসায়িকভাবে মারাত্মক সমস্যায় পড়েছেন পোর্ট রোডের আড়তদাররা। অথচ গত বছর এ মৌসুমে মোকামে গড়ে ইলিশ এসেছে ৮০০ থেকে এক হাজার মণ করে।

জহির সিকদার আরও জানান, পোর্ট রোডের ইলিশের আড়তদাররা এখন বিকল্প হিসেবে পাথরঘাটা, কুয়াকাটা, মহিপুর, ভোলাসহ বিভিন্ন স্থানে আড়ত খোলার চেষ্টা করছেন। তিনি নিজেও মহিপুর একটি নতুন আড়ত খুলবেন। যেসব স্থানে সাগরের মাছ যাচ্ছে সেসব স্থান আড়তদারদের প্রথম পছন্দের।

পোর্ট রোডের আড়তদার রবিন সেন জানান, ১৯৭৬ সাল থেকে তিনি ইলিশের ব্যবসা করে আসছেন। এমন দুর্দিন আর কখনও হয়নি। নদীতে তেমন ইলিশ না মিললেও সাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ মিলছে। কিন্তু সে ইলিশ পোর্ট রোড মোকামে তেমন আসছে না। এ ব্যবসায় আসার পর বরিশাল বিভাগে হাতেগোনা কয়েকজন আড়তদার ছিলেন। এ কারণে জেলেরা ইলিশ শিকার করে তাদের কাছে চলে আসতেন। যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনে এখন সাগর ও নদীর বিভিন্ন স্পটে মোকাম সৃষ্টি হয়েছে। সেখান থেকে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ট্রাকযোগে ইলিশ চলে যাচ্ছে। আর জেলেদের খরচ কমায় তারাও তাদের কাছের মোকামে ইলিশ বিক্রি করছেন।

তিনি বলেন, পূর্বে ইলিশ মোকাম থেকে ১৮ থেকে ২০টি ট্রাকযোগে ইলিশ পাঠানো হতো দেশের বিভিন্ন জায়গায়। একটি ট্রাকে ২০০ মণ মাছ উঠতো। প্রতিদিন ইলিশ আসতো তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার মণ। এখন সেখানে দেড়শ’ মণ ইলিশ আসছে। ইলিশের সংকট এবং ইলিশ শিকার ও মোকামে মাছ শ্রমিকদের শ্রমের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়া দাম বেড়েছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান জানান, কিছু দিনের মধ্যেই নদীতে ইলিশ আসা শুরু করবে। তাছাড়া সাগরের বিভিন্ন স্পটে ইলিশ মোকাম গড়ে তোলা হয়েছে। এ কারণে পোর্ট রোড মোকামে তেমন ইলিশ আসছে না। যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিবর্তনে জন্য এমনটি হয়েছে। দাম বৃদ্ধির জন্য ইলিশ শিকারের ব্যয় বৃদ্ধিকে দায়ী করেছেন। মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, আগে একটি ট্রলার মাছ শিকারে গেলে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা খরচ হতো। এখন সেখানে চার লাখ টাকা খরচ হচ্ছে। ডিজেলের দাম বেড়েছে, বৃদ্ধি পেয়েছে শ্রমিকের মূল্যও। তবে যে পরিমাণ দাম হাঁকা হচ্ছে তা ঠিক নয়। এ জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট দফতরকে অভিযান পরিচালনার অনুরোধ জানান। এতে করে দামটা সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে। নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের নাগালে থাকবে ইলিশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published.