প্রশান্তি আন্তর্জাতিক ডেক্স ॥ যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমাদের সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্র স্লোভাকিয়ার নির্বাচনে জনমত জরিপে এগিয়ে রয়েছে ক্রেমলিনের প্রতি সহানুভূতিশীল সাবেক প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকোর নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল। আজ শনিবারের (৩০ সেপ্টেম্বর) এই ভোটের মাধ্যমে মাত্র চার বছরের মধ্যে পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করবেন দেশটির জনগণ। পশ্চিমারা এই নির্বাচন উদ্বেগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে।
একাধিক জনমত জরিপে ফিকোর দল এগিয়ে থাকলেও এককভাবে সরকার গঠনের সম্ভাবনা খুব বেশি নেই বলে ধারণা করা হচ্ছে। যে দল জয়ী হবে তাদের হয়ত জোট সঙ্গী নিয়ে সরকার গঠন করতে হবে। ব্রাতি¯্লাভা-ভিত্তিক গ্লোবসেক পলিসি ইনস্টিটিউটের একজন সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ক্যাটারিনা ক্লিংগোভা ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে বলেছেন, আজ শনিবারের নির্বাচনের ফলাফল এখনও অনিশ্চিত। এই সংশয় ে¯্লাভাক ভোটারদের মতামতকে প্রভাবিত করছে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ শুরুর পর কিয়েভের দৃঢ় সমর্থক হিসেবে ভূমিকা রেখে আসছে স্লোভাকিয়া। ইউক্রেনের সঙ্গে দেশটির সীমান্ত রয়েছে। স্লোভাকিয়াই প্রথম দেশ হিসেবে কিয়েভকে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিয়েছে। একই সঙ্গে কয়েক হাজার ইউক্রেনীয় শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে।
কিন্তু ফিকো ক্ষমতায় আসলে পরিস্থিতি পাল্টে যেতে পারে। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ক্রেমলিনের প্রতি তার সহানুভূতির কথা কখনও আড়াল করেননি। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে আক্রমণের জন্য ইউক্রেনের নাৎসি ও ফ্যাসিবাদীরা উসকানি দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। ইউক্রেনে আক্রমণকে ন্যায্যতা দিতে একই অভিযোগ করে আসছেন রুশ নেতা।
ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করার জন্য স্লোভাক সরকারের প্রতি দাবি জানিয়ে আসছেন ফিকো। তিনি বলেছেন, যদি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন তাহলে ে¯্লাভাকিয়া এক রাউন্ড গোলাবারুদও কিয়েভে পাঠাবে না। ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের বিরোধীও তিনি।
স্লোভােক থিংক ট্যাংক ইনস্টিটিউট অব পাবলিক অ্যাফেয়ার্স-এর রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সভাপতি গ্রিগোরিজ মেসেজনিকভ মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে বলেছেন, রুশপন্থি অনেকের মতোই ফিকো মস্কোর প্রতি নিজের সমর্থনকে শান্তি উদ্যোগ হিসেবে তুলে ধরতে চাইছেন। তিনি ও তার মিত্ররা যুক্তি তুলে ধরে বলছেন যে, ইউক্রেনে আমাদের অস্ত্র পাঠানো উচিত হবে না। কারণ এর ফলে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হবে। তারা বলছেন, যদি আমরা ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠানো বন্ধ করি তাহলে শান্তি আসবে। তাই, বাস্তবে তারা শান্তিপন্থি নন, তারা রুশপন্থি।
এর আগে দুই মেয়াদে এক দশকের বেশি সময় স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ফিকো। প্রথমবার ২০০৬ থেকে ২০১০ এবং পরে ২০১২ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত।
অনুসন্ধানী সাংবাদিক জ্যান কুসিয়াক ও তার বাগদত্তাকে হত্যার তদন্ত নিয়ে গণবিক্ষোভের কয়েক সপ্তাহ পর ২০১৮ সালের মার্চে তিনি পদত্যাগে বাধ্য হন। নিহত সাংবাদিক দেশটির অভিজাতদের দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদন লিখেছিলেন। এদের মধ্যে কয়েকজনের সঙ্গে ফিকো ও তার দলের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক ছিল।
আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিকোর পার্টির নেতৃত্বে একটি স্লোভাক সরকার হাঙ্গেরির নেতা ভিক্টর অরবানের সঙ্গে একটি জোট গঠন করতে পারে। অরবানও ইউক্রেনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন এবং আইনের শাসন নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে তার বিরোধ রয়েছে। পোল্যান্ডের রক্ষণশীল পিআইএস অক্টোবরের নির্বাচনে জয়ী হলে দেশ দুটির অবস্থান আরও জোরদার হতে পারে। যদিও রাশিয়ার প্রতি পোলিশ পিআইএসের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে।