গাজাকে ফিলিস্তিনি শূন্য করতে চাইছে ইসরায়েল?

প্রশান্তি আন্তর্জাতিক ডেক্স ॥ গাজা উপত্যকায় নিজেদের সীমান্ত দিয়ে মানবিক ত্রাণ সরবরাহের পরিকল্পনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও অপর দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেছে মিসর। কিন্তু ছিটমহলে থাকা বেসামরিকদের সরে যাওয়ার জন্য কোনও নিরাপদ করিডোর স্থাপনের পরিকল্পনার বিরোধিতা করছে তারা। মিসরীয় গোয়েন্দা সূত্রকে উদ্ধৃত করে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।

উপকূলীয় ভূখন্ড গাজার উত্তর ও পূর্বে ইসরায়েল এবং দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে মিসর। এখানে প্রায় ২৩ লাখ মানুষের বাস। ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস উপত্যকার শাসনভার নেওয়ার পর ২০০৭ সাল থেকে ইসরায়েলি অবরোধের মুখে রয়েছে অঞ্চলটি।

দীর্ঘদিন ধরে গাজার ফিলিস্তিনিদের মিসরীয় ভূখন্ডে প্রবেশ প্রতিহত করে আসছে কায়রো। এমনকি অতীতের যুদ্ধের সময়ও তারা শরণার্থীদের প্রবেশ করতে দেয়নি।

ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের নিয়মিত মধ্যস্থতাকারী কায়রো জোর দিয়ে বলে আসছে, দুই দেশের উচিত নিজেদের সীমান্তের ভেতরে সংঘাতের সমাধান করা। এর মাধ্যমেই কেবল ফিলিস্তিনিরা নিজেদের রাষ্ট্র গঠন করতে পারবে।

মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেছেন, গাজার বেসামরিকদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার জন্য একটি নিরাপদ করিডোর স্থাপনের ধারণা নিয়ে ইসরায়েল ও মিসরের সঙ্গে আলোচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। গত বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছিলেন, এই বিষয়ে আলোচনা চলমান রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মিসরের একটি গোয়েন্দা সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, বেসামরিকদের নিরাপদ করিডোরের ধারণা প্রত্যাখ্যান করেছে মিসর। ফিলিস্তিনিদের ভূখন্ডের অধিকার রক্ষায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

ফেরার অধিকার: আরবের বেশ কয়েকটি দেশে শরণার্থী শিবিরে বসবাস করছেন অনেক ফিলিস্তিনি ও তাদের বংশোদ্ভূতরা। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল সৃষ্টির যুদ্ধের সময় তারা ফিলিস্তিন ছেড়েছিলেন।

ডফলিস্তিনি ও আরব দেশগুলো বলে আসছে, চূড়ান্ত শান্তি চুক্তিতে এই শরণার্থীদের নিজ দেশে ফেরার অধিকারের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। ইসরায়েল সবসময় এর বিরোধিতা করে আসছে।

গত বুধবার জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, জ্বালানি, খাদ্য ও পানিসহ জীবন রক্ষাকারী সরবরাহ গাজায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া উচিত। আমাদের এখন দ্রুত ও নিরবচ্ছিন্ন মানবিক প্রবেশের সুযোগ দরকার।

পরে জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফানে দুজারিক বলেছেন, বেসামরিকদের সুরক্ষিত রাখতে হবে। আমরা গাজার অধিবাসীদের গণহারে দেশত্যাগ দেখতে চাই না।

কায়রোতে ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানির সঙ্গে এক বৈঠকে মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি বলেছেন, গাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কঠোর চেষ্টা করছে মিসর।

মিসরীয় গোয়েন্দা সূত্র অনুসার, মিসরের সিনাই উপদ্বীপ ও গাজার মধ্যকার রাফাহ ক্রসিং দিয়ে সীমিত যুদ্ধবিরতির আওতায় মানবিক সহযোগিতা সরবরাহের জন্য মিসর, যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও তুরস্কের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ত্রাণ সরবরাহের কাজ শুরু হয়েছে। তবে বিস্তারিত কিছু বলেননি।

গাজা ও মিসরীয় সূত্র জানিয়েছে, ইসরায়েলি বোমাবর্ষণের কারণে গত মঙ্গলবার থেকে রাফাহ ক্রসিং বন্ধ রয়েছে। এটি গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের বের হওয়ার ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত একমাত্র পথ।

চলতি সপ্তাহে মিসর একাধিকবার সতর্ক করে বিবৃতি দিয়েছে। তারা বলেছে, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় সেখানকার বাসিন্দারা মিসরীয় ভূখন্ডে চলে আসতে পারে।

মিসরে নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত আমিরা ওরন বলেছেন, সিনাইয়ের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্কের কোনও ইচ্ছে নেই। ফিলিস্তিনিদের সেখানে যেতে বলা হয়নি। সিনাই মিসরের ভূখন্ড।

আন্তোনিও তাজানির সঙ্গে বৈঠকের পর গাজার অধিবাসীদের বাস্তুচ্যুতির বিষয়ে মিসরীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামেহ শৌকরি বলেছেন, মানবিক সহযোগিতা, খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহে রাফা ক্রসিং উন্মুক্ত রাখতে আগ্রহী মিসর। কিন্তু অস্থিতিশীলতা ও সংঘাতের বিস্তৃতি দুর্ভোগ বাড়ায় এবং ইউরোপসহ নিরাপদ অঞ্চলগুলোতে আরও শরণার্থীদের হাজির করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.