যুদ্ধের শেষ হবে গাজার বিজয়ে: নাসরাল্লহ

প্রশান্তি আন্তর্জাতিক ডেক্স ॥ লেবাননের ইরানপন্থি সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ প্রধান সাইয়্যেদ হাসান নাসরাল্লাহ বলেছেন, ৭ অক্টোবর হামাসের হামলা ছিল ইসরায়েলে একটি ভূমিকম্প। হামাসকে ধ্বংস করার যে লক্ষ্য ইসরায়েলের, সেটি বাস্তবায়ন অসম্ভব। এই যুদ্ধের শেষ হবে গাজার বিজয়ে, শত্রুর পরাজয়ে। গত শুক্রবার গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর প্রথমবার দেওয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেছেন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।

ইসরায়েলে হামাসের হামলায় হিজবুল্লাহর জড়িত না থাকার দাবি করে নাসরাল্লাহ বলেছেন, এই অভিযান ছিল শতভাগ ফিলিস্তিনি। শুধু ফিলিস্তিনিদের দ্বারা পরিচালিত অভিযান ছিল সম্পূর্ণ গোপনীয়। এমনকি ইসরায়েলবিরোধী বিভিন্ন গোষ্ঠীর কাছেও তা প্রকাশ করা হয়নি।

সম্ভবত সৌদি আরবের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চুক্তি নিয়ে আলোচনাকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেছেন, এই সংঘাত শুধু ফিলিস্তিনি জনগণের সঙ্গে সম্পর্কিত, কোনও আঞ্চলিক ইস্যুর সঙ্গে নয়।

হামাসের নেতৃত্বাধীন হামলাকে একটি ‘ভূমিকম্প’ অভিহিত করে নাসরাল্লাহ ইসরায়েল সম্পর্কে তার পুরোনো বর্ণনা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, ইসরায়েল ‘মাকড়সার জালের চেয়েও ভং্‌গুর’।

ইসরায়েল বলছে, ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের হাতে প্রায় এক হাজার বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। নাসরাল্লাহ দাবি করেছেন, ইসরায়েলি বাহিনী বেসামরিক নাগরিকদের ‘গণহারে হত্যা’ করেছে।

তিনি বলেছেন, হামাসকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করার ইসরায়েলি উদ্দেশ্য অসম্ভব। মস্তিষ্ক মাথায় থাকা কেউ এমন লক্ষ্য নির্ধারণ করবে?

নাসরাল্লাহ বর্তমান সংঘাতকে লেবাননের বিরুদ্ধে ২০০৬ সালের ইসরায়েলের যুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করেছেন। ওই সময়  ইসরায়েলিরা আলোচনার পরিবর্তে একটি সামরিক সমাধান চেয়েছিল এবং তারা হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধে জড়ায়। যা অচলাবস্থায় শেষ হয়েছিল। তিনি বলেছেন, এই যুদ্ধের শেষ হবে গাজার বিজয়ে এবং শত্রুর পরাজয়ে।

নাসরাল্লাহ মানুষকে সতর্ক করেছেন দুটি স্বল্পমেয়াদি লক্ষ্যের প্রতি মনোযোগ না হারাতে। এগুলো হলো- গাজায় যুদ্ধের অবসান এবং হামাসসহ গাজার প্রতিরোধ গোষ্ঠীর বিজয়।

তিনি বলেন, এই ধরনের বিজয় হবে মিসর, জর্ডান, সিরিয়ার জনগণসহ সব মানুষের জন্য। সবার ঊর্ধ্বে হলো এটি লেবাননের জন্য একটি জাতীয় দেশাত্মবোধের স্বার্থ।

তিনি আরও বলেন, আরব ও মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর যুদ্ধ অবসানের উদ্যোগ নিতে কোনও ছাড় দেওয়া উচিত হবে না। তাদের উচিত ইসরায়েলে তেল ও খাদ্য রফতানি বন্ধ করা।

৮ অক্টোবর চলমান সংঘাতে হিজবুল্লাহ জড়িয়েছে বলে দাবি করেছেন নাসরাল্লাহ। তিনি বলেছেন, ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে লেবানন সীমান্তে প্রতিদিন গুলিবিনিময় তেমন কিছু মনে না হলেও খুব গুরুত্বপূর্ণ। যা ১৯৪৮ সালের পর বিরল ঘটনা। এটিই শেষ নয়। এখন পর্যন্ত ৫৭ জন হিজবুল্লাহ যোদ্ধা নিহত হয়েছেন বলেও দাবি করেছেন তিনি।

ইাসরাল্লাহ আরও দাবি করেছেন, হিজবুল্লাহ দিন দিন তাদের কার্যক্রম বাড়িয়ে চলেছে এবং ইসরায়েলকে গাজা বা অধিকৃত পশ্চিম তীরের পরিবর্তে লেবানন সীমান্তের কাছে সেনা মোতায়েন রাখতে বাধ্য করছে। গাজায় যুদ্ধের অবসান এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামাসের বিজয় নিশ্চিত করা হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর প্রধান লক্ষ্য।

ইসরায়েলকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেছেন, আমি ইসরায়েলিদের বলছি, আপনারা যদি লেবাননের বিরুদ্ধে একটি আগাম আক্রমণ করার কথা ভেবে থাকেন, তবে তা হবে আপনাদের সবচেয়ে বড় বোকামিপূর্ণ ভুল।

Leave a Reply

Your email address will not be published.