বিএনপি চায় অবরোধের মাধ্যমেই জনসমর্থন বাড়াতে

প্রশান্তি ডেক্স ॥ ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশে পুলিশের হামলা, দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও সরকার পতনের এক দফা দাবিতে গত তিন দিন ধরে সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। এই কর্মসূচির সমর্থনে ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। ঢাকায় অবরোধ কর্মসূচিতে বিএনপি নেতাকর্মীদের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখা না গেলেও দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় দলের নেতাকর্মীরা বিপুল উৎসাহে মাঠে নেমেছেন।

বিএনপি সূত্র বলছে, এবার অল্প সময়ের ব্যবধানে টানা কর্মসূচি দিয়ে যাবে দল। দুই দিন বিরতি দিয়ে আবার যে অবরোধ কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে, তার মাধ্যমে জনগণকে আরও সম্পৃক্ত করতে হবে। জনসমর্থন নিয়েই দাবি আদায়ে আরও কঠিন কর্মসূচি নিয়ে আসা হবে। এক্ষেত্রে ঘেরাও কর্মসূচিও আসতে পারে।

৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত তিন দিনই দেশের বিভিন্ন এলাকায় মহাসড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে, অবস্থান নিয়ে ও বিক্ষোভ মিছিলের মাধ্যমে কঠোর অবরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা। এসময় পুলিশের সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় তাদের সংঘর্ষও হয়। এতে আহত ও নিহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

অবরোধে নাশকতার অভিযোগ উঠেছে বিএনপির বিরুদ্ধে। তবে দলটির দাবি, হয়রানি করার জন্য বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা দেওয়া ও আটক করা হচ্ছে।

এদিকে বিএনপির ডাকা অবরোধকে কেন্দ্র করে নানা শঙ্কা কাজ করেছে সাধারণ জনগণ ও শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে। বিশেষ করে এক দিনের হরতাল ও গত তিন দিনের অবরোধে যে পরিমাণ গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে এতে আতঙ্কে আছেন পরিবহন শ্রমিক ও মালিকরা। রাজধানী ও মহাসড়কে এই ভয়ের প্রতিফলন দেখা গেছে। অবরোধের তিন দিন ঢাকার রাস্তায় গণপরিবহনের উপস্থিতি ছিল একেবারেই কম। ব্যক্তিগত গাড়িও তেমন রাস্তায় নামেনি।

এছাড়া ঢাকা ছেড়ে যাওয়া ও ঢাকায় প্রবেশ করার মতো মানুষের সংখ্যাও কম ছিল বিভিন্ন বাস টার্মিনালে। অধিকাংশ দূর পাল্লার বাস টার্মিনাল ছেড়ে যায়নি। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতাদের বাসও রয়েছে। যদিও বাস মালিকরা বলছেন, যাত্রীর অভাবে বাস ছাড়ছেন না তারা। ট্রেন ও নৌপথ স্বাভাবিক থাকলেও যাত্রীর সংখ্যা কম ছিল।

এদিকে পুলিশের বাধায় রাজপথে টানা অবস্থানে থাকতে না পারলেও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচিকে সফল বলছে বিএনপি ও সমমনা অনান্য দল। তাদের দাবি, জনগণ স্বতস্ফূর্ত সমর্থন জানিয়ে এই অবরোধ সফল করেছে। ঢাকা কার্যত বিচ্ছিন্নই ছিল।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, বিএনপির আর পিছু ফেরার সময় নেই। হামলা -মামলা, গ্রেফতার করে আন্দোলন স্তব্ধ করতে পারবে না। সিনিয়র নেতাদের গ্রেফতার করে যদি আওয়ামী লীগ মনে করে বিএনপির আন্দোলনে নেতৃত্বশূন্য করবে, তাহলে মনে রাখতে হবে দলের প্রতিটি কর্মীই নেতার ভূমিকা পালন করে এ আন্দোলনে সফল করবে।

তিনি আরও বলেন, জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। আমরা শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্বাসী এবং সেটাতেই অটল আছি। এদিকে ভার্চুয়াল এক বার্তায় দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানান, ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ, শান্তিপূর্ণ হরতাল ও অবরোধকে কেন্দ্র করে ৪ হাজার ৫৫৫ জনের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলা হয়েছে ৯৬টির বেশি। এই কয়েকদিনে আহতের সংখ্যা অন্তত ৩ হাজার ৪৭৬ জন এবং ৮ জনের মৃত্য হয়েছে।

রিজভী বলেন, কোনও আন্দোলন সফল হয় না, যদি জনগণের সমর্থন না থেকে। জনগণের সমর্থনের কারণেই আজ তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচি সফল হয়েছে। বিএনপির এক দফার ভিত্তিতে যে আন্দোলন, এটা যে সঠিক, এই আন্দোলন যে যথার্থ তা এই অবরোধ কর্মসূচিতে মানুষের সমর্থনের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে। বিএনপির সঙ্গে যুগপতে থাকা জোট গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক দল বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল বলেন, জনগণ হয়তো রাস্তায় নেমে সমর্থন জানায়নি। কিন্তু তাদের রাজনৈতিক ও নৈতিক সমর্থন ছিল। তাদের সমর্থন ছিল বলেই অবরোধ সফল হয়েছে। ঢাকা বিচ্ছিন্ন ছিল। এখন আগামীতে মানুষকে আরও কীভাবে সম্পৃক্ত করা যায় সেটা আমাদের লক্ষ্যের মধ্যে আছে। আমরা আরও কঠিন কর্মসূচি নিয়ে আসবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published.