বাআ ॥ সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড যেসব বিরোধী দলীয় নেতাদের চোখে পড়ে না, তাদের ডাক্তার দেখানোর পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সঙ্গে প্রথমবারের মত রেল সংযোগের উদ্বোধন করে তিনি বলেছেন, “আমি জানি যে আমাদের বিরোধী দল, তারা আমাদের উন্নয়নটা চোখে দেখে না, এগুলো বলার কিছু নাই। চোখ থাকতে যারা অন্ধ হয় তাদের আর কী বলব।
“তাদের একটা পরামর্শ দিতে পারি- আমি কিন্তু ঢাকায় খুব আধুনিক আই ইন্সটিটিউট করেছি, চোখ থাকতেও যারা অন্ধ তারা সেই আধুনিক আই ইন্সটিটিউটে যেয়ে চোখটা দেখিয়ে আসতে পারেন। মাত্র ১০ টাকার টিকিট লাগে, বেশি লাগে না। আসলে তাদের চোখের দোষ না, মনের দোষ।”
গত শনিবার কক্সবাজারের আইকনিক রেলস্টেশন থেকে ১০২ কিলোমিটার দীর্ঘ দোহাজারী-কক্সবাজার সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ রেলপথের উদ্বোধন করেন সরকারপ্রধান। বাঁশি বাজিয়ে ও সবুজ পতাকা নেড়ে নতুন ট্রেনের যাত্রা উদ্বোধন করেন। এর মাধ্যমে ট্রেনযোগে কক্সবাজার যেতে দেশবাসীর দীর্ঘদিনের যে আকাঙ্খা ছিল, সেটিই বাস্তবে রূপ পেল।
কক্সবাজার রেল স্টেশন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় এই রেলযোগাযোগের সুদূরপ্রাসারী তাৎপর্য তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। এর মাধ্যমে দেশের পর্যটনের ক্ষেত্রে বিরাট পরিবর্তন আসবে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি মনে করি আজকের দিনটা বাংলাদেশের জনগণের জন্য একটা গর্বের দিন। রেল সংযোগ করতে পেরে সত্যিই আমি খুব আনন্দিত। আমি জানি, দীর্ঘদিন ধরে এই অঞ্চলের মানুষের একটা দাবি ছিল। “রেলে কক্সবাজার আসা যাবে এটা অনেকের আকাঙ্খা ছিল। আজকে আমরা সেটা করেছি, এটা হবে প্রথম মর্যাদার প্রকল্প।”
তিনি বলেন, “যমুনা সেতুর উপর দিয়ে সড়কের সঙ্গে যেহেতু রেল করে দিয়েছি, আমরা চাই উত্তরবঙ্গ পঞ্চগড় থেকে কক্সবাজার, কক্সবাজার থেকেও পঞ্চগড় যেন রেলে আসতে পারে। সেই ব্যবস্থাটাও করতে হবে। সুন্দরবন থেকেও যেন কক্সবাজার আসতে পারে সেই ব্যবস্থাও করতে পারব।”
শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা এখন অপেক্ষা করে থাকব, পঞ্চগড় থেকে কক্সবাজার, অথবা রাজশাহী থেকে কক্সবাজার আবার দক্ষিণ অঞ্চলের সুন্দরবন থেকে কক্সবাজার, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুরই বাদ যাবে কেন, সমগ্র বাংলাদেশ থেকেই যেন আসা যায়, সেই ব্যবস্থাটা আমরা নেব। কক্সবাজারবাসীকে আমরা বলব আমাদের অঞ্চলেও যাবেন, বেড়াতে যাবেন, ঘুরতে যাবেন। আমি বিশ্বাস করি পর্যটন ক্ষেত্রে বিরাট পরিবর্তন আসবে।”
সরকারপ্রধান বলেন, “সেই ছোট বেলা থেকে শুনতাম চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত রেললাইন ছিল, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রেললাইন কবে আসবে। আজকে কক্সবাজার পর্যন্ত করা হয়েছে, এটা রামু পর্যন্ত করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বা আঞ্চলিক যোগাযোগের মাধ্যমে আসতে চাই, ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের সাথে আমরা সংযুক্ত হতে চাই। কাজেই সেটা মাথায় রেখে পরিকল্পনাটা নেওয়া হয়েছে।”
রেলপথ ব্যবহারে যত্নবান হওয়ার পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশ গত পনের বছরে বদলে গেছে। রেল থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট সবকিছুই কিন্তু উন্নয়ন করেছিলাম। রেলকে আমরা গুরুত্ব দিয়েছি, যেন খুব অল্প খরচে সাধারণ মানুষ চলাফেরা করতে পারে। সেভাবে চিন্তা করেই রেলকে গুরুত্ব দিয়েছি।
“আমি অনুরোধ করব, অত্যন্ত আধুনিক রেলস্টেশন করে দিয়েছি, যেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে। যেখানে-সেখানে যত্রতত্র ময়লা না ফেলা, রেলস্টেশন যেন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে। কোনো জিনিস যেন হাত দিয়ে নষ্ট না করে। নিজেদের আপন সম্পদ মনে করে যত্ন নিয়ে ব্যবহার করবেন।”
বিরোধীদলের আন্দোলনে যানবাহনে আগুন দেওয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, “এই দুর্বৃত্ত, তাদের আসলে চোখ না, তাদের মনই অন্ধকার। কাজেই এদের ব্যাপারে সকলকে সাবধান থাকতে হবে। এরা ধ্বংস জানে, সৃষ্টি করতে পারে না। আমরা সৃষ্টি করি, ওরা ধ্বংস করে। কিন্তু এই ধ্বংস যেন করতে না পারে। মানুষকে পুড়িয়ে মারবে এটা সহ্য করা যায় না।”
রেলসম্পদ একসময় অবহেলিত ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “বাংলাদেশটা আমাদের, দেশটাকে আমরা চিনি, আমরা জানি এর কী উন্নতি করতে হবে। ওই একজন-দুজন বাইরে থেকে এসেই আমাদের উপর খবরদারি আর আমাদেরকে পরামর্শ দেবে, সেটা হয় না। রেলে ওয়াইফাই দিয়ে দেব, রেলে বসে বসে যাতে কাজ করতে পারে।
“এই রেল সম্পদ অবহেলিত ছিল, আমরা এসে দেখলাম অনেকগুলো রেললাইন বন্ধ, রেল স্টেশন বন্ধ। কারণ পদ্মাসেতুর অর্থ যখন বন্ধ করে দিয়েছিল, তাদেরই উপদেশ ছিল এই দেশে রেল চলবে না, রেল লাভজনক না। রেলে সাধারণ মানুষ চলে, সস্তায় পণ্য পরিবহন হয়, এই ক্ষেত্রে সবসময় লাভ-লোকসানের হিসাব করা যায় না, মানুষের সেবাটাই বড়।”
মানুষের সেবার বিষয়টি বিবেচনা করেই সরকার কাজ করে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা যখনই কোনো কাজ করি আমরা সেটাই বিবেচনা করি, মানুষকে আমরা কতটা সেবা দিতে পারি। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম রেলের আলাদা মন্ত্রণালয় করব, কারণ এটা ছিল সড়ক সেতুর সঙ্গে সংযুক্ত। আলাদা মন্ত্রণালয় করে আলাদা বাজেট দেওয়া শুরু করলাম। সারা বাংলাদেশকে এই নেটওয়ার্কে নিয়ে আসলাম।
“পয়ষট্টি সালে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ হয় সেই সময় বাংলাদেশ কিন্তু সম্পূর্ণ অরক্ষিতই ছিল। তার পরেও বাংলাদেশের সাথে রেলের সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তার ফলে আমাদের ব্যবসা বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন, কক্সবাজারের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, রেলপথ মন্ত্রণালয় বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব হুমায়ুন কবির, রেলওয়ের মহাপরিচালক কামরুল হাসান, দোহাজারী কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণকাজের প্রকল্প পরিচালক মো. সুবক্তগীন, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন জিন্টিং।