বাআ ॥ দেশের মানুষকে ‘পুড়িয়ে হত্যার মত’ সন্ত্রাস-নৈরাজ্য চালিয়ে কোনো কিছু অর্জন করা যায় না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সন্ত্রাসের পথ ছেড়ে মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত হতে ‘অগ্নিসন্ত্রাসীদের’ আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বাসস জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার সকালে সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে ঢাকা সেনানিবাসের আর্মি মাল্টি পারপাস কমপ্লেক্সে ‘মুক্তিযুদ্ধে খেতাব পাওয়া নির্বাচিত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা প্রদান’ অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, “দেশের মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করে কিছুই অর্জন করা যায় না। এটা অন্যায়। কোনো কিছু অর্জন করতে হলে জনগণের শক্তির প্রয়োজন। আমি চাই তাদের (অগ্নিসন্ত্রাসী) চেতনা জাগ্রত হোক। সে জন্য অগ্নিসন্ত্রাসের পথ পরিহার করে জনগণের কল্যাণে কাজ করার এবং তাদের পাশে থাকা প্রয়োজন।“
সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির গত ২৮ অক্টোবরের সমাবেশ পন্ড হওয়ার পর থেকে যে হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি চলছে, তাতে চোরাগোপ্তা হামলা চলছে শুরু থেকে। হরতাল বা অবরোধ- দুই ধরনের কর্মসূচিতে প্রায় প্রতিদিনই যানবাহনে আগুন দেওয়া হচ্ছে ঢাকাসহ দেশের নানা জায়গায়। এই পরিস্থিতির সঙ্গে একাত্তরের যুদ্ধ পরিস্থিতির সাদৃশ্য খুঁজে পাচ্ছেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “অগ্নিসন্ত্রাস, জ্বালাও-পোড়াও মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তোলে। আমি জানি না, একজন মানুষ কীভাবে আরেকটা জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারে। এমনটি দেখেছিলাম ’৭১ সালে। তখন পাকিস্থানি হানাদার বাহিনী বাড়িতে আগুন দিত। আর মানুষ বেরিয়ে এলে সঙ্গে সঙ্গে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারত।
“দুঃখের বিষয়, এরপর ২০১৩-১৪ সালে এবং এখন ইদানিং সেই অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করেছে। পোড়া মানুষগুলোর ক্ষতবিক্ষত দেহ এবং তাদের আত্মচিৎকার ও পরিবারগুলো কী অবস্থায় আছে।“
দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকার কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, “৭ মার্চের ভাষণ এ দেশের মানুষকে উজ্জীবিত করেছিল, সেই ভাষণও নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু আজ সেই ভাষণ আন্তর্জাতিক প্রামাণ্য দলিল হিসেবে স্থান পেয়েছে।“
জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার সাথে সাথে মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণাদায়ী ‘জয় বাংলা’ ে¯্লাগানও হারিয়ে গিয়েছিল, সে কথাও বলেন বঙ্গবন্ধুর মেয়ে শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, পঁচাত্তরের পর হারাতে বসা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার আবার ফিরিয়ে আনতে পেরেছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষায় দেশের আনাচে কানাচে থাকা গণকবর সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ গড়ে তোলার পাশাপাশি প্রতিটি উপজেলায় সরকারি উদ্যোগে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স তৈরি করা হয়েছে বলে জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সগুলোতে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন স্মৃতি ধরে রাখার জন্য জাদুঘর তৈরি করা হবে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে দেশের স্বাধীনতা সংগামের ইতিহাস চর্চার তাগিদ দেন সরকারপ্রধান।
প্রধানমন্ত্রী এ অনুষ্ঠানে ২০২২-২৩ সালে সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ শান্তিকালীন পদকপ্রাপ্ত সদস্যদের হাতে পদক তুলে দেন। এর আগে সকালে ঢাকা সেনানিবাসে শিখা অনির্বাণে ফুল দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শিখা অনির্বাণে পৌঁছলে সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম. নাজমুল হাসান, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আবদুল হান্নান এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান তাকে স্বাগত জানান।
ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে যান। সেখানে তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক এবং তিন বাহিনীর প্রধান তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।