প্রশান্তি ডেক্স ॥ বরাবরের মত এবারও বিএনপি সেই একই চেহারা এবং কার্যক্রম পরিলক্ষিত হয়ে উঠল। তারা জনগণের এবং গণতন্ত্রেও ও শান্তির আবরণে নিজেদেরকে নিয়োজিত করতে পারলোনা এমনকি নিজেদেরকে জিবিত রাখার কৌশলে পরাজিত ও পরাভুত হলো। তাই এই দা্বদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দৌঁড়ে ছিটকে পড়ল।
বিএনপি ও তাদের সমমনা কিছু দলকে ছাড়াই চলতে শুরু করেছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ট্রেন। সরকারবিরোধী আন্দোলনে থাকা এসব দলের বর্জনের মধ্য দিয়েই এই নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় শেষ হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) বিকাল ৪টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ সময় ছিল। এই নির্বাচনে লড়তে সারা দেশে ৩০০টি আসনে দুই হাজার ৭৪১ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
দেশের ৪৪টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ ৩০টি দলের মনোনীত ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এসব মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
এদিকে, এবারের সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় বাড়ানোর সুযোগ নেই বলে জানিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। বিদ্যমান তফসিল অনুযায়ী এ নির্বাচন হবে বলেও জানানো হয়েছে। এর ফলে নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেওয়ার আর সুযোগ নেই।
গংশ্লিষ্টরা জানান, একাদশ সংসদ নির্বাচনের তুলনায় এবার দল অংশ কম নেওয়ায় প্রার্থীর সংখ্যা কমেছে। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে ৩৯ দল অংশ নিয়েছিল। তখন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন তিন হাজার ৬৫জন। ওই নির্বাচনের চেয়ে এবার ৩২৪ জন কম মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
ইসি জানিয়েছে, জমা হওয়া মনোনয়নপত্র আগামী ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর যাচাই-বাছাই করবেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল দায়েরের সময়সীমা ৫-৯ ডিসেম্বর। আপিল নিষ্পত্তি ১০-১৫ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ আগামী ১৭ ডিসেম্বর।
মনোনয়নপত্র যাচাইয়ে অনেকের প্রার্থিতা বাতিল হয়। এ ছাড়া অনেকেই প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। এর ফলে চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্ধিতায় প্রার্থী সংখ্যা আরও কমে যাবে।
সূত্র জানিয়েছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যেসব দল প্রার্থী দিয়েছে তার মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জাতীয় পার্টি (জেপি), বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল), কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, জাতীয় পার্টি (একাংশ), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, জাকের পার্টি, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, গণফোরাম, গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল), বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (মুক্তিজোট), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), বাংলাদেশ কংগ্রেস, তৃণমূল বিএনপি, গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশ জাসদ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি)।
নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করা দলগুলো হলো- বিএনপি, এলডিপি, খেলাফত মজলিস, সিপিবি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জমিয়তে উলামায়ে বাংলাদেশ, ইনসানিয়াত বিপ্লব, জাতীয় গণতান্ত্রিক আন্দোলন বা এনডিএম, জেএসডি (রব), বাসদ, বিজেপি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (হারিকেন) ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি- বাংলাদেশ ন্যাপ (গাভী)।
নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, মনোনয়নপত্র জমার সময় আর বাড়ানো হচ্ছে না এবং সময়সীমা বাড়ানোর আর কোনও সুযোগ নেই।
ইসির সংক্ষিপ্ত তালিকায় দেখা গেছে, দুই হাজার ৭৪১ প্রার্থীর মধ্যে ফেনী-৩ আসনে সর্বোচ্চ ৪০ জন প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বগুড়া-৭ আসনে ২৫ ও ঢাকা-৫ আসনে তৃতীয় সর্বোচ্চ ২১ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আর সর্বনিম্ন দিনাজপুর-২, দিনাজপুর-৪, রংপুর-৪, সিরাজগঞ্জ-৪, ভোলা-১, বরিশাল-১, ঝালকাঠি-২, শেরপুর-২,ফরিদপুর-২, মাদারীপুর-১, সিলেট-৪ ও বান্দরবানে চার জন করে প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেন।
এদিকে, তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় শেষ হওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায় নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ইসি সচিব বলেন, নির্বাচন কমিশন মনে করে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিলের সময়সীমা বাড়ানোর কোনও সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, প্রার্থীরা রিটার্নিং ও সহকারী কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। কয়টি দল কোন আসনে, মোট কত প্রার্থী অংশগ্রহণ করছে তা জানাতে আরো সময় লাগবে।
আচরণবিধি প্রতিপালন নিয়ে সচিব জাহাঙ্গীর বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সাক্ষাৎ করেছিলেন। বিশেষ করে আইজিপি সামগ্রিক বিষয় জানিয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কোনও নির্দেশনা রয়েছে কি-না তা জেনে নিয়েছেন। পরে সে অনুযায়ী কার্যক্রম গ্রহণ করবেন।
তিনি বলেন, এ ছাড়া কিছু কিছু প্রার্থী কোনও কোনও জায়গায় আচরণবিধি ভঙ্গ করায় আমাদের নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি তাদের তলব করেছে। রিটার্নিং কর্মকর্তার মাধ্যমে নির্বাহী হাকিমরাও কাজ করছেন। তারা তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন।
বেশ কয়েকটি দল এখনও মনোনয়নপত্র জমা দেয়নি। ইতোমধ্যে সময় শেষ হয়েছে, আর কোনও সুযোগ আছে কি-না? এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, সময়সীমা অতিক্রম হয়েছে বিধায় এই সীমা বাড়ানোর আর কোনও সুযোগ নেই।
গত ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন সিইসি কাজী হাবিুবল আউয়াল। তফসিল অনুযায়ী, প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর রিটার্নিং কর্মকর্তারা তা বাছাই করবেন ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তি ৫ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ করবেন ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনি প্রচার চলবে ২০২৪ সালের ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। আর ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি (রবিবার)।
এর আগে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর। জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসেছিল ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি। সংবিধান অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। এই নির্বাচনের ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। আর ভোটকেন্দ্র রয়েছে ৪২ হাজার ১০৩টি।