প্রশান্তি ডেক্স ॥ দেশের সফটওয়্যার ও সেবাপণ্যের রফতানি আয় বাড়ছে না। তিন বছর ধরে এ খাতের প্রবৃদ্ধি শূন্য। ২০২১ সালের মধ্যে সফটওয়্যার রফতানির টার্গেট ছিল ৫ বিলিয়ন ডলার। টার্গেট মিস হয়েছে। পরে আবারও টার্গেট করা হয়, ২০২৫ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলারের রফতানির। সেটাও মিস হবে বলে আশঙ্কা তথ্যপ্রযুক্তি খাত সংশ্লিষ্টদের।
বিদায়ী অর্থবছরে সফটওয়্যার ও সেবাপণ্য রফতানি হয়েছে ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের। ফলে আর এক বছরের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলারের অবশিষ্টাংশ আয়ের কোনও সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, এবার নতুন টার্গেট হতে পারে ২০৩১ সাল।
নতুন সাল টার্গেট হিসেবে নির্ধারিত হলেও এর সঙ্গে অনেক বিষয় সংশ্লিষ্টরা যুক্ত করতে বলেছেন তারা। বলেছেন, শুধু টার্গেট নির্ধারণ করলেই হবে না। সেই টার্গেট পূরণ করতে হলে অনেক কাজ করতে হবে। এদিকে সফটওয়্যার রফতানিতে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা (১০ শতাংশ) দিয়েও তেমন কোনও কাজ হয়নি। সফটওয়্যার রফতানি বাড়েনি কাঙ্খিত পরিমাণে। এছাড়া প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের জন্য বরাদ্দ, তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক অবকাঠামো নির্মাণ, পণ্য সরবরাহ সহজলভ্য করতে বিনিয়োগ আকর্ষণসহ নানান উদ্যোগের পরও এ খাতে রফতানি বাড়ছে না।
সরকারের ২০১৬ সালে প্রকাশিত পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২১ সালের মধ্যে আইসিটি খাতে পণ্য রফতানি ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার পরিকল্পনা জানানো হয়েছিল। এ সময়ের মধ্যে ২০ লাখ আইসিটি পেশাজীবীও তৈরি করার পরিকল্পনা জানানো হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে সফটওয়্যার ও সেবাপণ্যের রফতানির কোনও টার্গেটই পূরণ করা যায়নি। ২০২১ সালে প্রণীত অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ২০২৫ সালের মধ্যে আবারও ৫০০ কোটি ডলারের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসের (বেসিস) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত দেশে আইসিটি পণ্য রফতানি হয়েছে বছরে গড়ে ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের। এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১০০ কোটি ডলার তথা ১ বিলিয়ন ডলার এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ০ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের সফটওয়্যার ও সেবাপণ্য রফতানি করা হয়।
জানতে চাইলে দেশের সফটওয়্যার ও সেবাপণ্যের নির্মাতা ও রফতানিকারকদের সংগঠন বেসিসের সভাপতি রাসেল টি আহমেদ বলেন, ‘এখানে সমন্বিত পরিকল্পনার অভাব দেখি। ঠিকভাবে প্ল্যানিংটা হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘২০২৫ সাল ভুলে গিয়ে ২০৩১ সালকে টার্গেট করে আমাদের এগোতে হবে।’ তিনি মনে করেন, আমরা যা করেছি ভালো করেছি। কিন্তু আমরা কি আরও ভালো করতে পারি না? প্রশ্ন করেন তিনি। যেটুকু ভালো করেছি সেটুকুর জন্য আত্মতৃপ্তিতে ভুগলে চলবে না।
‘সরকার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা সেট করেছে। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করলেই তো হবে না। সেটা অর্জন করতে হবে, যা আমরা পারিনি,’ বললেন, রাসেল টি আহমেদ। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কিছু কিছু জায়গায় ভুলভ্রান্তি আছে। সেগুলো চিহ্নিত করে নতুন পদক্ষেপ নিতে হবে।’ তিনি মনে করেন, লক্ষ্যপূরণের জন্য কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। আমরা বিদেশি বিনিয়োগ পাচ্ছি না। বিদেশে মার্কেটিংও করতে পারছি না। বিদেশি কোম্পানি কেনা যাচ্ছে না, অথচ আমাদের কেনার সামর্থ্য রয়েছে। পলিসি লেভেলে কিছু সমস্যা রয়েছে। এগুলো ঠিক করতে পারলে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।
সফটওয়্যার রফতানির খতিয়ান: বেসিস সূত্র জানায়, বাংলাদেশ থেকে ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো ২৮ লাখ ডলারের সফটওয়্যার রফতানি হয়। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে ২০০৩ সাল থেকে বাংলাদেশ সফটওয়্যার রফতানি শুরু করে। ওই বছর রফতানির পরিমাণ ছিল ৭২ লাখ ডলার। ২০০৪-২০০৫ অর্থবছরে রফতানির পরিমাণ ছিল ১ কোটি ২৬ লাখ ডলার। এরপর ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরে ২ কোটি ৭০ লাখ ডলার, ২০০৬-০৭ অর্থবছরে ২ কোটি ৬০ লাখ ডলার ও ২০০৭-২০০৮ অর্থবছরে ২ কোটি ৪৮ লাখ ডলারের সফটওয়্যার রফতানি হয়। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে সফটওয়্যার রফতানি আয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে হয় ৩ কোটি ২৯ লাখ ডলার। ২০০৯-১০ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৩ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। ২০১০-১১ অর্থবছরে এসে ২৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে সফটওয়্যার রফতানি দাঁড়ায় সাড়ে চার কোটি ডলারে।
২০১২-১৩ অর্থবছরে সফটওয়্যার রফতানি থেকে আয় প্রথমবারের মতো ১০০ মিলিয়ন (১০ কোটি) ডলার অতিক্রম করে। ওই অর্থবছরে মোট রফতানির পরিমাণ ছিল ১০ কোটি ১৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার। এই আয় বেড়ে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১২ কোটি ৪৭ লাখ ২০ হাজার ডলার ও ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে প্রায় ১৩ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এই খাত থেকে সর্বোচ্চ ৭০০ মিলিয়ন ডলার রফতানি আয় হয়েছে। যেসব দেশে সফটওয়্যার রফতানি : বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের ৮০টিরও বেশি দেশে সফটওয়্যার ও সেবাপণ্য রফতানি করছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দেশ হলো-যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, ডেনমার্ক, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, কানাডা ইত্যাদি। অপরদিকে ৪টি শীর্ষ ইউরোপীয় দেশ হলো-যুক্তরাজ্য, ডেনমার্ক, জার্মানি ও নেদারল্যান্ডস। সফটওয়্যার রফতানি করে যা আয় হচ্ছে, তা জিডিপির ১ দশমিক ২৫ শতাংশ।