প্রশান্তি ডেক্স ॥ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) নেতারা অনানুষ্ঠানিক পঞ্চম দফা বৈঠক করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে। এতে নির্বাচন এবং ‘আসন সমঝোতা’ নিয়ে আলোচনা ‘সফল’ হওয়ার কথা বললেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি দল দুটি। বিষয়টি দুই একদিনের মধ্যে আবারও বৈঠক হবে এবং সেখানে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
সূত্রমতে, আগামী নির্বাচনে আসন সমঝোতা নিয়ে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতারা সবশেষ শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) রাতে বৈঠকে বসেন। সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদ ভবনে ভেতরে এক এমপির কার্যালয়ে বৈঠকটি শুরু হয়ে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চলে। এ সময় ৩০টির বেশি আসনে লাঙ্গলের প্রার্থীকে বিয়জী করতে নৌকার প্রার্থীকে নিষ্ক্রিয় করে রাখার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। ফলে দুই দলের কেউ-ই এ নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি।
বৈঠক অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের কাছে জানতে চাইলে বলেন, জাতীয় পার্টির সঙ্গে বৈঠক সফল হয়েছে। এ বিষয়ে শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) বিস্তারিত জানানো হতে পারে।
বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, বাহাউদ্দীন নাছিম ও সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম ছিলেন বলে জানা গেছে। তবে জাতীয় পার্টির কে কে ছিলেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে এক ব্রিফিংয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতীয় পার্টির সঙ্গে আলাপ আলোচনা চলছে। সবাই শুধু বিভিন্ন দলের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে কথা বলেন। এই সময়টাকে, আমাদের এই অ্যালায়েন্সটাকে আমরা যতটা রাজনৈতিক মূল্য দিচ্ছি, আসনের ব্যাপারটা কম।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় পার্টি তাদের নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করবে। ১৪ দলে কিছু নৌকা দেবো। এরইমধ্যে আমি ১৪ দলের সমন্বয়ককে আমাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছি। নির্বাচন তারা সবাই করুক, তাদের দলের প্রতীক নিয়ে, সাতটা নির্বাচনি এলাকায় আমরা নৌকার ছাড় দিতে পারবো। এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। গতকালই আমরা জানিয়ে দিয়েছি। তিনি তো গণমাধ্যমকেও বলে দিয়েছেন।
আগের দিন বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমাদের শতভাগ আস্থা রয়েছে। বৈঠকে ক্ষমতাসীনদের ব্যবহারে মনে হয়েছে আমাদের ওপরও তাদের যথেষ্ট আস্থা রয়েছে।’ আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচনের আগে দফায় দফায় বৈঠক চলবে বলেও জানান তিনি।
এর আগে মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) রাতে বনানীর একটি বাড়িতে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাদের মধ্যে সবশেষে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম অংশ নেন। তাদের সঙ্গে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু প্রায় আড়াই ঘণ্টা বৈঠক করেন।
গত ৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে বৈঠক করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের, কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। পরদিন ৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় আবারও গণভবনে যান জি এম কাদের, আনিসুল ইসলাম মাহমুদসহ ছয়জন কো-চেয়ারম্যান ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। ওই দিন আওয়ামী লীগের এক নেতার গুলশানের বাসায় দলটির হাফ ডজন নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন জাতীয় পার্টির দুই নেতা। আওয়ামী লীগের সভাপতি ও দলটির নেতাদের সঙ্গে জাতীয় পার্টির নেতাদের এসব বৈঠক নিয়েও সরাসরি কিছু জানায়নি দল দুটি।
জাতীয় পার্টির এক সূত্র ‘আসন সমঝোতা’ নিয়ে আলোচনা করার বিষয়টি স্বীকার করলেও তা নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলছেন না আওয়ামী লীগের নেতারা। দুই একদিনের মধ্যে বিষয়টি স্পষ্ট হবে বলেও জানান তারা। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আমরা আশা করছি, এমন আলোচনা আগামীতে অব্যাহত থাকবে। একটা পজিটিভ দিকে আগাচ্ছে। সামগ্রিক বিষয়গুলো নিয়ে একটি ভালো আলোচনা হচ্ছে। একমত হয়ে আমরা সামনে আগাচ্ছি। দুই একদিনের মধ্যে একটা পরিচ্ছন্ন ধারণা দিতে পারব। সেটা যৌথভাবেই প্রকাশ করা হতে পারে।
এদিকে মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নিজের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত কয়েকজন নেতাকে নিয়ে গণভবনে যান বিরোধী দলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ। এসময় সঙ্গে ছিলেন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা, রওশনের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ, কাজী মামুনুর রশীদ, সাদ এরশাদ ও তার স্ত্রীসহ আরও কয়েকজন নেতা। এর আগেও গত ১৯ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন রওশন এরশাদ।