প্রশান্তি ডেক্স ॥ বিএনপির হুমকিতে নির্বাচন কমিশন মোটেও ভীত নয় বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। তিনি বলেন, ভোট বর্জনের ডাকে প্রার্থীদের মধ্যেও খুব একটা শঙ্কা নেই। উল্টো তারা আমাদের ভরসা দিয়েছেন। আতঙ্কিত না হতে আমাদের সাহস দিয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ঢাকা জেলার সংসদীয় আসনের প্রার্থীদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। নির্বাচন কমিশন সকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিকালে প্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
মো. আলমগীর বলেন, ভোট বর্জনের ডাকে প্রার্থীরা খুব একটা শঙ্কা দেখাননি। তারা আমাদের বলেছেন শঙ্কিত নন। তারা বলেছেন, এ বিষয়ে জনগণের কোনও সম্পৃক্ততা নেই। প্রার্থীরা আতঙ্কিত তো ননই, আমাদের উল্টো সাহস দিয়েছেন। আমরা যেন শঙ্কিত না হই, সেটা বলেছেন। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। ভরসা দিয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনও এ বিষয়ে মোটেও শঙ্কিত নয় বলে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন মো. আলমগীর। তিনি বলেন, নির্বাচনে কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। এই চ্যালেঞ্জ অন্য দেশেও থাকে। তবে চ্যালেঞ্জে আমরা মোটেও ভয় পাচ্ছি না।
নির্বাচনের সার্বিক পরিবেশ ও বিরোধী দলের আন্দোলন প্রশ্নে এই কমিশনার বলেন, আমি ১৪টি জেলা ঘুরে এসেছি। সেখানে আন্দোলনের কোনও লক্ষণই দেখিনি। যা দেখি সেটা কেবল মিডিয়ায় দেখি। এর বাইরে জেলাগুলো ঘুরে কোনও বাস্তবতা দেখিনি। স্বাভাবিক জীবনযাপন দেখেছি। মানুষ ভোটকে উৎসব হিসেবে নিয়েছে। নানা রকম মিছিল দেখেছি। নির্বাচনি জনসভা করতে দেখেছি। কিন্তু নির্বাচনের বিপক্ষে কোনও কিছু দেখিনি।
নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে তিনি বলেন, অনেক দল অংশ নিচ্ছে। তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকতে পারে। অংশগ্রহণকারী দলের মধ্যে আবার স্বতন্ত্র রয়েছে। তাদের মধ্যে প্রতিদ্বন্ধিতা হতে পারে। এটা নিয়ে মিটিংয়ে কথা হয়েছে। এসব নিয়ে উত্তেজনা হবে। তবে আনন্দের উত্তেজনা যেন বিষাদের উত্তেজনা না হয় সেটা নিয়ে কথা হয়েছে।
ঢাকা জেলার সংসদীয় আসনের প্রার্থীদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের বৈঠক (ছবি: ফোকাস বাংলা)
পুলিশ বলেছে ভোটবিরোধী কর্মসূচি তাদের জন্য ডাবল চ্যালেঞ্জ এ বিষয়ে ইসির মত কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, উন্নত বিশ্বে নির্বাচন নির্বাচন কমিশন করে না। পুলিশ থাকে না। ম্যাজিস্ট্রেট থাকে না। র্যাব থাকে না। সেখানকার পরিবেশ আর আমাদের পরিবেশ এক নয়। আমাদের এখানের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নির্বাচন ব্যবস্থাপনা, আইনশৃঙ্খলা এটা সবসময় থাকে। আর এবার যেহেতু একটি রাজনৈতিক দলসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে আসছে না, তাদের পক্ষ থেকে নির্বাচন বাতিলের যে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, সেগুলোর জন্য একটা চ্যালেঞ্জ আছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই কীভাবে সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করা যায় এবং ভোটাররা যাতে উৎসাহিত হয়ে ভোট দিতে আসে, সেই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা এখন পর্যন্ত দেখছি আনন্দমুখর পরিবেশ আছে।
এর আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকের আলোচনা সম্পর্কে আলমগীর বলেন, নির্বাচন করতে গেলে নানারকম চ্যালেঞ্জ থাকে। অন্যান্য দেশেও চ্যালেঞ্জ থাকে। এসব চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেগুলো মোকাবিলার জন্য তাদের যে পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের সেটা জানিয়েছে। আমাদের তাদের প্রস্তুতির বিষয়ে বলেছি, এটা ভালো প্রস্তুতি। এর বাইরে আমরাও কিছু পরামর্শ দিয়েছি। এগুলো কীভাবে সুন্দর সমন্বয় করা যায়, কোনও নাশকতামূলক ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াতে এবং তথ্য শেয়ার করার জন্য, যাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সময়মতো ব্যবস্থা নিতে পারে। ঘটনা ঘটানোর আগেই যাতে না ঘটানোর ব্যবস্থা নেওয়া যায়। এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা বলেছি নির্বাচনে যারা দায়িত্ব পালন করছেন তারা যেন অত্যন্ত নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করেন। নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে শুরু করে রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসারসহ যত রকম কর্মকর্তা-কর্মচারী এখানে কাজ করছেন, সবাই যেন সততা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে কাজ করেন, সেটা বলা হয়েছে। কোনও প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে যেন তারা কোনও ধরনের আচরণ না দেখায়।
প্রার্থীদের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে তিনি বলেন, ঠিকমতো প্রচার করতে পারবেন কিনা স্বতন্ত্র ও ছোট ছোট দলের প্রার্থীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তারা ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন কিনা, তাদের এজেন্টরা কেন্দ্রে থাকতে পারবেন কিনা এসব নানা বিষয় নিয়ে প্রশ্ন এসেছে। এখানে প্রশাসন ও ইসির পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে আপনাদের সব রকম সহযোগিতা করা হবে। আপনারা নিজেরা সেখানে থাকবেন। আপনাদের এজেন্টদের কোনও সমস্যা হলে প্রিজাইডিং অফিসারদের জানাবেন। তিনি সমাধান করতে না পারলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থাকবে, সেখানে পুলিশ থাকবে, র্যাব থাকবে, আর্মি থাকবে, বিজিবি থাকবে। তাদের জানাবেন।
তিনি জানান, আমরা এবার অনেক কমিটি ও সাবকমিটি করেছি। সেগুলো অতীতের নির্বাচনগুলোতে কখনও করা হয়নি। তারা এসব বিষয় মনিটরিং ও সমন্বয় করবেন। তারা প্রতিটি বাহিনী, সেন্টার ও নির্বাচনি এলাকার সঙ্গে আছেন। ফলে কোনও না কোনোভাবে এগুলো আমাদের নজরে আসবে। নজরে এলে আমরা আমাদের নিয়ম অনুযায়ী সেখানে ব্যবস্থা নেবো।