কী ভাবছে সরকার: বন্ধ থাকা ফেরি নিয়ে

প্রশান্তি ডেক্স ॥ নতুন রুটে ফেরি সার্ভিস চালুর পরিকল্পনা করেছে সরকার। মূলত বন্ধ থাকা ফেরিগুলো সচল রাখতে নতুন রুটের এই পরিকল্পনা। এরই মধ্যে অনেক ফেরি নতুন রুটে চালু করা হয়েছে। বাকিগুলো নিয়ে কাজ করছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। সরকার মনে করে, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে নতুন ও পুরোনো ফেরিগুলোর বিরতিহীন যাত্রা নিশ্চিত করা জরুরি, যা দেশের বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবে। কমবে দারিদ্র্য, নিশ্চিত হবে কর্মসংস্থান। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, সড়কে যানবাহনের গতি বাড়ানোর পাশাপাশি যানজট এবং ভোগান্তি কমাতে সারা দেশে শত শত সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। বিশেষ করে পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলাকে রাজধানীর সঙ্গে যুক্ত করেছে। ফলে একদিকে মানুষের সময়ের যেমন সাশ্রয় হচ্ছে, তেমনই পরিবহন ব্যয় কমে যাওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যও সহজ হচ্ছে। তবে সারা দেশে সড়ক পথের উন্নয়ন ও অসংখ্য সেতু নির্মাণের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে অনেক এলাকার ফেরি সার্ভিস। এ কারণে যেসব এলাকায় এ মুহূর্তে সেতু নির্মাণ সম্ভব নয়, সেখানে বন্ধ থাকা ফেরিগুলো চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র আরও জানিয়েছে, ইতোমধ্যে ১৯টি নতুন ফেরি রুট চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত রুটের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে জামালপুরের বাহাদুরাবাদ থেকে গাইবান্ধার বালাসী ঘাট, মানিকগঞ্জের আরিচা থেকে পাবনার নরাদহ, পিরোজপুরের বেকুটিয়া থেকে চরখালী, কক্সবাজার থেকে মহেশখালী, বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ থেকে হিজলা এবং আমতলী থেকে বরগুনা, কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী থেকে জামালপুর রুট। নতুন ফেরি রুট চালুর ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার তালিকায় আছে যমুনা নদীর কুড়িগ্রামের রৌমারী থেকে চিলমারী নৌরুট। এ রুটে ফেরি চালু হলে উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জের যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হবে।

জানা গেছে, বিআইডব্লিউটিসি’র আওতায় বর্তমানে ছয়টি রুটে ফেরি চলাচল করে। এগুলো হচ্ছে, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া, আরিচা-কাজিরহাট, শিমুলিয়া-বাংলাবাজার, শিমুলিয়া-মাঝিরকান্দি ও হরিণাঘাট, চাঁদপুর-শরীয়তপুর, ভোলা-লক্ষ্মীপুর, লাহারহার-ভেদুরিয়া। এর মধ্যে শিমুলিয়া-মাঝিরকান্দি ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরিতে গাড়ি পরিবহন করা হয় সবচেয়ে বেশি। এর বাইরেও যেসব ফেরি অন্যান্য নদীতে স্থাপন করা হয়েছে সেসব ফেরিতে গাড়ির চেয়ে মানুষ ও পণ্য পারাপার হয় বেশি।

বিআইডব্লিউটিসি’র তথ্য অনুযায়ী, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে বর্তমানে ২১টি ফেরি চলাচল করছে। এ রুটে মোট ফেরি আছে ২৯টি। আর বিআইডব্লিউটিসি’র বহরে মোট আছে ৫৩টি। এর মধ্যে ১০ থেকে ১৫টি ফেরির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। বহরে নতুন ফেরি যুক্ত হয়েছে ১২টি। নতুন ও পুরোনো সব ফেরিই নতুন রুটে চালুর পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

এদিকে সড়ক বিভাগ সূত্র বলছে, গত অক্টোবরে সারা দেশে একসঙ্গে ১০০টি সেতু চালু হওয়ার পর এক বছরের কম সময়ে আরও দেড়শ’ সেতু উদ্বোধন করা হয়েছে। এসব সেতু চালু হওয়ার আগে অনেক জায়গাতেই ফেরিতে গাড়ি ও মানুষ চলাচল করতো। সেতু চালুর মধ্য দিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া সেসব ফেরি যুক্ত হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। এর মধ্যে চালু করা হয়েছে সন্ধ্যা নদীতে ফেরি যোগাযোগ। এই ফেরিতে গাড়ি পার হয় কম। তবে মানুষ পার হয় বেশি। কারণ, নেছারাবাদ উপজেলাকে দুই ভাগে বিভক্ত করে রেখেছে এই সন্ধ্যা নদী। এই নদীতে ফেরি চালুর মধ্য দিয়ে সেখানকার মানুষের দুর্দশা কমেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ।

জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য পিরোজপুরের কালিগঙ্গা ও বেলুয়া এই দুটি নদীতে দুটি ফেরি চালুর সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কালিগঙ্গা নদীর একপাড়ে পিরোজপুর অপর পাড়ে নেছারাবাদ উপজেলার কলাপাছিয়া গ্রাম। সেখানকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি এই নদীতে একটি ফেরি চালু করা। পিরোজপুর জেলা শহরের সঙ্গে নেছারাবাদ উপজেলার সরাসরি যোগাযোগে এটি একটি বড় বাধা। বর্তমানে সেখানে নৌকা বা ট্রলারে করে মানুষ কালিগঙ্গা নদী পার হয়ে পিরোজপুর যাতায়াত করে। অপরদিকে বেলুয়া নদীর এক পাড়ে নেছারাবাদ উপজেলা ও অপর পাড়ে নাজিরপুর উপজেলা অবস্থিত। সেখানকার মানুষও দীর্ঘদিন ধরে খেয়া নৌকায় করে নদী পার হচ্ছেন।

জানতে চাইলে নাজিরপুর উপজেলার কলাবো দোয়ানিয়া ইউনিয়নের ডালিম চেয়ারম্যান জানান, বন্ধ হয়ে যাওয়া ফেরিগুলোর মধ্য দিয়ে একটি ফেরি বেলুয়া নদী পারাপারের ব্যবস্থা করা গেলে এ অঞ্চলের দুই উপজেলার মানুষের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। ব্যবসা- বাণিজ্যও সম্প্রসারিত হবে।

অপরদিকে নেছারাবাদ উপজেলার সোহাগদল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ জানিয়েছেন, কালিগঙ্গা নদী পারাপারে একটি ফেরি চালু করা হলে জেলা শহরের সঙ্গে নেছারাবাদ উপজেলার মানুষের যোগাযোগ সহজ হতো।

এ প্রসঙ্গে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘শুধু কালিগঙ্গা বা বেলুয়া নদী নয়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বহু নদী আছে, যা গুরুত্বপূর্ণ জনপদকে বিভক্ত করে রেখেছে। সরকারের পক্ষ থেকে গুরুত্ব অনুযায়ী বিভক্ত এসব জনপদকে একত্রিত করে সেখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটাতে বন্ধ ফেরিগুলো যুক্ত করবো। সে জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ কাজ করছে। এরই মধ্যে প্রাথমিক সমীক্ষাও অনেক দূর এগিয়েছে। দেশের অনেক স্থানেই ফেরি দিয়ে নতুন রুট চালু করা হয়েছে। আরও কিছু ফেরি যুক্ত হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published.