প্রশান্তি ডেক্স ॥ এবারের নির্বাচন নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত আছে বলে উল্লেখ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার যেহেতু নির্বাচন নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা চক্রান্ত, সে কারণে নির্বাচনের পরিবেশটা যাতে সুন্দর হয়, উৎসবমুখর হয় এবং প্রতিদ্বন্ধিতাপূর্ণ হয়। তিনি আরও বলেন, একটা অনুরোধ থাকবে, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ আপনারা বজায় রাখবেন। যার যার ভোট সে চাইবেন। জনগণ যাকে খুশি তাকে ভোট দেবে।… জনগণ যাকে ভোট দেবে সেটাই মেনে নেবেন। সেভাবেই এই নির্বাচন পরিচালিত হবে।
গত বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) বিকালে ছয়টি জেলায় আওয়ামী লীগের নির্বাচনি জনসভায় যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা। তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ভবন থেকে এসব জেলার সঙ্গে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন তিনি। ময়মনসিংহ বিভাগের জামালপুর ও শেরপুর জেলা, ঢাকা বিভাগের কিশোরগঞ্জ ও নরসিংদী জেলা এবং চট্টগ্রাম বিভাগের চাঁদপুর ও বান্দরবান জেলায় নির্বাচনি জনসভা হয়।
বক্তব্যের শুরুতে বিজয়ের মাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের বিষয়টি উল্লেখ করে তার কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে দেশের বিজয় নিয়ে এসেছে জনগণ। বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা এবং ১৫ আগস্টে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন তিনি।
বিদেশে শরণার্থী হিসেবে থাকার কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি কৃতজ্ঞতা জানাই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রতি। ১৯৮১ সালে (আওয়ামী লীগের) সম্মেলনে আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করেন তারা। দেশে ফিরে দায়িত্ব নিয়ে দলকে সুসংগঠিত করি এবং জনগণের ম্যানডেট নিয়ে ২১ বছর পর সরকারে আসি। দেশের মানুষ প্রথম উপলব্ধি করে, সরকার জনগণের সেবক, জনগণের কল্যাণে কাজ করি।
ছয় জেলার নির্বাচনি জনসভায় যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভপতি শেখ হাসিনা। নিজের সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরে তিনি বলেন, শুধু ২০০১ সালে আসতে পারিনি। আমি গ্যাস বিক্রি করবো না এ কথা বলেছিলাম বলেই। খালেদা জিয়া গ্যাস বিক্রি করবে, দেশের সম্পদ বিক্রি করার চক্রান্ত করেই ক্ষমতায় এসেছিল। তারা মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। ২০০৮ সালে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট জয়লাভ করে আর বিএনপি জোট মাত্র ৩০টি সিট পায়। তারপর থেকেই বিএনপির কাজ হচ্ছে নির্বাচনবিরোধী কার্যক্রম।
২০১৪ সালের নির্বাচন বানচাল করতে ২০১৩ সাল থেকে বিএনপি অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করে। কত মানুষ অগ্নিদগ্ধ হয়ে এখনও মানবেতর জীবনযাপন করছে। কত মানুষ স্বজনহারাদের বেদনা নিয়ে বেঁচে আছে। জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করে হত্যা, খুন, গুম শুরু করেছিল। একই কায়দায় খালেদা জিয়াও একই কাজ শুরু করে। সে কারণে জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করে।
শেখ হাসিনা বলেন, একটা রাজনৈতিক দল বিএনপি, সন্ত্রাসী দল। আরেকটা দল হচ্ছে জামায়াত, যুদ্ধাপরাধীর দল। এরা নির্বাচনে না এলে নির্বাচন অংশগ্রহণ হবে না, এটা আমরা বিশ্বাস করি না। জনগণের সমাবেশ হলে, ভোটারদের আগমনে এবং ভোটারদের অংশগ্রহণে এখানে নির্বাচন হবে অংশগ্রহণমূলক আমরা সেটাই চাই। আর সন্ত্রাসী দল, ওরা নির্বাচনে বিশ্বাস করে না। ওদের দিয়ে দেশের কোনও কল্যাণ হবে না। দুর্নীতি করা ছাড়া কিছুই দিতে পারবে না। সে কারণে আমরা কিন্তু এটা (নির্বাচন) উন্মুক্ত করে দিয়েছি। নৌকা মার্কা দিয়েছি। পাশাপাশি আরও যারা দাঁড়াতে চায়, তারাও দাঁড়াবে।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের কাজই মানুষ পোড়ানো আর ধ্বংস করা। নির্বাচিত সরকার, গণতান্ত্রিক সরকার ধারাবাহিকভাবে ২০০৮ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আছে বলেই দেশ উন্নত হয়েছে। আগে যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা তো এক কদমও এগোতে পারেনি। দেশকে পিছিয়ে দিয়েছিল।
দেশের বর্তমান অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, একমাত্র আওয়ামী লীগই ক্ষমতায় আসলে এই অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে পারবে। নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার জন্য আপনারা ঘরে ঘরে যাবেন, দুয়ারে দুয়ারে যাবেন, ভোট চাইবেন। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে যেন আমাদের দেশের সেবা করার সুযোগ দেয়।
বিভিন্ন জেলার নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন শেখ হাসিনা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দেওয়া ইশতেহার নেতাকর্মী ও প্রার্থীদের পড়ে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন শেখ হাসিনা। সেই লক্ষ্য নিয়ে মানুষের কাছে গিয়ে নৌকায় ভোট চাওয়ার নির্দেশনা দেন তিনি।
তিনি বলেন, এটা তো আমাদেরই ে¯্লাগান- আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো। এই ে¯্লাগান দিয়েই আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছি, সংগ্রাম করেছি। সেই কথাটা মনে রেখে যার যার ভোট সে সে চান। জনগণ যাকে ভোট দেবে সেটাই মেনে নেবেন। সেভাবেই এই নির্বাচন পরিচালিত হবে।
বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং এগিয়ে যাবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে এ দেশের দরিদ্র থেকে শুরু করে সব মানুষের মুক্তি আসবে এবং এই দেশটা উন্নত-সমৃদ্ধ হবে। ইনশাআল্লাহ, আওয়ামী লীগ জনগণের ম্যান্ডেড নিয়ে আবার জনগণের সেবা করার সুযোগ পাবে। জনগণের কাছে সেটাই আমাদের দাবি, সেটাই আমাদের আকাঙ্খা। জাতির পিতার সোনার বাংলা আমরা গড়ে তুলবো।