ভোট দেখতে ঢাকায় ভারতের নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধিরা

প্রশান্তি ডেক্স ॥ বাংলাদেশে আগামী ৭ জানুয়ারির সংসদীয় নির্বাচনের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করতে দিল্লি থেকে ভারতীয় জাতীয় নির্বাচন কমিশনের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল ঢাকায় পৌঁছেছেন। বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেই তাদের এই সফর। 

তিন সদস্যের এই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ভারতের সিনিয়র ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার ধর্মেন্দ্র শর্মা। ভারতের তিন জন নির্বাচন কমিশনারের ঠিক পরেই পদমর্যাদায় তার অবস্থান। এছাড়াও দলে রয়েছেন কমিশনের আরও দুজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। 

দিল্লি থেকে এদিন বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) সকালে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে এই প্রতিনিধি দল ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয় এবং বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বেলা পৌনে ২টা নাগাদ তারা ঢাকায় অবতরণ করেন। আগামী ৯ জানুয়ারি, অর্থাৎ নির্বাচনের ফল প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত তারা বাংলাদেশে থাকবেন বলে কথা রয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের এই কর্মকর্তারা ঢাকার উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে দিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের জন্য একটি বিশেষ ‘ব্রিফিং’-এরও ব্যবস্থা করে বলে জানা যাচ্ছে।

বাংলাদেশের নির্বাচনে এই উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল পাঠানোর পাশাপাশি ভারত সরকার আজ এটাও স্পষ্ট করে দিয়েছে যে বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে যে সব প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, সেগুলোকেও তারা মোটেই আমলে নিচ্ছে না। 

ঘটনাচক্রে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নতুন মুখপাত্র হিসেবে অরিন্দম বাগচীর জায়গায় যিনি দায়িত্ব নিয়েছেন, সেই রণধীর জয়সোয়ালের (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যাতেই ছিল প্রথম প্রেস ব্রিফিং।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নতুন মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল

নতুন বছরের প্রথম সাংবাদিক সম্মেলনে তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ‘বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, কারণ প্রধান বিরোধী দলগুলো এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। এই বিষয়ে ভারতের অবস্থান কী?’

উত্তরে রণধীর জয়সোয়াল বলেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আমাদের অবস্থান সম্প্রতি আমরা বারেবারে স্পষ্ট করে দিয়েছি এবং সেই অবস্থান একেবারেই সামঞ্জস্যপূর্ণ (কনসিসটেন্ট)। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের নির্বাচন পুরোপুরি তাদের দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সে দেশের গণতান্ত্রিক ভাগ্য নির্ধারণের এখতিয়ারও পুরোপুরি বাংলাদেশের মানুষেরই।’ 

পররাষ্ট্র মন্ত্রণারয়ের মুখপাত্র সেই সঙ্গেই যোগ করেন, ‘গত সপ্তাহে আমার পূর্বসূরীও এই প্রশ্নের উত্তরে ঠিক একই রকম জবাব দিয়েছিলেন। তার বাইরে আমি আর অতিরিক্ত কিছু যোগ করতে চাই না।’

ভারতে কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই অবস্থানকে বাংলাদেশের নির্বাচনের প্রতি ভারতের ‘স্বীকৃতি’ হিসেবেই দেখছেন। 

তারা বলছেন, প্রথমত ভারত নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যে সব প্রশ্ন তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে দিল্লি বারে বারে স্পষ্ট করে দিয়েছে যে সেগুলোর সঙ্গে তারা একেবারেই একমত নয়। এমন কী ‘বিরোধী দল নির্বাচনে এলে আরও ভালো হতা’, এই জাতীয় কথাও তারা একবারও উচ্চারণ করেনি। 

বাংলাদেশে সাংবিধানিক অঙ্গীকার ও গণতান্ত্রিক পরম্পরা রক্ষা করতেই যে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে সে দেশে এই নির্বাচন অনুষ্ঠান করাটা জরুরি– বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে তা নিয়েও ভারতের কোনও সংশয় নেই। 

প্রসঙ্গত, ভারতের নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা ছাড়াও দিল্লি থেকে সুশীল সমাজ ও শিক্ষাবিদদের একটি দলও বাংলাদেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণে এই দলটির শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। দিল্লিতে ভারতের ন্যাশনাল প্রেস ক্লাবের প্রেসিডেন্ট, প্রবীণ সাংবাদিক গৌতম লাহিড়ীও এই দলে থাকছেন। এর আগে বাংলাদেশের বিগত নির্বাচনের সময়ও (৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮) ভারত থেকে শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তাদের একটি দল নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণে সে দেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে গিয়েছিলেন।     

Leave a Reply

Your email address will not be published.