ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়া কসবায় নিজ ঘরে ঘুমন্ত অবস্থায় হোসনে আরা (১৪) নামের এক মাদ্রাসা ছাত্রীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গত বুধবার উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের নিমবাড়ি গ্রামে ঘটে এ ঘটনা। পরিবারের অভিযোগ, প্রতিপক্ষ গোষ্টীর সদস্যরা দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে মেয়েটিকে কুপিয়ে হত্যা করে। তবে প্রতিপক্ষের লোকজন বিষয়টি দায় চাপিয়ে দিয়েছে কিশোরীর পরিবারের ওপর। হোসেন আরা মেম্বারের দরিদ্র কৃষক নাসির নেয়ার মেয়ে। সে নিমবাড়ি দাখিল মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণীতে পড়ত।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে একই গ্রামের দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদ দীর্ঘদিনের। একটি পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন জমশেদ ভূঁইয়া। অন্য পক্ষের রয়েছেন মৃত সুদন ভূঁইয়ার ছেলেরা। জামসেদের পক্ষ এলাকায় ‘কাবিলের গোষ্ঠী’ ও সুদন ভুঁইয়ার ছেলেদের পক্ষ ‘পান্ডবের গোষ্ঠী’ হিসেবে পরিচিত।
এ দ্বন্ধের জের ধরে ২০১৭ সালে ৪ অক্টোবর সংঘর্ষে প্রাণ যায় সুদন ভূঁইয়ার গোষ্ঠীর পক্ষের রহিজ মিয়ার। সর্বশেষ ২০২১ সালের ১৩ মার্চ হত্যার শিকার হন রহিজের বড় ভাই ফায়েজ মিয়া। এসব ঘটনায় হওয়া দুটি মামলায় আসামি করা হয় জমসেদের পক্ষের শতাধিক ব্যক্তিকে। ১৫ জানুয়ারি দুটি হত্যা মামলার রায় হওয়ার কথা।
নিহত হোসন আরার মা নাদিয়া বেগমের ভাষ্য, মেয়েকে নিয়ে তারা ঘুমিয়ে ছিলেন। গত বুধবার ভোরে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে হামলা চালায় মৃত সুদান মিয়ার ছেলে রতন মিয়া ও মুস্তাফা মিয়া, একই বাড়ির শিবা মিয়া ও রুবেল মিয়া। তারা ঘুমন্ত অবস্থায় হোসেন আরাকে ছুরিকাঘাত করে। তিনি মেয়েকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে তাকেও কোপানো হয়। গুরুতর অবস্থায় হোসেন আরাকে কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক একরাম হোসেন তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ অভিযোগ অস্বীকার করেন রতন মিয়া। মোবাইল ফোনে তিনি বলেন, ‘মেয়েটি সম্পর্কে ভাতিজি হয় । তাকে মারতে যাব কেন ? আমাদের বিরুদ্ধে এটি পরিকল্পিত সাজানো ঘটনা।
তাঁর ভাষ্য, কাবিলের গোষ্ঠীর লোকজনের বিরুদ্ধে দুইটি হত্যা মামলা হয়েছে। এর রায় ১৫ জানুয়ারি হওয়ার কথা। এতে সাজা হতে পারে তাদের। ঘটনার মোড় অন্যদিকে ঘোরাতে দরিদ্র পরিবারটিকে মোটা অংকের টাকার লোভে ফেলা হয়। তাদের মেয়েটিকে হত্যা করে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। ওই হত্যা পরিকল্পনায় কাবিলের গোষ্ঠীর সাক্কু মিয়া নেতৃত্ব দেন বলেও তিনি অভিযোগ করেন। তবে এ বিষয়ে সাক্কু মিয়ার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
মূলগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন রুমি বলেন, দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি মামলায় শতাধিক ব্যক্তি আসামি। তবে বুধবারের হত্যাকান্ড বিষয়ে কোন বক্তব্য করতে রাজি হননি।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ সোনাহার আলী ও কসবা থানার ওসি রাজু আহমেদ। ওসির ভাষ্য, নিমবাড়ী দাঙ্গাপীড়িত গ্রাম বলে পুলিশের কাছে তথ্য রয়েছে। এলাকার পরিস্থিতির স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ মোতায়েন করেছেন। অভিযোগ পেলে মামলা হবে।