প্রশান্তি ডেক্স ॥ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে। আর ন্যূনতম তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির ওপরে থাকলে বন্ধ করা যাবে না। এমন নির্দেশনা দেয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। আবার নির্দেশনা অনুযায়ী তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে থাকলে পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার ব্যবস্থা নিতে পারবে বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অফিস।
এসব নির্দেশনার পর দেশের বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ নিয়ে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মাঠপর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনিটরিং করছেন না বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত বলেন, তাপমাত্রা ১০ ডেগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকলে সংশ্লিষ্ট জেলার পাঠদান কার্যযক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে বিবেচনা করতে বলেছি যে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকলেও যদি প্রতিষ্ঠানে পাঠদান চালানো যায়, তাহলে মাঠপর্যায়ের সংশ্লিষ্ট অফিস খোলা রাখতে পারবে। কারণ শিখন কার্যক্রমের জন্য যাতে সময় কমে না যায়। সেদিক বিবেচনা করে ১০ ডিগ্রির নিচে নামলে অবশ্যই পাঠদান বন্ধ রাখতে পারবে।
অভিযোগ বিষয়ে তিনি বলেন, নির্দেশনার বাইরে প্রতিষ্ঠান পরিচালনার একটি অভিযোগ আমি পেয়েছি। যারা নির্দেশনা মানবে না, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মহাপরিচালক বলেন, তাপমাত্র ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান বন্ধ থাকবে। তবে বিদ্যালয় অবশ্যই খোলা রাখতে হবে। শুধু বাচ্চরা স্কুলে আসবে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপবৃত্তি দেওয়ার কাজ রয়েছে, বিভিন্ন রিপোর্ট, ইউনিক আইডির কাজ চলমান থাকবে। শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে যাবেন।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদফতরের আদেশে বলা হয়, দেশের বিভিন্ন জেলায় তীব্র শৈত্যপ্রবাহ প্রবাহিত হচ্ছে। চলমান এ শৈত্যপ্রবাহে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে মর্মে জানা যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে যেসব জেলায় দিনের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার নিচে (সংশ্লিষ্ট আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাসের প্রমাণক অনুযায়ী) নেমে যাবে, আঞ্চলিক উপপরিচালকরা ওই সব জেলার জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ (দিনের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে না ওঠা পর্যন্ত) রাখার নির্দেশনা দেবেন।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের জারি করা আদেশে বলা হয়, দেশের বিভিন্ন জেলায় বর্তমানে শৈত্যপ্রবাহ চলমান আছে। এ সময় শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বিধায় যেসব জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে (সংশ্লিষ্ট আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাসের প্রমাণক অনুযায়ী) নেমে যাবে, সেসব জেলার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় উপপরিচালকরা সংশ্লিষ্ট জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শীতের তীব্রতা ও স্থানীয় বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিতে পারবেন (সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তদূর্ধ্ব না হওয়া পর্যন্ত)।
তবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের নির্দেশনায় উপপরিচালকদের বিবেচনা করার সুযোগ রাখায় কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্দেশনা না মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রেখেছে। আবার অনেকে ১০ ডিগ্রির নিচে নয়, তারপরও বন্ধ রাখছে। এ বিষয়ে মনিটরিং করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
অন্যদিকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের আদেশে বিবেচনার অংশ মেনে খোলা রাখা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখা হচ্ছে। এতে স্থানীয়ভাবে নানা কথা উঠছে। মাধ্যমিক ও প্রাথমিকের আদেশে সামান্য পার্থক্য থাকায় স্থানীয়ভাবে অনেক অভিভাবক বলছেন, এটি একধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে।
তিন জেলার সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ : টানা শৈত্যপ্রবাহের কারণে কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড় ও দিনাজপুরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পরবর্তী বিজ্ঞপ্তি জারি না হওয়া পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে।
গত বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) রাতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, শুধু পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। তবে বিদ্যালয়ের অন্যান্য কাজ সমাধানের জন্য শিক্ষকরা উপস্থিত থাকবেন।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ জানুয়ারি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদফতর থেকে শীতের কারণে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে সংশ্লিষ্ট জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক অফিসগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।