বিদেশীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াচ্ছে নতুন সরকার

প্রশান্তি ডেক্স॥ ধীরে ধীরে বিদেশিদের সঙ্গে যোগাযোগ সম্পর্ক বাড়াচ্ছে নতুন সরকার। ইতোমধ্যে অনেক দেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছে এবং প্রায় সব দেশ একসঙ্গে কাজ করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ উগান্ডাতে ন্যাম ও সাউথ সামিটে যোগ দিয়েছেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকরের আমন্ত্রণে ৭ ফেব্রুয়ারি দিল্লি যাচ্ছেন তিনি। এটি হবে তার প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ভাইস মিনিস্টার পদমর্যাদার কর্মকর্তা সুন হাইয়ান ঢাকা সফর করছেন এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। আগামী ফেব্রুয়ারিতে মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। সব মিলিয়ে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যে ধরনের যোগাযোগ আশা করা হয়েছিল, সেভাবে এগোচ্ছে সরকার।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সাবেক কূটনীতিক বলেন, ‘নির্বাচনের পূর্বে বিভিন্ন দেশ তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছিল। তাদের অবস্থান, বক্তব্য ও বিবৃতিগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে – ভারত, রাশিয়া, চীন, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশসহ অনেক দেশ নমনীয় অবস্থান গ্রহণ করেছিল।’

যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার অবস্থান ছিল বিপরীতমুখী জানিয়ে তিনি বলেন, অন্যদিকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, জাপান, অস্ট্রেলিয়াসহ আরও কয়েকটি ধনী দেশের অবস্থান ছিল ইতিবাচকভাবে মাঝামাঝি। সম্পর্কের মাত্রা নির্ধারিত হয় দুইপক্ষের আগ্রহের ওপর এবং যারা আগে সরকারের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছিল, স্বাভাবিকভাবে সরকারের আগ্রহ থাকবে তাদের সঙ্গে যোগাযোগের মাত্রা আরও বাড়ানোর।

ভিন্নমত পোষণকারী দেশগুলোও বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তাদের সঙ্গেও সরকারের চেষ্টা থাকবে সম্পর্কোন্নয়নের।’

বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক : জাতীয় স্বার্থ, ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতাসহ বিভিন্ন উপাদানের ওপর বাংলাদেশের সঙ্গে অন্য দেশগুলোর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মাত্রা নির্ভর করে।

এ বিষয়ে সাবেক আরেকজন কূটনীতিক বলেন, ‘সব দেশকেই বাংলাদেশ গুরুত্ব দেয়। কিন্তু এর মধ্যে কিছু দেশকে বিশেষ গুরুত্ব দেয় এবং এটিই বাস্তবতা।’

প্রতিবেশী দেশ ভারত, বৃহৎ শক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও চীন, বৃহৎ রফতানি বাজার ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্য, বৃহৎ শ্রম বাজার ও জ্বালানির উৎস মধ্যপ্রাচ্য এবং বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন অংশীদার জাপান। স্বাভাবিকভাবে ওই দেশগুলোর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে বাংলাদেশের কাছে বলে তিনি জানান।

ভবিষ্যৎ সম্পর্ক : আগের যেকোনও সময়ের থেকে বর্তমানে বাংলাদেশ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে অনেক বেশি সক্ষম। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ গুরুত্ব এখন অনেক বেশি।

এ বিষয়ে আরেক সাবেক কূটনীতিক বলেন, ‘ভবিষ্যৎ সম্পর্কের মাত্রা তিন রকমের হতে পারে। একটি হচ্ছে বর্তমানে যা রয়েছে সেটির থেকে সম্প্রসারণমূলক এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে যা সম্পর্ক আছে বিদ্যমান রাখা। তৃতীয়টি হচ্ছে সংযত ব্যবহার বা আগের থেকে কম যোগাযোগ যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’

তিনি আরও জানান, ভারত, চীন, রাশিয়া, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, মধ্যপ্রাচ্য, জাপানসহ অন্যান্য দেশের আগ্রহের কারণে বাংলাদেশ চাইবে যত দ্রুত সম্ভব সম্পর্কের ব্যাপ্তি ও গভীরতা বৃদ্ধি করতে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে তাদের আগ্রহের ওপর অনেকটা নির্ভর করবে বাংলাদেশ কী করবে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস তিনটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী বলে জানিয়েছেন এবং সেগুলো হচ্ছে- জলবায়ু পরিবর্তন, বাণিজ্য ও নিরাপত্তা। এই বিষয়গুলো নিয়ে আগে থেকেই বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র কাজ করছে এবং ওয়াশিংটনের আগ্রহের জায়গাগুলোতে সম্প্রসারণ হলে সেটি ভবিষ্যতে অন্যান্য দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে তিনি জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published.