প্রশাান্তি ডেক্স ॥ পবিত্র হাদিস শরিফে বর্ণিত ছোট্ট একটি দোয়া হলো, ‘লা হাওলা ওয়ালা কুউয়াতা ইল্লা বিল্লাহি’। আল্লাহর রাসুল (সা.) ছোট্ট এই বাক্যটিকে জান্নাতের রত্নভান্ডার আখ্যায়িত করেছেন। এই দোয়া দুনিয়া ও আখিরাত সম্পর্কিত ৯৯টি ব্যাধির ওষুধ।
হজরত আবু হুরাইরাহ (রা.) বলেন, ‘আল্লাহর রাসুল (সা.) আমাকে বলেছেন, (হে আবু হুরাইরাহ!) তুমি লা হাওলা ওয়ালা কুউয়াতা ইল্লা বিল্লাহি বেশি বেশি পাঠ করো। কারণ, এটি জান্নাতের রত্নভান্ডার।’ (তিরমিজি শরিফ)
দোয়াটিকে জান্নাতের রত্নভান্ডার আখ্যা দেওয়ার কারণ হলো, এটি নিয়মিত পাঠ করলে মহান আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাকে নেক আমল করার ও পাপাচার থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করেন। আর নেক আমল ও পাপাচার পরিত্যাগ আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির মাধ্যম। তিনি যদি বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট হন, তাহলে তাকে জান্নাত দান করবেন। এ জন্য দোয়াটিকে জান্নাতের রত্নভান্ডার আখ্যায়িত করা হয়েছে। (খাজায়েনে কোরআন ও হাদিস)
বিখ্যাত মুহাদ্দিস মোল্লা আলি কারী (রহ.) বিশিষ্ট তাবেই হজরত মাকহুল (রহ.)-এর সূত্রে তার অমর গ্রন্থ মেরকাতে বর্ণনা করেছেন, যে ব্যক্তি লা হাওলা ওয়ালা কুউয়াতা ইল্লা বিল্লাহি লা মানজাআ মিনাল্লাহি ইল্লা ইলাইহি পাঠ করবে, মহান আল্লাহ তার ৭০টি অসুবিধা দূর করে দেবেন। এর মধ্যে সবচেয়ে ছোট অসুবিধা হলো অভাব-অনটন বা আর্থিক দৈন্য। (মেরকাত: ৫/১২১)
আল্লাহর রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, লা হাওলা ওয়ালা কুউয়াতা ইল্লা বিল্লাহি দুনিয়া ও আখিরাত সম্পর্কিত ৯৯টি ব্যাধির ওষুধ। সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে হালকা ব্যাধিটি হচ্ছে দুশ্চিন্তা ও পেরেশানি। ওই দুশ্চিন্তা দুনিয়া সম্পর্কিত হোক কিংবা আখিরাত সম্পর্কিত।
দোয়াটি সম্পর্কে হজরত আবু হুরাইরাহ (রা.) বলেন, একদিন আল্লাহর রাসুল (সা.) বললেন, হে আবু হুরাইরাহ! আমি কি তোমাকে এমন একটি বাক্য শেখাবো না, যা আরশের নিচে অবস্থিত জান্নাতের একটি রত্নভান্ডার? তা হলো, লা হাওলা ওয়ালা কুউয়াতা ইল্লা বিল্লাহি। বান্দা যখন এটি পাঠ করে, মহান আল্লাহ তখন ফেরেশতাদের বলেন, আমার বান্দা অবাধ্যতা পরিত্যাগ করে আমার অনুগত হয়েছে এবং তার সব বিষয় আমার হাতে ন্যাস্ত করে দিয়েছে। (মেরকাত: ৫/১২১-১২২)
এই দোয়াটির আরও ফজিলত রয়েছে। মোল্লা আলি কারী (রহ.) তার গ্রন্থে উল্লেখ করেন, এই বাক্যটি (লা হাওলা ওয়ালা কুউয়াতা ইল্লা বিল্লাহি) মিরাজের রাতে মহানবী (সা.)-কে হজরত ইবরাহিম (আ.) উপঢৌকন ও ওসিয়ত হিসেবে দিয়েছেন। হাদিস শরিফে এসেছে, মিরাজের রাতে মহানবী (সা.) ও হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর মধ্যে সাক্ষাৎ হয়। তখন শেষ নবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-কে হজরত ইবরাহিম (আ.) বলেছিলেন, হে মোহাম্মদ, আপনি আপনার উম্মতকে বলে দিন, তারা যেন লা হাওলা ওয়ালা কুউয়াতা ইল্লা বিল্লাহি দ্বারা জান্নাতের বাগান বৃদ্ধি করতে থাকে। (মেরকাত: ৫/১১১)
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, একদিন রাসুল (সা.)-এর দরবারে লা হাওলা ওয়ালা কুউয়াতা ইল্লা বিল্লাহি পাঠ করলাম। তিনি বললেন, তুমি কি বলতে পারো এর অর্থ (ব্যাখ্যা) কী? আমি বললাম, আল্লাহ ও তার রাসুলই সর্বাধিক অবগত। তিনি বললেন, (ব্যাখ্যার অর্থ) আল্লাহর নাফরমানি থেকে বাঁচার কোনও উপায় নেই এবং তার ইবাদত-বন্দেগি করারও কোনও শক্তি নেই তার সাহায্য ছাড়া। (মেরকাত: ৫/১১১)
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী; শিক্ষক, মারকাযুদ দিরাসাহ আল ইসলামিয়্যাহ, ঢাকা।