প্রশান্তি ডেক্স ॥ শহীদ মিনার প্রথম নির্মিত হয় ১৯৫২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি। এর পরিকল্পনা, স্থান নির্বাচন ও নির্মাণকাজ সবি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রদের উদ্যোগে সম্পন্ন হয়। বর্তমান শহীদ মিনারের পূর্ব-দক্ষিণ কোণে শহীদদের রক্তভেজা স্থানে সাড়ে ১০ ফুট উঁচু এবং ৬ ফুট চওড়া ভিত্তির ওপর ছোট স্থাপত্যটির নির্মাণকাজ শেষ হলে এর গায়ে ‘শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’ লেখা একটি ফলক লাগিয়ে দেওয়া হয়। ২৬ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনার উদ্বোধন হয়, ওই দিন বিকালেই পুলিশ এটি ভেঙ্গে ফেলে।
এরপর ভাঙ্গাগড়ার মধ্য দিয়ে গেছে শহীদ মিনার। কখনও যুদ্ধকালে কেউ ভেঙ্গে মসজিদ লিখে দিয়েছে, কখনও মারাত্মকভাবে গুঁড়িয়ে দিয়েছে পাকিস্থান শাসকেরা। সেই ভাঙ্গাগড়ার মধ্যে স্বাধীনতার পরের বছর এখানে প্রথমবারের মতো পরিকল্পিত একটি কাঠামো তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। কখনও শহীদ চক, কখনও কমপ্লেক্স এবং সর্বশেষ ২০২০ এর মাস্টারপ্ল্যানে শহীদ মিনার কমপ্লেক্স নাম দেওয়া হয়। কিন্তু সেই ১৯৫২ থেকে ২০২৪ এখনও পূর্ণাঙ্গ কিছু তৈরি করা সম্ভব হয়নি। প্রশ্ন হলো ১৯৭২ এর শহীদ চক থেকে এখনকার শহীদ মিনার কমপ্লেক্স- আর কতটা পথ গেলে একটি স্থায়ী পূর্ণাঙ্গ কাঠামো পাবে।
১৯৭২ সালের ২ ফেব্রুয়ারির দৈনিক বাংলা পত্রিকার খবর বলছে, শহীদ মিনার পুননির্মাণ কমিটি গঠিত হয়েছে। রাষ্ট্রপ্রধান বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী এ কমিটির সভাপতি। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন ও বিশিষ্ট বাস্তুকলাবিদ মাযহারুল ইসলামসহ ৮ সদস্য ছিলেন এ কমিটিতে। কমিটি মিনারের নকশা আহ্বান করে। জমা দেওয়ার শেষ তারিখ নির্ধারণ করা হয় সে বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি। মনোনীত নকশার কথা ১৫ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা করা হবে বলেও খবরে বলা হয়। দখলদার পাকবাহিনী কর্তৃক বিধ্বস্ত মিনার সংস্কার করা হচ্ছে। মিনারের সামনের জায়গায় একটি আঙ্গিনা তৈরি করা হয়। ফুটপাতের পাশের দেয়াল ভেঙ্গে ফেলা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানটির নামকরণ করা হবে শহীদ চক (স্কয়ার)।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২০২০ সালের ৩ অক্টোবর একটি মাস্টারপ্ল্যান উপস্থাপন করে। মাস্টারপ্ল্যান উপস্থাপনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মধ্যে সমন্বয় করে সিদ্ধান্ত নিতে পরামর্শ দেন।
সেই মাস্টারপ্ল্যানে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মূল চাতালের সামনে বিশাল উন্মুক্ত চত্বর প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়। জানানো হয়, এর পশ্চিমে থাকবে আরও একটি চাতাল এবং পূর্বে থাকবে একটি পুকুর। এটি হলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বর্তমান মূল চাতালের পরিবর্তে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ উত্তর পশ্চিম দিকের প্রস্তাবিত চাতালে আয়োজিত হবে বলেও জানানো হয়। এছাড়াও শহীদ মিনারের পেছনে সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়।
বর্তমানে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের উত্তর দিকে আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ২ দশমিক ১৭ একর আয়তনের একটি আবাসিক এলাকা। প্রস্তাবিত পরিকল্পনা অনুযায়ী, আবাসিক ভবনগুলো ভেঙ্গে এলাকাটিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মূল চাতালের সামনের উন্মুক্ত চত্বরের অংশে পরিণত করা হবে। উন্মুক্ত চত্বরের অংশে পরিণত হবে শিববাড়ী আবাসিক এলাকার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ, শহীদ মিনার সংলগ্ন উত্তর ও পূর্ব দিকের সড়ক। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, শহীদ মিনারের মূল প্লাজায় সভা, সমাবেশ, বিক্ষোভ করা হয়। যা শহীদ মিনারের ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে যায় না। তাই বর্তমান শহীদ মিনারের প্লাজার উত্তর-পশ্চিম দিকে আরেকটি প্লাজা নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে মাস্টারপ্ল্যান তার একটা অংশ ছিল শহীদ মিনার নিয়ে উল্লেখ করে অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, আমরা চেয়েছিলাম শহীদ মিনারের সামনে দিয়ে যেন গাড়ি চলাচল না করে। সে কারণে মিনারের পেছন দিয়ে একটা রাস্তা সোজা দোয়েল চত্বরে গিয়ে মিলবে। যেহেতু মিনারের পেছনের অংশে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সেহেতু বিষয়টি নিয়ে তাদের সঙ্গে সমন্বয় হওয়া দরকার ছিল, সেটা সম্ভব হয়নি। তিনি বাইরের দেশের বিভিন্ন স্কয়ারের কথা উল্লেখ করে বলেন, সারা বছর শহীদ মিনারে নানা সভা-সমাবেশ হয়ে থাকে। বিভিন্ন দেশে সমাবেশের জন্য এ ধরনের রাস্তা রাখা হয়, তাতে করে যান চলাচল ব্যাহত হয় না এবং শহীদ মিনারের বেদির অংশটাও ঠিক থাকে, সেটা ব্যবহার করতে হয় না।