প্রশান্তি ডেক্স ॥ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এভার কেয়ার হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বাসায় ফেরার পর তার মেডিক্যাল বোর্ডের অন্যতম সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেছেন, ‘উনার যে সুস্থতা এটা ধরেন ক্ষণিকের সুস্থতা।’ এ সময় তিনি উল্লেখ করেন, ‘সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হলে তিনি আরও সুস্থ হয়ে উঠবেন বলে তার পরিবারও মনে করে।’
গত বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) মধ্যরাতে গুলশান-২ এ খালেদা জিয়ার বাসা ফিরোজার সামনে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের সামনে এসব বিষয় তুলে ধরেন অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার বিকালে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় এভার কেয়ার হাসপাতালে যান। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মধ্যরাতে বাসায় ফেরেন। হাসপাতালে ১৫৬ দিন থেকে গত ১১ জানুয়ারি সন্ধ্যায় বাসায় ফেরেন খালেদা জিয়া।
ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘পাঁচ মাস পাঁচ দিন এভার কেয়ার হাসপাতালে থাকার পর গত ১১ জানুয়ারি উনি বাসায় ফিরেছিলেন। তারপর আজকে ৮ ফেব্রুয়ারি একেবারে একমাস কাঁটায় কাঁটায় পূর্ণ হয়েছে। এখন এই অবস্থার মাঝে আমরা আগেও বলেছিলাম তার মাঝে মাঝে হসপিটালে যেতে হবে। তার কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন আছে- যেগুলো বাসায় করা সম্ভব নয়। সেগুলোর জন্য তাকে হসপিটালে কিছুক্ষণ সময়ের জন্য যেতে হবে।’
‘বিশেষ করে সিসিইউতে ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিট বেগম জিয়াকে নেওয়া হয়েছিল এবং সেখানে যাওয়ার পর তার বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। মেডিক্যাল বোর্ড তার শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে কিছু কিছু ওষুধপত্র এবং কিছু কিছু চিকিৎসা এবং কিছু কিছু পরীক্ষা নতুনভাবে করানো হয়।’
গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বিভিন্ন ওষুধপত্র দেওয়ার পর কিছুটা সুস্থবোধ করেন খালেদা জিয়া, জানান ডা. জাহিদ হোসেন। তিনি উল্লেখ করেন, ‘এরপর সুস্থবোধ করার কারণে মেডিক্যাল বোর্ডের পরামর্শে তাকে আবার বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে। বাসায় আসার পর এখন পর্যন্ত (রাত সোয়া ১২টা) তার যে অবস্থা দেখেছি তিনি অনেকটা সুস্থবোধ করছেন।’
রাতে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরেন খালেদা জিয়া। পরে কোনও জটিলতা দেখা দিলে বাসার পাশাপাশি হাসপাতালেও যেতে হতে পারে বিএনপি চেয়ারপারসনকে। ডা. জাহিদের মন্তব্য, ‘আবার কখনও কখনও হয়তো হাসপাতালে যেতে হতে পারে। ওনার যে সুস্থতা এটা ধরেন ক্ষণিকের সুস্থতা। তাকে সুস্থ রাখার জন্য জন হপকিন্সের চিকিৎসকরা যে টিপস দিয়ে গিয়েছেন সেটির মাধ্যমে তিনি কিছুটা সুস্থ আছেন। কিন্তু এর অর্থ এই না তার ক্রনিক লিভার ডিজিজ বা পোর্টাল হাইপারটেনশন ভালো হয়ে গেছে তা কিন্তু না।’
তিনি যোগ করেন, ‘সেজন্য আগেও যেমন আমরা বলেছি এখন আবার পুনরাবৃত্তি করছি বা মেডিক্যাল বোর্ড এটা ফিল করে এবং আজকেও যেটা বলেছে, যদি তাকে মাল্টি ডিসিপ্লিনারি সেন্টারে নিয়ে গিয়ে লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশনের যে সম্ভাব্যতা আছে সেটা করা এবং তাহলেই কেবল ওনার যে পোর্টাল হাইপারটেনশন বা ক্রনিক লিভার ডিজিজের যে জটিলতা সেটি নিরসন করা যাবে। তখন উনি সত্যিকার অর্থে ক্রনিক লিভার ডিজিজ থেকে সুস্থ সেটা হওয়ার মতো একটা অবস্থায় যাবেন। সেটি যত দ্রুত আমরা করতে পারবো ততই ওনার জন্য মঙ্গল। উনি শারীরিকভাবে তত তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবেন বলে চিকিৎসকরা মনে করেন।’
জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আমরা আশা করি তার বিদেশ যাওয়ার জন্য যে প্রতিবন্ধকতা এটি যত দ্রুত নিরসন হবে এবং যত দ্রুত তাকে আমরা বিদেশি সেন্টারে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাতে পারবো, তাহলে হয়তোবা তার যে শারীরিক সুস্থতা দেশবাসী, পরিবার, তার ছেলে অর্থাৎ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং আমরা যেরকম আশা করি ইনশাআল্লাহ সেরকম সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা তার আছে।’
চিকিৎসক বোর্ডের অন্যতম এই সদস্য বলেন, ‘এটি একটি নিরাময় যোগ্য এবং সুস্থ থাকার মতো রোগ। আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করি, সেই সুযোগ যদি ওনাকে দেওয়া হয় নিশ্চয়ই উনি সুস্থ হবে বলে আশাবাদী।’
জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে সুস্থ আছেন, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। অনেক অনেক জটিলতা এবং প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে এখনও তিনি সুস্থ ও চিকিৎসাধীন আছেন।’