হাসিনা-জেলেনস্কি বৈঠকে ঢাকা-মস্কো সম্পর্কে প্রভাব পড়বেনা, আশা রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের

প্রশান্তি আন্তর্জাতিক ডেক্স॥ জার্মানির মিউনিখে নিরাপত্তা সম্মেলনের ফাঁকে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এই বৈঠকের কারণে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে কোনও প্রভাব পড়বে না বলে আশা করছেন ঢাকায় নিযুক্ত রাশিয়ান রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার ভি মান্টিটস্কি।

গত বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ডিপ্লোমেটিক করেসপন্ডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ আয়োজিত ডিক্যাব টকে মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে দুই নেতার মধ্যে আসন্ন বৈঠকের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি এ কথা বলেন।

রাষ্ট্রদূত বলেন, “বাংলাদেশ ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ নীতি অনুসরণ করে এবং আমরা এটিকে স্বাগত জানাই। আমরা এখানে আমেরিকানদের সঙ্গে যুদ্ধ করছি না। তাদের নিজস্ব অর্থনৈতিক স্বার্থ রয়েছে। আমাদেরও বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা রয়েছে। আমরা আশা করি ওই বৈঠকের কোনও প্রভাব আমাদের সম্পর্কে পড়বে না।”

ডিক্যাব টকে রাশিয়ান রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার ভি মান্টিটস্কি এ বিষয়ে গত (বুধবার) বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও মন্তব্য করেছেন, আমরা আশা করি এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্ক আরও ভালো হবে, যুক্ত করেন তিনি।

মান্টিটস্কি আরও বলেন, অনেক দেশ ইউক্রেনের যুদ্ধ বন্ধের প্রস্তাবকে সমর্থন করার জন্য অন্য দেশের সঙ্গে আলোচনা করছে। কিন্তু রাশিয়া ওই প্রস্তাব সমর্থন করে না।

গত বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ জানান, জেলেনস্কি দেখা করতে চেয়েছেন এবং প্রধানমন্ত্রী তাতে সম্মত হয়েছেন। তাদের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধের আলোচনাই হবে।

ভারতের চোখ দিয়ে দেখি না। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভারতের নীতি রাশিয়া অনুসরণ করে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের নীতি অনুসরণ করি এবং এটি আমাদের ডকট্রিনে লিপিবদ্ধ আছে।’

রাশিয়া ও ভারতের মধ্যে অনেক বিষয়ে মতপার্থক্য আছে এবং আমরা এখানে আমাদের নীতি অনুসরণ করি। আমরা বাংলাদেশকে ভারতের চোখে দেখি না, তিনি ব্যাখ্যা করেন।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের অবস্থান হচ্ছে বাংলাদেশ কী করবে সেটি যুক্তরাষ্ট্র বা পশ্চিমা দেশগুলোর বলা উচিত নয়। বাংলাদেশিরা ঠিক করবে কার সঙ্গে কীভাবে সম্পর্ক রাখবে এবং এটি বাংলাদেশের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করবে। বাংলাদেশে হস্তক্ষেপ করা তাদের উচিত নয়।’

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন : রাশিয়া চায় রোহিঙ্গারা তাদের নিজ ভূমিতে ফেরত যাক, এ কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমরা মনে করি বিদেশি কোনও দেশ বা এনজিও এই প্রক্রিয়ায় যেন হস্তক্ষেপ না করে। অবশ্য এখন অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে এবং মিয়ানমারে সমস্যা তৈরি হয়েছে। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া কখন শুরু হবে সেটি এখন অনিশ্চিত।’

অনেক দেশ, যেমন যুক্তরাষ্ট্র বা জাপান প্রস্তাব দিয়েছে তারা রোহিঙ্গাদের নিয়ে যাবে। এর মধ্যে তারা কতজন রোহিঙ্গা নিয়ে গেছে সেটি আমাকে বলেন, জানতে চান রাষ্ট্রদূত।

মিয়ানমারের কাছে রাশিয়া কেন অস্ত্র বিক্রি করে সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা অস্ত্র সরবরাহ করছি। কিন্তু একই সঙ্গে ভারত, চীনও অস্ত্র সরবরাহ করছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকেও অস্ত্র সরবরাহ করতে প্রস্তুত আছি। এগুলো উন্নতমানের অস্ত্র এবং ইউক্রেন যুদ্ধ দেখলে সেটি বোঝা যায়। আমরা আগেও বাংলাদেশকে অস্ত্র সরবরাহ করেছি। বিমান ও আরও কিছু।’ মিয়ানমারের সমস্যার কারণে কেউ লাভবান হচ্ছে, কিন্তু ভারত বা বাংলাদেশ লাভবান হচ্ছে না। কেউ এ সমস্যা তৈরি করেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.