প্রশান্তি আন্তর্জাতিক ডেক্স॥ পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের কুচলিবাড়ি এলাকা থেকে দুটি পৃথক ঘটনায় তিন বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভারতে অবৈধভাবে প্রবেশের পর বাংলাদেশে ফেরার সময় গত বৃহস্পতিবার তাদের গ্রেফতার করেছে বিএসএফ জওয়ানরা। অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশি গ্রেফতারের সংখ্যা বাড়তে থাকায় স্থানীয়দের পক্ষ থেকে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার দাবি তোলা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে বিশ্বজিৎ রায় নামে এক বাংলাদেশি তরুণ রয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের পাটগ্রামের বাসিন্দা। বিএসএস সূত্রে জানা গেছে, ভারতে ঢুকে অবৈধভাবে আধার কার্ড, ভোটার কার্ড ও পাসপোর্ট বানিয়ে কাজের উদ্দেশে যুক্তরাষ্ট্র বা ইংল্যান্ড যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল এই তরুণের। দালালদের সঙ্গে কথা বলে তাদের মাধ্যমে ভারতেও ঢুকেছিলেন তিনি। জাল পাসপোর্ট তৈরির জন্য তারপর কলকাতা ও দিল্লিতেও গিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে মাথার ব্যাধি বাদ সাধে। চিকিৎসার জন্য তাকে চেন্নাইয়ের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে যুক্তরাষ্ট্র বা ইংল্যান্ড যাওয়ার ইচ্ছা বাদ দিয়ে দেশে ফেরার জন্য এবার মেখলিগঞ্জ ব্লকের কুচলিবাড়ি সীমান্তে আসেন ওই তরুণ। কুচলিবাড়ির অমর এলাকায় খোলা সীমান্ত দিয়ে রাতে বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার সময় তিনি বিএসএফের হাতে ধরা পড়েন।
একই দিনে কুচলিবাড়ি সীমান্তে আরও দুই নারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা আবার ২০১৬ সালে কুচলিবাড়ির খোলা সীমান্ত দিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশ করেছিলেন। এরপর পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা হিসেবে পরিচয় দিয়ে জয়পুরে কাজ করছিলেন। পরিবারের টানে আট বছর পর দেশে ফেরত যেতে একই খোলা সীমান্তে আসেন। বাংলাদেশে অবৈধভাবে যাওয়ার পথে বিএসএফের ভীম আউটপোস্টের জওয়ানরা তাদের গ্রেফতার করেন।
দুই নারীর মধ্যে একজন বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলা আর অন্যজন পাবনা জেলার বাসিন্দা।
বিএসএফ সূত্রে খবর, দুই নারীকে এক ভারতীয় দালাল এনজেপি স্টেশন থেকে কুচলিবাড়ি সীমান্তে নিয়ে যায়। প্রত্যেকের কাছ থেকে তারা ১০ হাজার রুপি করে নিয়েছিল।
শুধু এই তিনজনই নয়, নতুন বছরে ইতোমধ্যে কুচলিবাড়ি সীমান্তে প্রায় ১৫ বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বেশিরভাগই কাজের সূত্রে অনুপ্রবেশ করেছিলেন। কুচলিবাড়ির প্রায় ১৮ থেকে ২০ কিলোমিটার সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নেই। মূলত বাংলাদেশের দহগ্রাম অঙ্গারপোঁতা ছিটমহলের চারিদিকে খোলা সীমান্ত। এই সীমান্তকেও কাজে লাগিয়ে দুষ্কৃতরা এটিকে পাচার ও অনুপ্রবেশের করিডরে পরিণত করেছে।
কুচলিবাড়ি সংগ্রাম কমিটির সম্পাদক উৎপল রায় এই সীমান্তে দ্রুত কাঁটাতারের বেড়ার দাবি তুলেছেন। তার বক্তব্য, ‘কাঁটাতারের বেড়া তৈরি না হলে অনুপ্রবেশ কমবে না। এখনও আমাদের নিরাপত্তা নড়বড়ে রয়েছে। তাই দ্রুত কাঁটাতারের বেড়ার দাবি জানাচ্ছি।’
কাঁটাতারের বেড়া নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের বক্তব্য, ‘রাজ্য সরকার জমি দিলে ছয় মাসের মধ্যেই কাঁটাতারের বেড়া হয়ে যাবে।’ যদিও রাজ্যের শাসকদল মন্ত্রীর তত্ত্ব মানতে নারাজ। তৃণমূল কংগ্রেসের কোচবিহার জেলাসহ সভাপতি লক্ষ্মীকান্ত সরকারের বক্তব্য, ‘রাজ্য সরকার জমি না দিলে গোটা রাজ্যে কাঁটাতারের বেড়া কীভাবে তৈরি হলো? খোলা সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া তৈরিতে কেন্দ্রীয় সরকার উদ্যোগই নিচ্ছে না।’
সীমান্তে অনুপ্রবেশ নিয়ে উত্তরবঙ্গের বিএসএফের আইজি সূর্যকান্ত শর্মার বক্তব্য, ‘কুচলিবাড়িতে একদিকে খোলা সীমান্ত রয়েছে। তার ওপর সীমানা বরাবর তিস্তা নদীর বিশাল চর রয়েছে। প্রতিকূল সীমান্তকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশিরা অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে বিএসএফ জওয়ানরা সদা তৎপর রয়েছেন। মাঝেমধ্যে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা ধরা পড়ছে।’