প্রশান্তি ডেক্স॥ সাড়ে তিন মাস পর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। গত বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) মুক্তি পেয়েছেন আরও কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। মুক্তির অপেক্ষায় আছেন একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা।
গত বছরের ২৮ অক্টোবর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে একদফা আন্দোলন চলমান অবস্থায় গ্রেফতার মির্জা ফখরুলসহ অন্য নেতাদের মুক্তিতে বিএনপিতে নতুন করে উদ্যম আসবে বলে মনে করেন দলের নেতারা।
বিদায়ী বছরের ২৮ অক্টোবরের পর বিএনপির কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত অন্তত ২৫ হাজার নেতাকর্মী গ্রেফতার ও আটক হন। অনেকের সাজাও হয়েছে বিভিন্ন মামলায়। বিগত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নতুন নির্বাচনের দাবি করলেও কর্মসূচি অনেকটাই ঘরোয়া রেখেছে বিএনপি। এরইমধ্যে ঘোষিত ছয় দিনের কর্মসূচির দুদিন পার হয়েছে। গত শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) ভারত ও মিয়ানমার সীমান্তে নিহত বাংলাদেশিদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে সারা দেশে দোয়া মাহফিল করবে বিএনপি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য বলছেন, আপাতত ঘরোয়া কর্মসূচিতে থাকলেও মহাসচিব, আমির খসরুসহ অনেক নেতা মুক্তি পেলেও এখনই বড় কর্মসূচিতে যাবে না বিএনপি। চলমান ঘরোয়া কর্মসূচি আরও কিছু দিন চালিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে দলের। এক্ষেত্রে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ও আমির খসরু মুক্তি পাওয়ায় দলে নতুন উদ্যম তৈরি হবে বলে মনে করেন দলের নেতারা।
স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, ‘একটা শূন্যতা ছিল। মহাসচিবের মুক্তির মাধ্যমে তা পূরণ হয়েছে।’ আরেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বশীল উল্লেখ করেন, ‘মির্জা ফখরুলের মাঝে মুক্তির পর যে স্পিরিট দেখা গেছে, তাতে দ্রুততার সঙ্গে কীভাবে নতুন করে সবার গতি আনা যায়, সে বিষয়টিকে তিনি প্রাধান্য দেবেন।’
কারাগার থেকে মুক্তির পর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সঙ্গে নিপুন রায় চৌধুরী এ বিষয়ে জানতে চাইলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘একটি দলের ওপর যত ধরনের নিপীড়ন, নির্যাতন, উৎপীড়ন করা যায় তার সবই করা হয়েছে বিএনপির ওপর। তা সত্ত্বেও বিএনপি তার মূল্য উদ্দেশ্য থেকে সরে যায়নি। আর দলের মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নেতারা একে একে মুক্তি পাওয়ায় আরও গতি বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত বৃহস্পতিবার বিকাল পৌনে ৪টার দিকে ঢাকার কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান। সেখানে উচ্ছ্বসিত নেতাকর্মীরা তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। মুক্তির পরই আন্দোলন অব্যাহত রাখার কথা জানান তিনি। সেখানে তাৎক্ষণিক বক্তব্যে ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ সবসময় গণতন্ত্রের জন্য, ভোটের অধিকারের জন্য, ভাতের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছে, লড়াই করেছে। ইনশাআল্লাহ, এই সংগ্রামে তারা জয়ী হবে। গণতন্ত্র ফেরানোর চলমান আন্দোলন বিজয় না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।’
দীর্ঘ সাড়ে তিন মাস কারাবন্দির পর বিকালে মুক্তি পান মির্জা ফখরুল ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি আরো জানান, মুক্তি পেয়ে মির্জা ফখরুল গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে যান। সেখানে কেন্দ্রীয় নেতারা তাকে স্বাগত জানান। ভার্চুয়াল শুভেচ্ছা বিনিময় করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে।
এ সময় গুলশান কার্যালয়ে ছিলেন ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য বিজন কান্তি সরকার, বিএনপির কোষাধ্যক্ষ রশিদুজ্জামান মিল্লাতসহ অনেকে।
শায়রুল কবির খান বলেন, ‘সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে মহাসচিব গুলশানের কার্যালয়ে পৌঁছান। এর আগে কারাগার থেকে বেরিয়ে গুলশানে ফেরার সময় স্ত্রী রাহাত আরা বেগম, একান্ত সহকারী ইউনুস আলী তার সঙ্গে ছিলেন।
প্রসঙ্গত, গত ২৯ অক্টোবর গোয়েন্দা পুলিশ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গুলশানের বাসভবন থেকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর ৯ ঘণ্টা পর তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ। ২ নভেম্বর দলের স্থায়ী কমিটির সদ্স্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীকেও তার গুলশানের বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের দিন প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
বিএনপি মহাসচিবের ১৩টি মামলায় প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট রয়েছে। ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশের দিন (২৮ অক্টোবর) প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনায় পুলিশের করা মামলায় গত বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ফয়সল আতিক বিন কাদের বিএনপির এই দুই জ্যেষ্ঠ নেতার জামিন মঞ্জুর করেন। এ মামলার জামিনের আগে আরও ১০টি মামলায় তাদের জামিন হয়।