প্রশান্তি ডেক্স॥ গত ২০ ফেব্রুয়ারী ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়ার পথে ভুলে দুইটি ল্যাপটপ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আভ্যন্তরিন টার্মিনাল এর চেক পয়েন্টে রেখে যায়। যা কক্সবাজার পৌঁছার পর বুঝতে পারে। দু:খজনক হলেও সত্যি যে বাংলাদেশ বিমানবন্দরগুলো স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতায় এখন পরিপূর্ণ যা আন্তর্জাতিক মানদন্ডে সমানে সমান। বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জোয়ারে ভেসে গেছে এবং যাচ্ছে অতিতের সকল অপবাদ।
ঐ কম্পিটার দুটি বেঙ্গল ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লি: এর অফিস কর্মীর। একটি রিপেয়ার করে পাঠানো হয়েছিল ঐ দিনই আরেক অফিস কর্মীর মাধ্যমে যিনি সুদুর জার্মান থেকে কর্মস্থলে ফিরছিলেন। দুর্ভার্গ্য যে কম্পিউটার দুটি হারিয়েছিলেন এবং সৌভাগ্য যে, সত্য উদঘাটিত হলো ফিরে পাওয়ার মাধ্যমে।
২০ তারিখ বিকেলে বিমানবন্দর থেকে একটি ফোন পাই এবং বলে যে আপনার কম্পিউটার ফেলে গেছেন। পরক্ষণে নাম জিজ্ঞাসা করলে আমার নাম বললে বলে দু:খিত। তবে আমি নিজেও জানতাম না আমার অফিসের কম্পিউটার দুটি যা আমিই পাঠিয়েছিলাম তাই হারিয়েছে। পরের দিন ২১শে ফেব্রুয়ারী সুবে সাদেক হওয়ার সাথে সাথে ব্যক্তিগতভাবে প্রভাব ফেরিতে যায় এবং শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা অর্পন শেষে বাসায় ফিরে মোবাইল হাতে নিয়েই দেখি সিগনালে কম্পিউটার দুটি হারানোর কাহিনীর দৃশ্যপট। আমি নিশ্চিত করি যে, আমি দেখতেছি এবং ১০টার দিকে বিমানবন্দরে যাব ও নিয়ে আসব। আমার বিশ্বাস যে, আমরা বিগত ১৫টি বছর যে পরিশ্রম ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছি তার শতভাগ সফলতা হলো সামগ্রী ফিরে পাওয়া এবং উপযুক্ত ব্যক্তির হাতে তুলে দেয়া।
আমার ২১শে প্রোগ্রাম কিছু কর্তন করে বিমানবন্দরে যাওয়ার পূর্বে বন্দর কর্তৃপক্ষকে ফোন দিলাম এবং একজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হলাম। তিনি আমাকে বললেন যে, আপনি উপযুক্ত প্রমান দিয়ে সামগ্রী নিয়ে যান তবে ১২টার পূর্বেই আসবেন। আমি বললাম ঠিক আছে। তারপর ড্রাইভারকে নিয়ে রওয়ানা দিলাম। আমি আভ্যন্তরিন টার্মিনালে পৌছে যোগাযোগ করি এবং তারা আন্তরিকতার সহিত আমাকে সহায়তা করে। তাদের কার্য শেষে তারা আমাকে আন্তর্জাতিক টার্মিনাল এর ৬ নম্বর কাউন্টারে যেতে পরামর্শ দেয়। আমি আমার গাড়ি নিয়ে সেই টার্মিনালের ৬নম্বর কাউন্টারে যাই এবং পরিচয় দিয়ে ঘটনা বলি; তখন তারা আন্তরিকতার সহিত আমাকে ও আমার মেয়েকে কর্ড করে হাই সিকিউরিটি কন্ট্রোল রূমে নিয়ে যায় যা সম্পূর্ণ বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর অফিসারদ্বয় দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত।
আমাকে যাচাই করার জন্য কম্পিউটার দুটির বিবরণ জানতে চান এবং বোর্ডিং পাস দেখতে চান। আমি যথারিতি সকল প্রমানাদি দেখিয়ে উত্তির্ণ হই এবং সর্বশেষ পরীক্ষা হলো কম্পিউটার পাসওয়ার্ড দিয়ে ওপেন করে নিশ্চিত করা যে এই দুইটি ল্যাপটম আমার। এই ক্ষেত্রে বাধে বিপত্তি। একটি ওপেন করি এবং প্রমান করি কিন্তু আরেকটি হলো আমার জার্মান সহকর্মীর; সেই ক্ষেত্রে তার ব্যক্তিগত পাসওয়ার্ড চাওয়াটা আমার দৃষ্টিতে শোভন নয় তারপরও চেয়েছি তখন সে বলে প্রয়োজনে সে আসবে কিন্তু পাসওয়ার্ড কাউকে দেবে না। এই ক্ষেত্রে বিড়ম্বনা এবং অবিশ্বাসের এক অসহিষ্ণু সময় অতিক্রান্ত হয়। কিন্তু সম্পদ আমার এবং আমিই আনতে গিয়ে এই ঝামেলায় প্রমান করে দায়িত্ব পালনে সততা এবং আন্তরিতা ও বিশ্বস্ততার। আমার পরিচয় জেনে তারা আমার সাথে বিনয়ের সঙ্গে কথোপকথন এবং অপারগতার কারণ ব্যখ্যা করেন। তখন আমি ফোনে আমার অফিস কর্মীকে বলি যে, তোমার আসতে হবে নতুবা পাসওয়ার্ড আমাকে পাঠাতে হবে যেন আমি কম্পিউটার ওপেন করে তাদেরকে দেখাতে পারি যে এই কম্পিউটার আমার। তখন সেই সহকর্মী তার পাসওয়ার্ড আমার সিগনালে পাঠায় এবং আমি কম্পিউটার খুলে নিশ্চিত করি যে এই দুটি কম্পিউটারই আমার।
তখন তাদের অফিসিয়াল আনুষ্ঠানিকতা শেষে (আমার বুঝে পাওয়ার অঙ্গিকার এবং আইডি ফটোকপি করে) তাদের বোর্ডের সামনে ছবি উঠিয়ে আন্তরিকতার সহিত বিদায় নিলাম। কিন্তু তাদের বিনয় ও ভালবাসা আমাকে আমার গাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে সেবা এবং ভালবাসার নিদর্শন প্রদর্শন করেছেন। বাংলাদেশ এগিয়ে যাক আরো সমৃদ্ধির দিকে এবং বিশ্ববাসী অপলক দৃষ্টিতে বাংলাদেশের এইসকল অর্জন দেখে শিক্ষা ও দিক্ষা নিক আর সরকার এবং জনগণের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শনে উজ্জিবীত হউক।