সদ্য উদযাপন করা ২১শে ফেব্রুয়ারীকে হৃদয়ে ধারণ ও লালন করে এগিয়ে যাওয়া এখন আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের দৈনন্দিন কাজ। সেই ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারীর এই দিনটি শুধুই একটি দিন বা দিবস নয় বরং একটি বিরত্বের ইতিহাস। এই ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত আছে মায়ের ভাষা, সাহস, শক্তি, আত্মত্যাগ এবং গভীর ভালবাসা ও দেশপ্রেম সর্বোপরি রক্তরঞ্জিত স্মৃতিগাথা বিরল এক ইতিকথা। পৃথিবীর বুকে এটিই প্রথম এবং এটিই শেষ। তবে বাংলা এবং বাঙ্গালী এই অবিচ্ছেদ্য ইতিহাসের স্বাক্ষী হতে চির জাগ্রত থাকবে কিয়ামতপূর্ব পর্যন্ত। রক্তেই মুক্তি এই কথাটি সত্য এবং ঐতিহাসিক ও আসমানি কিতাব দ্বারা স্বীকৃত।
রক্তের বিনিময়ে আদম ও হাওয়া পশুর চামড়ার পোষাক পরে পৃথিবীতে এসেছিল। রক্ত ছিটানোতে রক্ষা পেয়েছিল পূর্বেকার মানুষগুলো। রক্তের বিনিময়েই পৃথিবীর সকল মানুষ উত্তরাধিকারী সূত্রে পাওয়া পাপ ও খোদার সঙ্গে সম্পর্কের ছেদ থেকে মুক্তি পেয়ে পুনরায় মিলনের সুযোগ হয়েছে। এই রক্ত কখনোই বৃথা যায়নি এবং যাবেও না। ১৯৫২’র ভাষা শহীদদের রক্তের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১এর রক্তবহমান স্রোতে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশ। আর আজ সেই রক্তস্নাতেই স্বপ্নের সোনার বাংলার জয়যাত্রা। এই রক্তই আগামীতে বাংলাদেশকে বিশ্বনেতৃত্বের শীর্ষস্থানে অধিষ্ঠিত করাবে।
বর্তমানের সরকার ও জনগণ রক্তের জোয়ারেই এগিয়ে যাচ্ছে এবং পেছনে অনেক রক্ত ঝড়িয়ে আজকে অবস্থানে অধিষ্ঠিত হয়েছে। তাই আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানে একুশে ফেব্রুয়ারী আমি কি ভুলিতে পারি? ছালাম ছালাম হাজার ছালাম ছালাম শহীদ স্মরণে। চিরায়ত কথাগুলো মাগো আটই ফালগুনের কথা আমরা ভুলিনাই। ’৫২, ’৬৯, ’৭১ এবং তৎপরবর্তী দিনগুলোর সাথে ২১শে আগষ্ট আমাদেরকে তাড়না দেয় এবং আমরা তাড়িত হয়ে আগামীর পথে অগ্রসর হই। একুশ আমাদেরকে কথা বলতে শিখিয়েছে, মাথা উচু করে দাঁড়াতে শিখিয়েছে, প্রতিবাদ করতে শিখিয়েছে, দাবি আদায় করার কৌশল শিখিয়েছে। আরো শিখিয়েছে জীবন চলার পথে সকল প্রতিবন্ধকতাকে পরাজিত করে, পাশ কাটিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে। তাই ২১কে ভুলার কোন সুযোগ এবং শক্তি নেই। এই একুশের চেতনাকেই আকঁড়ে ধরে এগিয়ে যেতে হবে সমৃদ্ধির পথে।
একুশ প্রথম প্রহরে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, এবং দেশী-বিদেশী গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ সর্বোপরি দেশের আপমর জনসাধারণ। এই শ্রদ্ধা যেন একদিনের না হয় বরং প্রতিদিনের, প্রতিটি মুহুত্বের হয়। একুশে ফেব্রুয়ারীর সেই শৈশবীয় আমেজ আজ হারাতে বসেছে এবং শিক্ষার বিকাশের সাথে একুশকে বিদায় জানাতেও মরিয়া মহল বহাল তবিয়তে বিরাজমান রয়েছে। চোখ-কান খোলা রেখে ইতিহাস, ঐতিহ্যকে মানসপটে ভাসমান এবং দৃশ্যমান কর্মকান্ডের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কার্যকর করতে হবে।
এই সময়ে এসেও দেখতে হয় জুতা পায়ে শহীদ মিনাওে অবস্থান; জুতা পায়ে প্রভাত ফেরী, সকালের পরিবর্তে দুপুরে দুপুরফেরি, একুশের গানের পরিবর্তে হিন্দি, ইংরেজি গানের সাথে নাচের মাতম। কি হচ্ছে এবং আগামী দিনে কি হবে তার কোন খোজ রাখছেন কি? বিনিতভাবে অনুরোধ রাখছি আসুন আমরা সকলে মিলে এই অপচর্চা এবং অপসংস্কৃতি ও ইতিহাস বিকৃতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই এবং সঠিক ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং সঠিক দায়িত্বটুকু যার যার অবস্থান থেকে পালন করি এবং অন্যকে করতে সহযোগীতা করি। এই চেতনাই একুশের এবং (’৫২, ’৬৮, ’৬৯, ’৭১ এবং বর্তমানের) বর্তমান সরকারের চলমান ধারাবাহিকতার। আসুন একুশের চেতনায় নিজেদেরকে সমৃদ্ধ করি।