প্রশান্তি আন্তর্জাতিক ডেক্স ॥ ২০১৭ সালের রোহিঙ্গা সংকট আজও অমীমাংসিত রয়ে গেছে। এরইমধ্যে রাখাইন রাজ্যে আবারও শুরু হওয়া সশস্ত্র সংঘাত ওই এলাকার রোহিঙ্গা মুসলমানদের নতুন করে ঝুঁকির মুখে ফেলছে বলে মনে করে বাংলাদেশ।
রাখাইন রাজ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি এবং বেসামরিক নাগরিকদের ওপর, বিশেষ করে রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের ওপর এর প্রভাব নিয়ে গত বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা পরিষদে আয়োজিত এক উন্মুক্ত আলোচনায় জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত দেশের অবস্থান তুলে ধরেন।
স্থায়ী মিশন থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রাখাইন রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদকে অবহিত করেন জাতিসংঘের রাজনৈতিক এবং শান্তি বিনির্মাণ বিষয়ক সহকারী মহাসচিব খালিদ খিয়ারি এবং মানবিক সহায়তা সমন্বয় অফিসের পরিচালক লিসা ডাউটন। নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রগুলো ছাড়াও সভায় মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।
রাষ্ট্রদূত মুহিত তার বক্তব্যে বলেন, রাখাইনে সাম্প্রতিককালে উত্তেজনা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াও ব্যাহত হচ্ছে। পরিস্থিতির উন্নতি হলেই আবার এ প্রক্রিয়া শুরু করা হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এ সময় তিনি প্রত্যাবাসন ইস্যুতে প্রকৃত রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রদর্শন এবং ২০১৭ ও ২০১৮ সালে স্বাক্ষরিত দ্বিপাক্ষিক প্রত্যাবর্তন চুক্তি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার জন্য মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানান। এছাড়াও, রাখাইনে শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করা এবং ভবিষ্যতে প্রত্যাবর্তনকারীদের রাখাইনে সফলভাবে পুনর্বাসনে সহায়তা করার জন্য তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে আঞ্চলিক সংস্থাগুলো এবং আঞ্চলিক ও প্রতিবেশী দেশগুলোকে অর্থপূর্ণ এবং কার্যকরভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার অনুরোধ জানান।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের রেজুলেশন ২৬৬৯-এর কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত মুহিত বলেন, রাখাইনে একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরির জন্য রোহিঙ্গা সংকটের মূল কারণগুলো অনুধাবন করা জরুরি, যা মূলত মিয়ানমারের বিদ্যমান বৈষম্যমূলক আইনি ও রাজনৈতিক কাঠামোর মধ্যে অন্তর্নিহিত।
রাষ্ট্রদূত মুহিত আরও বলেন, “এই অন্তর্নিহিত সমস্যাগুলোর সমাধান করা না গেলে দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক প্রচেষ্টাগুলো সফল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।”
রাষ্ট্রদূত মুহিত মিয়ানমারে জাতিসংঘের উপস্থিতি জোরদার করার প্রয়োজনীয়তা এবং নিরাপত্তা পরিষদের রেজুলেশন-২৬৬৯ বাস্তবায়নের বিষয়ে নিয়মিত রিপোর্টিং, রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত করা এবং রাখাইনে সংকট সমাধানে বিভিন্ন সময়ে গৃহীত চুক্তি ও সুপারিশ বাস্তবায়নের বিষয়ে জোর দেন। এসময় তিনি মিয়ানমারের অন্য সব জাতিগোষ্ঠীর মতো রোহিঙ্গারাও যেন সমাজে সমান মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হতে পারে সে লক্ষ্যে উপযুক্ত এবং টেকসই পরিবেশ তৈরিতে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের যথাযথ ভূমিকার ওপর জোর দেন।
রোহিঙ্গাদের দীর্ঘস্থায়ী উপস্থিতির কারণে বাংলাদেশ যে নেতিবাচক সামাজিক, অর্থনৈতিক, পরিবেশগত এবং নিরাপত্তা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে তার কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত মুহিত রাখাইন পরিস্থিতির প্রতি নিয়মিত দৃষ্টি রাখা এবং রোহিঙ্গা সংকটের একটি পূর্ণাঙ্গ ও টেকসই সমাধানে দ্রুত ও অর্থপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য নিরাপত্তা পরিষদকে আহ্বান জানান।
দশ লাখেরও বেশি বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ যে মানবিক নেতৃত্বের নিদর্শন রেখে যাচ্ছে, বক্তারা তার ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা নিরাপদে নিজ গৃহে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য সবাইকে আহ্বান জানান।