প্রশান্তি আন্তর্জাতিক ডেক্স ॥ গত বছর প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার মানুষ অবৈধ পথে ইউরোপে প্রবেশ করেছে। দীর্ঘদিন ধরে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) চেষ্টা করছে অবৈধ পথে প্রবেশ বন্ধ করার জন্য। এ প্রেক্ষাপটে ইউরোপে অবৈধ প্রবেশে কড়াকড়ি নিয়ম আরোপ করতে যাচ্ছে তারা।
গত বুধবার (১০ এপ্রিল) ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট অভিবাসন ও রাজনৈতিক আশ্রয়-সংক্রান্ত নিয়ম কঠিন করার পক্ষে ভোট দিয়েছে। এটি পুরোপুরি কার্যকর হলে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ থেকে বৈধপথে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা সহজ হবে এবং অবৈধ পথে প্রবেশ কঠিন হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার মো. শহীদুল হক বলেন, ‘ইউরোপিয়ানদের আগ্রহ হচ্ছে বৈধ পথে মানুষের যাতায়াত এবং অবৈধদের ফেরত পাঠানো। গোটা বিষয়টিকে অবৈধভাবে না যাওয়ার একটি প্রণোদনা হিসাবে দেখা যেতে পারে। এটি একটি ভালো ও বাস্তবধর্মী পন্থা। এটি সবার জন্য লাভজনক হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি এটি বাংলাদেশের জন্য একটি সুযোগ। সরকারের নীতি হচ্ছে বৈধ পথে লোক পাঠানো এবং অবৈধ পথে পাঠানো নিরুৎসাহিত করা। ইউরোপের নীতির সঙ্গে বাংলাদেশের নীতির মিল আছে।’
কী আছে নতুন নীতিতে: দীর্ঘদিন আলোচনার পর ২৭-জাতি জোট ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পার্লামেন্টে ভোটে নতুন অভিবাসন ও রাজনৈতিক আশ্রয়-সংক্রান্ত নীতি অনুমোদিত হয়েছে।
নতুন নীতিতে দ্রুততার সঙ্গে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রক্রিয়া শেষ করা এবং যারা ব্যর্থ হবে, তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে বলা হয়েছে। অবৈধ পথে সবচেয়ে বেশি অভিবাসী প্রবেশ করে ইতালি, গ্রিস ও স্পেনে এবং অন্যান্য ইইউভুক্ত সদস্য ওই সব দেশকে অর্থ দিয়ে সহায়তা করবে অথবা প্রবেশকারী অভিবাসীদের একটি অংশকে তাদের দেশে আশ্রয় দেবে।
অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইউরোপে পাড়ি দেওয়ার চেষ্টাকালে অনেক সময়ই ঘটে দুর্ঘটনা (ছবি: সংগৃহীত)
যেসব প্রবেশকারীর রাজনৈতিক আশ্রয়ের সম্ভাবনা কম, মূল ইউরোপে প্রবেশের আগেই তাদের আবেদন দ্রুত নিষ্পত্তি করা হবে। ১২ সপ্তাহের মধ্যে তাদের আবেদন নিষ্পত্তির সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে এবং যারা ব্যর্থ হবে, তাদের পরবর্তী ১২ সপ্তাহের মধ্যে জোর করে দেশে ফেরত পাঠানো হবে। যারা প্রবেশ করবে, এমন ছয় বছরের বেশি প্রত্যেকের বায়োমেট্রিক ডাটা সংরক্ষণ করা হবে।
বৈধ পথে লোক পাঠানো : সরকারের নীতি হচ্ছে ইউরোপসহ সব দেশে বৈধ পথে লোক পাঠানো এবং অবৈধদের ফেরত নিয়ে আসা। ইউরোপ থেকে অবৈধদের ফেরত আনার জন্য ইইউর সঙ্গে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেশনাল প্রসিডিওর (এসওপি) সই করে। ওই চুক্তিটি ভালো কাজ করছে এবং এর ফলে চারটি দেশ জার্মানি, ইতালি, গ্রিস ও রোমানিয়া বাংলাদেশ থেকে বৈধ পথে শ্রমিক নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
এ বিষয়ে শহীদুল হক বলেন, ‘তারা অনেকের সঙ্গে শ্রমিক পাঠানোর বিষয়ে আলোচনা করছে। এখন আবার তাদের অর্থনীতি চাঙা আছে। তাদের শ্রমিকের প্রয়োজন আছে। তাদের নিজস্ব শ্রমিকের সংখ্যা কমছে। সব কিছু মিলিয়ে তারা একটি বাস্তবধর্মী পরিকল্পনা করছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।’
অভিবাসনের রাজনীতিকরণ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি আছে কিন্তু যেটি দেখা যাচ্ছে, এখানে অর্থনীতি নির্ধারণ করছে আসলে বাস্তবে কী প্রয়োজন। এখানে রাজনীতি থেকে শ্রমবাজারের যে রসায়ন, সেটি বেশি কাজ করছে।
দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ অনেক দিন ধরে চেষ্টা করছে, কিন্তু এটি পদ্ধতিগত ত্রুটির কারণে সম্ভব হচ্ছে না বলে তিনি জানান।