চাহিদার চেয়ে পশু বেশি কিন্তু কিনতে হবে বেশি দামে

প্রশান্তি ডেক্স ॥ আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে শুরু হয়ে গেছে কোরবানির পশুর হিসাব-নিকাশ। রাজশাহীর সাপ্তাহিক হাটে গরুর সরবরাহ যেমন বেড়েছে, তেমনি বাইরের ব্যবসায়ীদের আগমন বেড়েছে। পাড়া-মহল্লায় গরু ব্যবসায়ীদের যাতায়াতও বেড়েছে। একটু কম দামে গরু কিনতে অনেকে অগ্রিম টাকা দিচ্ছেন। অনেক খামারি বাজারদর যাচাইয়ে হাটে যাচ্ছেন। তবে শেষ হিসাব-নিকাশে যাইহোক, উৎপাদন খরচ বাড়ায় কোরবানির পশু গতবারের চেয়েও বাড়তি দামে কিনতে হবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও খামারিরা।

জেলা প্রাণিসম্পদ দফতর সূত্র জানায়, এ বছর কোরবানির জন্য চার লাখ ৬৬ হাজার ১৯৬টি পশু প্রস্তুুত আছে। এর মধ্যে গরু ৮৩ হাজার ৩৬৫টি, মহিষ তিন হাজার ৭৬৯টি ও ছাগল তিন লাখ ৪২ হাজার ৭৫৩টি। প্রতি বছরের মতো এবারও স্থানীয় চাহিদার তুলনায় বেশি পশু আছে। অন্তত ৫০ হাজার উদ্বৃত্ত থাকবে।

খামারিরা বলছেন, কোরবানির পশুর দাম এবারও বেশি হবে। কারণ উৎপাদন খরচ বেড়েছে। উৎপাদন খরচ বাড়ায় তাদের লাভের পরিমাণ কমবে। তবে কেউ লোকসান দিয়ে বিক্রি করবে না। এখন কিনলে কিছুটা কমে বিক্রি হবে। কোরবানির হাটে তারা প্রত্যাশা অনুযায়ী দাম না পেলে পশু বিক্রি করবেন না।

এমনটি জানিয়েছেন পবা উপজেলার খামারি তারেক ইসলাম। আমার খামারে আটটি মহিষ আছে জানিয়ে এই খামারি বলেন, ‘সাত মাস ধরে মহিষগুলো পালন করছি। বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার গোখাদ্যের দাম বেশি। সঙ্গে অন্যান্য খরচও বেড়েছে। কোরবানির ঈদের অন্তত ১০ দিন আগে থেকে মহিষ হাটে তুলবো। তবে এখন থেকে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা আসছেন। মহিষগুলো দেখছেন। কিন্তু কাঙ্খিত দাম বলছেন না। আর প্রত্যাশা অনুযায়ী দাম না পেলে বিক্রি করবো না। আশা করছি, ঈদের আগে ভালো দাম পাবো।’

কোরবানি সামনে রেখে পশু পালন করছেন পবার উজ্জ্বল হোসেন। কোরবানিতে বিক্রির উপযোগী দুটি ষাঁড় আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ওজনে সাত-আট মণের বেশি হবে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দেখতে আসছেন। কিন্তু এখন যে দাম বলছেন, তাতে খরচ উঠবে। আরও মাসখানেক আছে। কিছুটা লাভ পেলেই বিক্রি করে দেবো।’

গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে দু’একটি করে পোষা গরু আছে জানিয়ে রাজশাহীর গরু ব্যবসায়ী আইনাল হক বলেন, ‘খামারের গরুর চেয়ে এগুলোর চাহিদা বেশি। ঈদের মাসখানেক সময় থাকলেও এখন থেকেই বেচাকেনা শুরু হয়েছে। তাই পাড়া-মহল্লায় ঘুরে দেখছি। তবে উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় এবার দামও বেশি। ফলে আগের বছরগুলোর চেয়ে এবার বেশি দামে পশু কিনতে হবে ক্রেতাদের।’

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীর বড় পশুর হাট ‘সিটি হাট’। ঈদ ঘিরে এই হাটে পশুর সরবরাহ বেড়ে গেছে। বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা আসছেন। তবে এখনও সেভাবে বেচাকেনা শুরু হয়নি।

সিটি হাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান কালু বলেন, ‘সপ্তাহে রবিবার ও বুধবার হাট বসে। কোরবানির পশু হাটে আসতে শুরু করেছে। তবে এখনও বেচাকেনা জমে উঠেনি। ঈদের ১০-১৫ আগে থেকে জমে উঠবে।’ রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. জুলফিকার মো. আখতার হোসেন বলেন, ‘জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্তত ৫০ হাজার পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। তবে এবার যেহেতু উৎপাদন খরচ বেশি, গোখাদ্যের দামও বেড়েছে সেহেতু গতবারের চেয়ে পশুর দাম বেশি হওয়া স্বাভাবিক। তবে দাম অতিরিক্ত হবে না, এটা বলা যায়।’

Leave a Reply

Your email address will not be published.