প্রশান্তি ডেক্স ॥ ব্রিটেনে অ্যাসাইলাম আবেদন খারিজ হওয়া বাংলাদেশিদের একটি চুক্তির আওতায় দ্রুত বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে ব্রিটিশ সরকার।
চলতি সপ্তাহে লন্ডনে স্বরাষ্ট্রবিষয়ক প্রথম যৌথ ইউকে-বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপ এ চুক্তিতে সম্মত হয়। উভয় দেশ তাদের অংশীদারত্ব জোরদার করতে এবং অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক বিষয়ে সহযোগিতা এগিয়ে নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সরকার।
ব্রিটেনের অবৈধ অভিবাসনবিষয়ক মন্ত্রী মাইকেল টমলিনসন বাংলাদেশের সঙ্গে একটি ফাস্ট-ট্র্যাক রিটার্নস চুক্তি স্বাক্ষর করেন। যাতে শুধু ব্যর্থ আশ্রয়প্রার্থীই নয়, বিদেশি অপরাধী এবং ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়া ব্যক্তিদের দেশে ফেরত পাঠানো সহজ হবে।
এ ব্যাপারে টমলিনসন বলেন, ‘অবৈধভাবে ব্রিটেনে আসা বা থাকা বন্ধের জন্য অপসারণের কাজ ত্বরান্বিত করা আমাদের পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বাংলাদেশ আমাদের মূল্যবান অংশীদার। আমরা তাদের সঙ্গে এই বিষয় ও অন্যান্য বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের সম্পর্ক জোরদার করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যেই স্পষ্ট প্রমাণ দেখেছি যে এই চুক্তিগুলো অবৈধ অভিবাসনের ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। বৈশ্বিক সমস্যাগুলোর সমাধান প্রয়োজন। আমি সবার জন্য একটি ন্যায্য ব্যবস্থা তৈরি করতে বাংলাদেশ ও অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করতে উন্মুখ।’
গত বছর প্রায় ১১ হাজার বাংলাদেশি বিভিন্ন ভিসা নিয়ে ব্রিটেনে প্রবেশ করে স্থায়ীভাবে দেশটিতে বসবাসের উদ্দেশে আশ্রয়ের আবেদন জমা দেন। এরা স্টুডেন্ট, ওয়ার্ক পারমিট ও ভিজিট ভিসায় ব্রিটেনে প্রবেশ করে অ্যাসাইলাম আবেদন করেন। এদের মধ্যে মাত্র পাঁচ শতাংশের আবেদন প্রাথমিক পর্যায়ে সফল হয়।
নতুন চুক্তির বড় কারণ, আশ্রয়প্রার্থীদের ব্যাপারে হোম অফিস মানবাধিকারসহ নানা আইনের কারণে নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে বাধার সম্মুখীন হয়। গত বছরের মার্চ পর্যন্ত ব্রিটেনে বিভিন্ন ভিসায় এসে ২১ হাজার ৫২৫ জন অ্যাসাইলাম আবেদন করেন। যা আগের বছরের তুলনা ১৫৪ গুণ বেশি।
এর মানে প্রতি ১৪০ জনের মধ্যে একজন যারা বিভিন্ন ভিসায় প্রবেশ করে ব্রিটেনে আশ্রয় দাবি করেছেন। আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন ১৭ হাজার ৪০০ পাকিস্থানি, বাংলাদেশি ১১ হাজার, ভারতীয় সাত হাজার ২০০, নাইজেরিয়ান পাসপোর্টধারী ছয় হাজার ৬০০ ও আফগানিস্থানের ছয় হাজার জন।
গত বৃহস্পতিবার (১৬ মে) রাতে চুক্তির ব্যাপারে জানতে চাইলে লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার আশিকুন নবী চৌধুরী বলেন, ‘এ ব্যাপারে এখনও বাংলাদেশ হাইকমিশন কোনও প্রেস রিলিজ দেয়নি।’ তাই তিনি এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে পারবেন না।
এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে গিয়ে লন্ডনের চ্যান্সেরি সলিসিটরের ব্যারিস্টার মো. আলিমুল হক লিটন বলেন, ‘এ চুক্তির ফলে ব্রিটেনে অতি সম্প্রতি আশ্রয় প্রার্থনা করা কয়েক হাজার বাংলাদেশিকে দ্রুত ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে। এতে বহু প্রকৃত আবেদনকারীও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।’
উল্লেখ্য, গত বছর যুক্তরাজ্যে বসবাসের অধিকার নেই এমন ২৬ হাজার মানুষকে তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। যা ২০২২ সালের তুলনায় ৭৪ শতাংশ বেশি।