কসবা উপজেলা নির্বাচনে অর্জীত অভিজ্ঞতা

প্রশান্তি ডেক্স॥ গত ২১তারিখ কসবা উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচন ঘীরে নির্বাচনী মাঠ চাঙ্গা থাকে এবং দুইটি দলে বিভক্তির সৃষ্টি হয়। তবে একটি দলে শুধু গুটি কতেক নেতা এবং প্রার্থী নির্ভর ছিল। তবে কর্মীর দিকদিয়েও তারা দুর্বল ছিল। এমনকি অনিশ্চয়তায় ছিল। আরেকটি দল সার্বিকভাবে অগ্রগামীতায় ছিল। কারণ এলাকার সকল নবীন ও প্রবিন নেতারা আর সাধারণ জনগণ দল ও মতের উদ্ধে উঠে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামাত এবং কোন দলে না ভিরা মানুষজন ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিজয়ের মালা ছিনিয় নেয়।

কসবায় নির্বাচন হয়েছে আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক এই দুজনের মধ্যে। একজন হলেন সাবেক দুইবারের এপিএস (আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মাননীয় মন্ত্রীর), বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান এবং দলের উপজেলা সাধারণ সম্পাদক। এই সুবাদে দলের নেতা ও কর্মিরা তার সঙ্গে লেগে থেকে কাজ করেছেন। তিনি ক্ষমতাশালী ব্যক্তি এবং অর্থশালী ব্যক্তি তাই তার রাজত্ত্বের জোয়ার বইছিল। তবে টাকার খেলায় তিনি নির্বাচন উৎরাতে কর্মী সমর্থকদের নিয়ে চেষ্টা করেছেন।

আরেক জন হলেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। তিনি তৃণমূলের রাজনীতিবিদ। তার রাজনীতির হাতে খড়ি উপমহাদেশের প্রখ্যাত আইনজীবি এবং বাংলাদেশ সংবিধান প্রবক্তাদের একজন, সাবেক মন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মরহুম জনাব এডভোকেট সিরাজুল হক বাচ্চু মিয়া সাহেবের হাতে। তিনি জনাব বাচ্চু মিয়া সাহেবের ভগ্নিপতি (ভাগিনা) আর বর্তমান আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী মহোদয়ের ফুফাত ভাই। তাঁর স্বচ্ছ ভাবমূর্তী এবং অমায়িক ব্যবহার এবং সামাজিক নম্রতা ও ভদ্রতায় আকৃষ্ট হয়ে মানুষজন তাকে মনোনিত করে বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেয়। তবে এই সজ্জ্বন ব্যক্তিটি নির্বাচনে অতি সাধারণ থেকেছেন এবং কোন অর্থ ব্যায় করেননি। তবে ভোটার এবং তাঁর সমর্থকরা ব্যক্তিগতভাবে তাঁর নির্বাচনী ব্যায় নির্বাহ করেছেন।

জনাব ছায়দুল হক স্বপন সাহেবের পক্ষে ছিলেন উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারগণ এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের নতুন ও পুরাতন নের্তৃবৃন্ধ। জেলা পরিষদের প্যানেল মেয়র এম এ আজিজ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি কাজি আজহার এবং উপজেলা আওয়ামী লীগ এর সিনিয়র সহ সভাপতি ও বর্তমান কসবা পৌর মেয়র জনাব এম জি হাক্কানী সহ পৌর এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের নের্তৃবৃন্ধ। সবচেয়ে বড় কথা হলো এলাকার সর্বস্তরের জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে জনাব স্বপন সাহেবের পক্ষে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন এবং শেষ হাসিটুকু ছিনিয়ে নিয়েছিলেন।

এই বিজয়ে বড় শিক্ষা আমাদেরকে হাতছানি দিয়ে বলে যাচ্ছে:- নম্রতা এবং ভদ্রতা ও সেবার মনোভাব একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পারিবারিক ঐতিহ্য এবং নি:লোভ সততা এবং দাম্ভিকতা বিহীন নিরহংকারী মানুষ হিসেবে এলাকার সবার প্রীয় পাত্রে পরিণত হয়েছেন জনাব স্বপন সাহেব। এটাই ছিল তাঁর বিজিত হওয়ার মূল মন্ত্র। মানুষকে সম্মান করা ও সম্মানের স্থানে পৌছে দেয়া আর মামলা- হামলার উদ্ধে সকলকে নিয়ে একসাথে পথচলা; নি:ঝঞ্জাল থাকা এবং মানুষকে রাখা এই দুইয়ে তিনি উর্ত্তীর্ণ। সকলকে সমান গুরুত্ব দেয়া এবং সকলের প্রয়োজনে নি:স্বার্থভাবে পাশে থাকাই স্বপনের অগ্রগামীতার মূলমন্ত্র। এলাকাবাসী এই মানুষটিকে বেছে নিয়েছে আগামীর প্রশান্তির জন্য। এক ৮০উদ্ধ ভোটার এবং ৬০উদ্ধ সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানের ভোট কেন্দ্রে ভোটদান শেষের উক্তি হল-“আজ এই ভেবে প্রশান্তি নিয়ে বিদায় নিলাম যে একজন অহংকারী ও দাম্বিক মানুষকে বিতারিত করে একজন সুন্দর স্বজ্জ্বন মানুষকে উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে কসবা উপজেলাবাসীকে উপহার দিলাম।”

তবে পরাজিত প্রার্থীর সবই ছিল কিন্তু ছিলনা যেটুকু তা হলো- অন্যকে সম্মান করার আন্তরিকতা এবং নিরহংকার ও সততা। এই তিনটি জিনিসের ঘাটতির ফলশ্রুতিতে এলাকার ঐক্যবদ্ধ জোটের কাছে বিশাল ব্যবধানে পরিজিত হয়েছেন। তবে এটাই প্রাপ্য এবং প্রাপ্তি যে, এই নির্বাচনে কোন অপ্রীতিকর ঘটনার জন্ম হয়নি। উভয়েই সমানে সমানে পাল্লাদিয়ে এগিয়েছেন এবং একজন দিয়েছেন গালি ও সমালোচনা আর আরেকজন করেছেন আশির্বাদ হিসেবে গ্রহণ। তাই গালি ও বুলি এবং সমালোচনায় মানুষের মন গলাতে পারেনি বরং গালিকে আশির্বাদ হিসেবে গ্রহন করা মানুষের হৃদয় ছুঁতে পেরেছে এবং বিজয় ফসল ঘরে তুলতে পেরেছে।

এখানে উল্লেখ্য যে, কসবা এবং আখাউড়ায় ইউপি এবং উপজেলা এই দুইটি নির্বাচন ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকবে। যা মাননীয় আইন মন্ত্রীর ঐকান্তিক ইচ্ছার বহি:প্রকাশ এবং প্রতিফলন। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই দুটি নির্বাচন স্বচ্ছ এবং জন আকাঙ্খার প্রতিফলন শতভাগ নিশ্চিত করেছে। আমার সুযোগ হয়েছে এই নির্বাচন দুটি স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করার। নিখুত বা খোতবিহীন নির্বাচন যাকে বলে তা হলো কসবা আখাউড়ার ইউপি এবং এবারের উপজেলা নির্বাচন। তবে এই নির্বাচন সম্পর্কে মাননীয় আইন মন্ত্রী মসজিদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন ওনার অভিপ্রায়ের কথা আর সেই কথা রেখেছেনও। যেমন মন্ত্রী হলেন জনগণের এবং এই নির্বাচনে জনগণ যাকে নির্বাচিত করবে তিনি তার সঙ্গেই কাজ করবেন। দুইজন প্রার্থীই ওনার কাছের মানুষ। আর দলের লোকজন একই পরিবারের তাই কেউ যেন কাউকে ক্ষেয়প্রতিপন্ন না করেন এমনকি ভাষা ব্যবহারে মার্জিত এবং সমযত আচরণ করেন। কারণ নির্বাচন শেষে সবাই একই জায়গায় বসে কাজ করবেন। প্রশাসনকে বলেছেন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে যা যা করনীয় তার সবটুকুই যেন করেন। হ্যা হয়েছেও তাই।

একটি বিষয় অত্যান্ত পরিতাপের এই কারণে যে, আমরা দুজনই আওয়ামী পরিবারের লোক এবং মন্ত্রী মহোদয়ের কাছের মানুষ। সুতরাং নির্বাচন হলো কৌশল এবং উপরওয়ালার মর্জীমাফিক দায়িত্ব বন্টনের ফল। তাই এই নির্বাচনে জয় পরাজয় থাকবেই। এই জয় পরাজয় থেকেই শিক্ষা নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। নির্বাচন এবং জয় পরাজয় দিয়ে নিজেকে, দলকে, মন্ত্রীমহোদয়কে এবং নির্বাচনি ব্যবস্থাকে কলূষিত করা বা খেয়প্রতিপন্ন করা এমনকি অন্যকে নির্বাচন নিয়ে কথা বলার উদাহরণসহ সুযোগ করে দেয়া দুজনের কারোরই কাম্য নয়। কিন্তু হয়েছে যা দৃশ্যমান তা লজ্জাস্কর।

নির্বাচনী নেতিবাচক রেওয়াজের বাইরে দলীয় লোকজনও উঠতে পারলো না এটাই দু:খের। কারন আপনিতো নির্বাচন বিহীন জয়ী হয়েছেন, আপনি নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছিলেন এবং সেই প্রহসনে বিরোধীদল বিএনপি এবং জামাত সমর্থক ও কর্মী আর নেতারা হেসেছেন এবং মানুষের কাছে বলেছেন। বিশেষ করে রুহুল কবির রিজবী ও জনাব ফখরুল সাহেব হরহামেশাই এই কমন অভিযোগগুলো করে যাচ্ছেন যা আপনি নির্বাচনের দিন থেকে নির্বাচন পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে করেছেন। এতে করে মনে হচ্ছে ছায়দুর সাহেব আওয়ামী লীগের এবং আপনি বিএনপির। যাক এই কথাগুলো অতি দু:খে বললাম। বিষয়টি আরো সুন্দর হতে পারতো। যদি আপনি নির্বাচনকে মেনে নিয়ে একসঙ্গে পূর্বের ন্যায় কাজ করার মানুষিকতা এবং দলীয় কর্মী ও সমর্থকদের ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার উৎসাহ দিতেন। কারণ আপনারতো কমতি নেই। আপনি দলের উপজেলা সাধারণ সম্পাদক এবং সদ্য বিদায়ী উপজেলা চেয়ারম্যান। আপনার উপর অনেক দায়িত্ব। আপনি ম্যাচিউর এবং আগামি দিনের উদাহরণ। কিন্তু উদাহরণ হলেন ঠিকই যা হলো আপনার বিপক্ষে নেতিবাচকতার পক্ষে আর আপনার ইতিবাচক ইমেজের বিপরীতে।

আপনি সারাজীবনই বলেছেন মাননীয় মন্ত্রী আপনার অভিভাবক কিন্তু নির্বাচনে হেরে গিয়ে এই অভিবাবকত্ব পরিবর্তন করেছেন এবং মন্ত্রী মহোদয়কে ছোট করার কাজে নেমে পড়েছেন। মনে হয় আপনি হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে এই শিশুশুলব বাক্যালাপে লিপ্ত হয়েছেন। দোয়া করি আপনার জ্ঞান ফিরে আসুক এবং সুন্দর আগামীর বিনির্মানে চাল-চলন-বলন এমনকি কথা-বার্তা ও আচরণে সংযত হউন। আগামীতে অনেক নির্বাচন অপেক্ষা করছে-এই নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিয়ে সকলের সঙ্গে আন্তরিকতা এবং অতিতের ভুলগুলো শুধরিয়ে আগামীর যাত্রাপথ কুসুমাস্তির্ণ করুন। নিজেকে আর নিচে নামিয়ে নিয়ে নিজের খোড়া গর্তে নিজে পা দিয়েন না। বরং আপনার সামনে দৃষ্টান্ত হিসেবে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করুন।

আমি আমার অভিজ্ঞতা এবং দৃশ্যমান বাস্তবতার আলোকে লিখলাম। কেউ কষ্ট পেলে ক্ষমা করবেন এবং এখান থেকে শিক্ষা নিবেন। আওয়ামী লীগ একটি পরিবার এবং এই পরিবারের কান্ডারী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর আমাদের কসবা ও আখাউড়ায় কান্ডারী ও আওয়ামী পরিবারের ঐক্যের ধারক ও বাহক হলেন এডভোকেট আনিছুল হক শ্যানন সাহেব। মাননীয় মন্ত্রীর পারিবারিক বন্ধনকে শক্তিশালী করুন। নিজেরা সুস্থ্য এবং সুন্দর থাকুন আর অন্যদেরকে সুস্থ্য ও সুন্দর রাখুন। আসুন পুরাতনের ইতিবাচক অভিজ্ঞতা দিয়ে নতুনকে সহায়তা করি এবং সফল উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে ছায়দুর রহমান স্বপনকে সুপ্রতিষ্ঠিত করি যেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অভিপ্রায় স্বপনের মাধ্যমে জনতার ঘরে ঘরে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। এমনিতেই জনাব স্বপনের উপর জনআকাঙ্খা বেশী। অতিমাত্রায় জনপ্রীয় স্বপন সাহেব এখন জনপ্রীয় চেয়ারম্যান এবং আপনি আপনার কাজের অভিজ্ঞতা এবং যা শেষ করে যেতে পারেননি সেইগুলোসহ দলীয় এবং মানবীক ও সামাজিক আর ব্যক্তিগত সকল কিছুতেই সহযোগীতায় এগিয়ে আসুন। সকলের সঙ্গে কুশলাদিতে বিলিন হউন। একা ও একলা চলো নিতী পরিহার করে আওয়ামী ঐক্যে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ক্ষুদ্র স্বাথ্য ত্যাগ করে বৃহৎ স্বার্থকে স্বার্থকভাবে রূপদান করুন। জয় হউক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের এবং জয় হউক মাননীয় আইন মন্ত্রী মহোদয়ের আর সর্বোপরি জয় হউক সদ্য হয়ে যাওয়া স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ দৃষ্টান্তমূলক উপজেলা নির্বাচনের।

Leave a Reply

Your email address will not be published.