বাআ॥ তিনি জাতিকে নতুন এক আশা দিয়েছিলেন, সেই আশার নাম, রুপকল্প-২০২১। বাংলাদেশকে একটি মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত করার সেই আশা। ২০১৮ সালে জাতিসংঘের উন্নয়ন কমিটি বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তিনি স্বপ্ন দেখিয়েছেন সব বাংলাদেশীকে, এক ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন যেখানে সর্বাধুনিক তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষ জনশক্তি থাকবে এবং স্বাধীনতার চার দশক পরে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে জাতিকে কলংকমুক্ত করছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন অনুকরনীয় নেতৃত্ব-খাদ্য নিরাপত্তা, শান্তি চুক্তি, সমুদ্র বিজয়, নারীর ক্ষমতায়ন, অর্থনৈতিক উন্নতি, জিডিটাল বাংলাদেশ রূপদন এবং স্মার্ট বাংলাদেশের যাত্রারম্ভ ও ২০৪১এর রূপকল্পের সাথে আগামী ১০০ বছরের পরিকল্পনা। দেশ থেকে দারিদ্রতা ও ভুমিহীন আর ঘরহীন অবস্থা বিতারিত করা এমনমকি শতভাগ বিদ্যুতায়িতক করা, কর্ণফুলি টানেল, মেট্ট্রোরেল, পাতাল রেল, উড়াল সড়ক (এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে) সারা বাংলার যোগাযোগ ব্যবস্থার স্মার্ট উন্নয়নসহ আরো অনেক অনেক এবং সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ স্বাধীনতার মর্যাদা রক্ষায় সমুজ্জ্বল।
আততায়ীর হাতে নিহত বাবা মা, খুনীর রক্তে রঞ্জিত তার ভাইয়েরা, শেখ হাসিনা আসলে শত্রুর আগুনের ছাই থেকে উঠে আসা এক মানুষ যিনি দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। বিপথগামী একদল সেনা কর্মকর্তার হাতে তার বাব মা ভাই সহ পুরো পরিবার নিহত হবার পরে তিনি ৬ বছর নির্বাসনে ছিলেন। ১৯৮১ সালে তার ফিরে আসা ছিলো গণতন্ত্রের ফিরে আসা, দেশের উন্নয়ন ও প্রগতির ফিরে আসা সেই সাথে অনির্বাচিতভাবে ক্ষমতাসীন সরকারের বিদায়। নিজের নীতি ও আদর্শকে সমুন্নত রাখার এই যাত্রায় ১৯ বার আততায়ীর হামলার শিকার হয়েছেন যার মধ্যে সর্বশেষ ছিলো ২০০৪ এর ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলা।
এখনো তাঁর হাসি প্রাণবন্ত। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ হাসিনার স্বপ্নের সোনার বাংলা যেখানে থাকবে না ক্ষুধা ও দারিদ্র্য, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্যেই বেঁচে আছেন তিনি। জাতীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ‘নৌকা’র মাঝি এখন তিনিই।
আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা, এই ৭৫ বছর বয়সেও, তাঁর কাছে দেশের চেয়ে বড় কিছু নাই। তাঁর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় এবং কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলও মায়ের মত একই আদর্শ ধারণ করেন। তার প্রয়াত স্বামী ডঃ এম ওয়াজেদ মিয়া ছিলেন একজন স্বনামধন্য পরমাণু বিজ্ঞানী।
উন্নয়নের পথ প্রদর্শক : শেখ হাসিনার দিনবদলের যাত্রা শুরু হয়েছিলো ২০০৮ সালে। ২৯শে ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০টির মধ্যে ২৬৪ টি আসনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট জয়লাভ করলে শুরু হয় রুপকল্প ২০২১ এর পথে শুভযাত্রা।
তাঁর নেতৃত্বে ২০১৮-১৯ সালে জাতীয় প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৮.৫ শতাংশ পর্যন্ত পৌছায়। করোনা মহামারীর কারণে দেশে দেশে লকডাউন, আমদানি-রপ্তানিতে বাধার কারণে ২০২০ সালে প্রবৃদ্ধিতে হ্রাস ঘটলেও ২০২১-২২ সালে ৭.২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে বর্তমানে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২৮২৪ মার্কিন ডলার। তাঁর উদ্যোগের ফলে করোনা মহামারীর মধ্যেও রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স আয় করেছে বাংলাদেশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের রেকর্ড হয়েছে বলে জানিয়েছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো। এই অর্থবছরে বাংলাদেশ ৫২.০৮ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে রপ্তানি খাত থেকে।
১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অতন্দ্র প্রহরী : বাংলাদেশের পতাকা যারা ধ্বংস করতে চেয়েছিলো, তাদের হাতে পতাকা সুরক্ষিত নয়। কিন্তু পুর্ববর্তী সরকার, সেই যুদ্ধাপরাধীদের গাড়িতে পতাকা বহনের সুযোগ করে দিয়েছিলো মন্ত্রী করে। ২০০৮ সালে নির্বাচিত হয়ে, শেখ হাসিনে জাতিকে সেই লজ্জা থেকে নিস্কৃতি দিয়েছেন। তিনি বহু আকাংক্ষিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছেন। তাঁর সরকারের অধীনেই আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনাল গঠন করা হয়। চারজন কুখ্যাত দাগী যুদ্ধাপরাধীর ইতোমধ্যেই ফাঁসীতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছে। আরো অনেকেই বিচারের অপেক্ষায় আছে। এই বিচার ৩০ লক্ষ শহীদ ও ৩ লক্ষ নির্যাতিত নারীর আত্মার সম্মান রক্ষার জন্যে।
বিশ্বশান্তির দুত : তার প্রথম শাসনামলে (১৯৯৬-২০০১) শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেন, যার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি ও বাঙ্গালীদের মধ্যের দীর্ঘদিনের সশস্ত্র সংগ্রামের সমাপ্তি হয়। ১৯৯৮ সালের ১০ই ফেব্রুয়ারি, শান্তি বাহিনীর প্রধান জ্যোতিরিন্দ্র লাড়মা খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অস্ত্র সমর্পন করে। ১৯৯৮ সালে শেখ হাসিনা ভারত পাকিস্থানে যান, তাদেরকে পরমাণু যুদ্ধ থেকে বিরত থাকার আহবান জানাতে। এর আগে দুই দেশের মধ্যে পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষামুলক বিস্ফোরণের কারনে উত্তেজনা চলছিলো। মিয়ানমারে জাতিগত সহিংসতার শিকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিকে আশ্রয় দিয়ে সারা বিশ্বে Mother of Humanity হিসেবে ভুষিত হয়েছেন তিনি। ২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশ ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে, পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ সরকারি উদ্যোগে শরনার্থীদের নিশ্চিত অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ইত্যাদি মৌলিক চাহিদার যোগান নিশ্চিত করছে। শুধু আশ্রয়ই নয়, ভাসান চরে অত্যাধুনিক শরণার্থী ক্যাম্প স্থাপন করে উন্নত দেশগুলোকেও বিস্মিত করেছেন শেখ হাসিনা।
বৈদেশিক কূটনীতিতে দূরদর্শী নেতা : দূরদর্শী বিদেশ নীতির মাধ্যমে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সাথে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ও বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলোর সাথে সর্বকালের সবেচেয়ে নৈকট্যপুর্ণ সম্পর্ক স্থাপনে সমর্থ হয়েছেন। পার্বত্য শান্তি চুক্তির জন্যে তিনি ইউনেসকো শান্তি পুরস্কার পান। ১৯৯৮ সালে তিনি নিখিল ভারত পরিষদের কাছ থেকে মাদার তেরেসা পদকও পান। ১৯৯৯ সালের ১৫ই মে, তিনি হেগ শান্তি পরিষদের সমাপনী অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন। ১৯৯৯ সালে, শেখ হাসিনা সেরেস শান্তি পদক পান যা বিশ্ব খাদ্য পরিষদের পক্ষ থেকে সরকারপ্রধানদের দেয়া সর্বোচ্চ পুরস্কার।
গণতন্ত্রের পথপ্রদর্শক : ১৯৭৫-১৯৯৫- এই সময়, দেশকে গণতান্ত্রিক পথে ফিরিয়ে আনতে অগ্রণী ভুমিকা রাখেন শেখ হাসিনা। ১৯৭৫ সালে তার পিতাকে পুরো পরিবারসহ মেরে ফেলা হয় বিপথগামী কিছু আর্মি অফিসারের নেতৃত্বে। শেখ হাসিনা ৬ বছর নির্বাসনে থেকে ১৯৮১ সালে দেশে ফেরেন। সেই থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত ৯টি দীর্ঘ বছর রাজপথে নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন সামরিক স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে। ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে তার দল হয় প্রধান বিরোধী দল।
১৯৯৬-২০০০ : শেখ হাসিনার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভ করে ক্ষমতায় আসে। সেই সময় তার সরকার যমুনা বহুমুখী সেতু নির্মাণ করে, যা ছিলো সেই সময় বিশ্বের দীর্ঘতম সেতুর তালিকায় একাদশতম। ১৯৯৮ সালের বন্যার সময়ে, তাঁর সরকার ২ কোটি বন্যা দুর্গত মানুষকে বিনামুল্যে খাদ্য প্রদান করে। তাঁর নেতৃত্বাধীন সেই সরকারের আমলে উল্লেখযোগ্য সাফল্যসমুহ হচ্ছে, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, পার্বত্য শান্তি চুক্তি, ২১শে ফেব্রুয়ারিকে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা, এবং বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি।
২০০১-২০০৭ : ২০০১ থেকে আবারো জাতির ইতিহাসে কালো অধ্যায় শুরু হয়। বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় আসে। যুদ্ধাপরাধীদেরকে দেয়া হয় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। এই সময়েই জঙ্গীবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠে, ৬৪ জেলায় বোমা বিস্ফোরন ঘটায়। ২০০৪ সালের ২১শে আগষ্ট শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে রাজধানী ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে তার জনসভায় গ্রেনেড হামলা করা হয়।
২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগের সর্বাত্মক আন্দোলনের ফলে সাজানো নির্বাচন বাতিল করতে বাধ্য হয় ততকালীন সরকার। জরুরী অবস্থা ঘোষিত হয়। নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন হয়। শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে নির্বাসনে পাঠানোর ষড়যন্ত্র করা হয়। ২০০৭ এর ১৬ জুলাই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
২০০৮-২০১৩ : ব্যাপক জনবিক্ষোভের মুখে তাঁকে ২০০৮ এর ১১জুন প্যারোলে মুক্তি দেয়া হয়। তিনি চিকিৎসার জন্যে বিদেশ যান এবং ডিসেম্বরের ৪ তারিখে দেশে ফিরেন। ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায়, শেখ হাসিনা “দিন বদলের সনদ” তাঁর নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একচেটিয়া বিজয় লাভ করে। তাঁর এই শাসনামলে, জাতীয় প্রবৃদ্ধি বেড়ে হয় ৬.৫১, সকল খাতের ডিজিটালাইজেশন করা হয়, অবকাঠামো খাতের ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়, জঙ্গীবাদ কঠোর ভাবে দমন করা হয় এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায় এবং রায় কার্যকর শুরু হয়।
২০১৪-২০১৮ : রুপকল্প-২০২১ এ সাধারণ মানুষের বিশ্বাস এবং ভরসার জন্যে সাধারন মানুষ তাঁকে ২০১৪ তে নির্বাচিত করে। এই বার, তাঁর সরকার নিজ উদ্যোগে এবং অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ শুরু করে যা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলকে রাজধানী ঢাকার সাথে সংযুক্ত করবে। তার সাথে, ঢাকায় মেট্রো রেইল প্রকল্প, দেশের প্রথম পরমাণু বিদ্যুত প্রকল্প, ঘরে ঘরে বিদ্যুত নিশ্চিতকরণ, জাতীয় প্রবৃদ্ধি ৭ এ উন্নীতকরণ সহ আরো কিছু মেগা প্রকল্প হাতে নিয়ে দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। ২০১৮ সালেও টানা তৃতীয়বারের মতো জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভ করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় জির্বাচনে জয়লাভ করে টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন শেখ হাসিনা।
২০২০ সালের শুরুতেই সারা বিশ্বসহ বাংলাদেশে যখন করোনাসংকটে নানা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে তখন তা মোকাবিলায় দ্রুত নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১ লক্ষ ৩৪ হাজার ৬৪১ কোটি টাকার ২৯টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। সেই সাথে নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য সারাদেশে ব্যপকভাবে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। ২০২০ সালের ২৪ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৩৯ কোটি ৯৮ লক্ষ টাকা অর্থ সহায়তা এবং ৫ লক্ষ ৮৭ হাজার ৮০৭ মেট্রিক টন চাল ত্রাণ হিসেবে বিতরণ করা হয়েছে।
২০২১ থেকে বর্তমান:- বিশ্বের বেশীরভাগ দেশই যখন করোনা মহামারীতে ভ্যাকসিন প্রাপ্তি নিয়ে লড়ে যাচ্ছে তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর নেতৃত্বগুণে বাংলাদেশের মানুষের জন্য দ্রুততম সময়ে ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করেছেন। এখন পুরোদমে সারাদেশে ভ্যাকসিন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সারাদেশ আজ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। দেশি বিদেশি ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে চালু হয়েছে পদ্মা সেতু। আর এসব সম্ভব হয়েছে শুধুই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা আর দৃঢ়চিত্তের কারণে।
জাতিসংঘের ৭৬তম অধিবেশন চলাকালীন দারিদ্র্য দূরীকরণ, বিশ্বের সুরক্ষা এবং সবার জন্য শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ গ্রহণের সার্বজনীন আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশকে সঠিক পথে এগিয়ে নেওয়ার জন্য ‘এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার’ লাভ করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাতির সার্বভৌমত্বের প্রতীক : তার দুরদর্শী বৈদেশিক নীতির সুফল হিসেবে, ভারতীয় লোকসভায় ঐতিহাসিক স্থল সীমান্ত চুক্তি পাশ হয়েছে। এর ফলে ছিটমহলবাসীর চার শতকের দুঃখ দুর্দশার অবসান হয়েছে। তার ২০০৯-২০১৪ শাসনামলে, বাংলাদেশ দুইটি ঐতিহাসিক সমুদ্র সীমান্ত মামলায় জয়লাভ করে ভারত ও মিয়ানমারের সাথে। বাংলাদেশ ভারতের সাথে বঙ্গোপসাগরের বিরোধপূর্ণ ২৫,৬০২ বর্গ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে ১৯,৪৬৭ বর্গ কিলোমিটার জায়গা পায়।
নারী ক্ষমতায়নে অগ্রপথিক : তিনি নিজেই বিশ্বের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ১০০ নারীর মধ্যে একজন। অন্য নারীদেরকেও উদ্দীপ্ত করতে অক্লান্তভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। নারী শিক্ষায় তাঁর অবদানের জন্যে তিনি ইউনেসকোর শান্তিবৃক্ষ পুরস্কার পেয়েছেন। বাংলাদেশকে ডিজিটাল করায় তাঁর নানা উদ্যোগ এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে যুগান্তকারী অবদানের জন্যে গত বছর জাতিসংঘ তাঁকে সাউথ সাউথ পুরস্কার দেয়।
সহজাত নেতৃত্ব : তিনি ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন-একই বছর ভারত ু পাকিস্থান স্বাধীন হয়। বাংলাদেশ পাকিস্থানের অংশ হয়। তাঁর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান পাকিস্থানের শোষণমুলক নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতেই জীবনের বেশিরভাগ সময় পার করে দেন। ছাত্রনেতা হিসেবে শেখ হাসিনা স্বাধীনতাপুর্ব আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করেন। ১৯৬২র আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে তাঁর সক্রিয় অংশ গ্রহণ ছিলো।
ইডেন কলেজের সহ সভাপতি হিসেবে, তিনি দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অংশ নেন। তাঁর সেই আন্দোলন সফল হয়। ভাষা শহীদেরা ১৯৫২ সালে বাংলা ভাষার জন্যে আন্দোলন করতে গিয়ে প্রাণ দেন।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান পাকবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন এবং তাকে পাকিস্থানের একটি জেলে বন্দী করে রাখা হয়। শেখ হাসিনা তাঁর মা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের সাথে গৃহবন্দী থেকে মুক্তিযুদ্ধে কৌশলগত ভুমিকা রাখেন। অবশেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়।
জঙ্গি গোষ্ঠীর একমাত্র লক্ষ্যবস্তু : সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থানের কারণে বার বার তিনি হয়েছেন জঙ্গি গোষ্ঠীর একমাত্র লক্ষ্যবস্তু। এ পর্যন্ত তিনি ১৯ বার মৃত্যুর কাছাকাছি থেকে ফিরে এসেছেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট এ গ্রেনেড হামলা যার মধ্যে অন্যতম। ঐদিন রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউ যেন পরিণত হয়েছিলো মৃত্যুপুরীতে। গ্রেনেড হামলা হয়েছিলো শেখ হাসিনার সন্ত্রাস বিরোধী গণমিছিলে। শেখ হাসিনাকে মেরে ফেলার জন্য গ্রেনেডের পর ছোড়া হয়েছিলো গুলি। প্রায় ৩০ জন আওয়ামী লীগ নেতা কর্মী সেদিন শহীদ হয়েছিলেন। রাস্তা পরিণত হয়েছিলো রক্ত আর ছিন্ন বিচ্ছিন্ন মাংসের স্তুপে। জননেত্রী শেখ হাসিনা তখন থেকেই বয়ে বেড়াচ্ছেন তাঁর কানে শ্রবণজনিত সমস্যা।
উন্নত বাংলাদেশের পথিকৃৎ : শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব ও দেশ পরিচালনার নীতি পরিবর্তন করেছে প্রায় ২ কোটি মানুষের জীবনযাত্রা। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দারিদ্র্য বিমোচনে তাঁর প্রণীত ৬ দফা গৃহীত হয়েছে। সারাবিশ্বে বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সংস্থা শেখ হাসিনা প্রণীত দারিদ্র্য বিমোচন নীতি অনুসরণ করে যাচ্ছেন। তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্বে ভিশন-২০২১ এর লক্ষ্যমাত্রা অনেকাংশেই অর্জিত হয়েছে। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, গড় আয়ু বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ সুবিধা প্রাপ্তি ইত্যাদি লক্ষ্যমাত্রা সম্যের অনেক আগেই আমরা অর্জন করেছি। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়ানোর জন্য ২০২০ সালে তিনি ভিশন-২০৪১ এর রুপকল্প প্রদান করেন। ২০৪১ সালের মধ্যে আমাদের মাথাপিছু আয় দাঁড়াবে ১২,৫০০ মার্কিন ডলারে, দারিদ্র্য পুরোপুরি দূরীভূত হবে, প্রবৃদ্ধি থাকবে ৯% এর বেশি, বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা হবে ৫৬,৭৩৪ মেগাওয়াট।