বাআ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ বিশ্বে ধর্মীয় সম্প্রীতির একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তিনি বলেন, তাঁর সরকার সকল ধর্মের বিশ্বাসীদের সঙ্গে নিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে চায়।
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের দেশ এগিয়ে যাক। বাংলাদেশ সব সময় সকল ধর্মের মানুষকে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চায়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি মনে করি অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার মাধ্যমে সারা বিশ্বে আমরা একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পেরেছি।’
প্রধানমন্ত্রী গত শনিবার ২৫ মে বিকেলে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে দেশের ধর্মীয় নেতা ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কুশল বিনিময়কালে এই কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমাদের দেশকে আমরা গড়ে তুলতে চাই। এখানে জাতি-ধর্ম-বর্ণ বলে কোন কথা নেই। আমরা মানুষের জন্য কাজ করি। মানুষের সার্বিক ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে আমরা কাজ করি।
শেখ হাসিনা বলেন, এখানে অনেকেই আবার চেষ্টা করে বাংলাদেশকে ভিন্ন পথে নিতে। কিন্তু সেটা করতে পারবে না। বাংলাদেশের মানুষের মন মানসিকতা খুব উদার। সকলে একসঙ্গে চলতেই আমরা পছন্দ করি। সেভাবেই আমরা চলবো।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, প্রত্যেক ধর্মেরই মূল কথা যেটা গৌতম বুদ্ধও বলে গেছেন মানব কল্যাণ, জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক। আমাদেরও সেই কথা। সকলে সুখে থাকবেন সুন্দর জীবন যাপন করবেন।
নেপালের লুম্বিনি ডেভেলপমেন্ট ট্রাস্টের সঙ্গে সরকারের একটি চুক্তি রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা বাংলাদেশের পক্ষে সেখানে একটি বৌদ্ধ মন্দির নির্মাণ করবেন। কারণ ‘আমরা ভগবান গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থানে বাংলাদেশের একটি প্রতীক রাখতে চাই।’
উল্লেখ্য, লুম্বিনি গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান, ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ স্থাপনাগুলোর মধ্যে একটি। শান্তির আবাসস্থল এবং সারা বিশ্বের বৌদ্ধ ভক্ত এবং শান্তি প্রেমীদের কাছে একটি চূড়ান্ত তীর্থস্থান।
ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. এ হামিদ জমাদ্দার, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, একুশে পদক বিজয়ী অধ্যাপক ড. জিনবোধি ভিক্ষু, ভদন্ত শিলভদ্রা ভিক্ষু এবং বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট ভাইস চেয়ারম্যান সুপ্ত ভূষণ বড়ুয়া প্রমুখ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট সপরিবারে হত্যার পর বাংলাদেশকে একটি ধর্মীয় রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। খুনিরা ঘোষণাও দিয়েছিল, কিন্তু সফল হয়নি। বাংলাদেশের মানুষ তা মেনে নেয়নি। কারণ, বাংলাদেশকে জাতির পিতা অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে গড়তে চেয়েছিলেন। আর আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছে।
বিএনপি সরকার নববর্ষ ও পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, নতুন শতাব্দীতে আমরা যখন পদার্পণ করবো বলে একটি কর্মসুচি নিয়ে জাতীয় কমিটি করেছিলাম, খালেদা জিয়া তখন ক্ষমতায়। আমাদের অনুষ্ঠান করতে দেবে না। বাংলা নববর্ষ উদযাপন করা না কি হিন্দুয়ানি? অদ্ভুত অদ্ভুত কথা শুনতে হতো। সেই অনুষ্ঠানে বাধা দিলো। কিন্তু দেশের মানুষ সেই বাধা মানলো না। দেশের মানুষ যেটা ন্যায়সঙ্গত হয়, সেটাই করে।
শেখ হাসিনা বলেন, এক প্রকার জোর করেই আমরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢুকলাম। তখন সেখানে উপস্থিত ছিল হাজার হাজার মানুষ। আমরা দিবসটি উদযাপন করলাম। এখন কিন্তু পহেলা বৈশাখ, নববর্ষ আমরা পালন করি। এই উৎসব কিন্তু জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই মিলে পালন করি। প্রত্যেক ধর্মীয় উৎসবে সব ধর্মের মানুষ এই দেশে অংশ নেয়। পৃথিবীর আর কোনো রাষ্ট্রে এটি আছে বলে আমার জানা নেই।
জাতির পিতা সংবিধানে ধর্ম নিরপেক্ষতার নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে যার যার ধর্ম সে পালন করবে। এটাই ধর্ম নিরপেক্ষতা। ধর্ম নিরপেক্ষতার ব্যাখ্যাও বিকৃত করে দেয়ার চেষ্টা হয়েছিল। ধর্ম নিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। কেউ কেউ এটার অপব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেছিল। এটা আমরা স্পষ্ট করেছি।
সরকার প্রধান বলেন, জাতির পিতা আজ আমাদের মাঝে নেই কিন্তু তিনি যে অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে বাংলাদেশ গড়ে তুলেছিলেন সেই চেতনায় বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত করে গড়ে তোলাই তাঁর সরকারের লক্ষ্য।
এ সময় বৌদ্ধ ধর্মসহ দেশের সকল ধর্মীয় সম্প্রদায়ের কল্যাণে তাঁর সরকারের গৃহীত নানা পদক্ষেপের উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
দারিদ্র বিমোচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশে একটি মানুষও ভূমিহীন-গৃহহীণ থাকবে না। দরিদ্র ভুমিহীনদের বিনামূল্যে ঘর করে দেওয়ার পাশাপাশি তাদের জীবন-জীবিকারও ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামেও তাঁর সরকার অনেক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। দেশের বিভিন্ন এলাকার দুর্ভিক্ষ যেমন দূর করেছে, তেমনি ওইসব এলাকার মানুষের খাদ্য, চিকিৎসা ও নিরাপত্তারও ব্যবস্থা করেছে।
দারিদ্রের হার ইতোমধ্যে তাঁর সরকার বিএনপি আমলে থাকা ৪১ ভাগেরও ওপর থেকে ১৮ দশমিক ৭ ভাগে নামিয়ে এনেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৬ সালে দেশে হতদরিদ্র ছিল ২৫ দশমিক ১ ভাগ। সেখান থেকে আমরা ৫ দশমিক ৬ ভাগে আমরা নামাতে পেরেছি। কেউ এদেশে হতদরিদ্র থাকবেনা, সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নই তাঁর সরকারের উদ্দেশ্য। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমরা বাংলাদেশকে গড়ে তুলে জাতির পিতার স্বপ্ন আমরা পূরণ করবো।