আসন্ন ঈদ উল আযহা ও বাস্তবতা

ঈদ-উল-আযহার দামামা বাজতে শুরু করেছে। গত শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে ঈদের ছুটি। রাস্তা-ঘাট ও হাট-বাজার মেতে উঠেছে বাহারি রকমের ব্যবসায়। তবে কোরবানীর গরু এবং এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে যে সকল ব্যবসা রয়েছে তার সবকটিই এখন দৃশ্যপটে। জনতার দুর্ভোগ বলে একটি কথা সব-সময়ই প্রচলিত রয়েছে তবে ঈদ কেন্দ্রীক এই দুর্ভোগ চরমে উঠে। কোন কালেই এর থেকে রেহাই পাওয়ার কোন সুযোগ বা পথ খোলা আছে বলে মনে হয় নি। কর্তাব্যক্তিরা বাহারি রকমের কথার ফুলঝুড়ি সাজিয়ে আমাদেরকে আশ্যস্ত করে থাকেন কিন্তু সেই অশ্যস্তের মাঝে আমরা সব সময়ই হতাশায় নিমজ্জ্বিত হয়েছি এবং হয়ে যাচ্ছি।

যানজটে নাকাল দেশবাসী। বিশেষ করে ঘরমুখো মানুষজন এখন যানজটে দিশেহারা। কিন্তু করার কিছুই নেই। সবই মানিয়ে নিতে হয় এবং হয়েছে ও হবেও বটে। তবে এই যানজট কিন্তু মনুষ্যসৃষ্টি। কারণ প্রয়োজনের অতিরিক্ত মানুষ এখন রাস্তায়। আর রাস্তায় অধিকার নিয়ে অবস্থান করছেন সকল অবলা প্রাণীসকল। যাদেরকে পয়সার বিনীময়ে অদল-বদল করে যত্নসহকারে প্রত্যেকেই প্রত্যেকের বাড়িয়ে নিয়ে আসবে এবং সযতনে লালিত ও পলিত করে কোরবানীর তরে বিলিয়ে দিবে। মজাদার বাহারি খাবার ও বন্টনের মাধ্যমে এই যানজট অবসান করে স্ব স্ব কর্মে ফিরে আসবে চাঞ্চল্য।

সরকার ঘোষিত বাজার-হাট ছাড়াও রাস্তা দখল করে বসিয়েছে গরু এবং কোরবানীর সরঞ্জামের বাজার। মহল্লার অলিতে গলিতেও এই গরুর অস্থায়ী হাট। তাই বিশুদ্ধ নি:শ্বাস নিতে বড়ই কষ্ঠ এবং তা শুরু হয়েছে বটে কিন্তু শেষ হতে আরো অন্তত ২০-২৫দিন সময় লাগবে। তাই স্ব স্ব সচেতনতায় স্ব স্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণে সকলের প্রতি বিনিত আহবান জানাচ্ছি। কারণ এই ঈদ পূর্ব ও পর পরিবেশ বিপর্যয় থেকে বেঁচে থাকার সকল ব্যবস্থা স্ব স্ব উদ্যোগেই নেয়া জরুরী। আর এই বিষয়গুলো যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এবং বহমানও থাকবে। এতে কারো কোন নতুনত্ব আনয়নের সুযোগ নেই এবং থাকবেও না। তবে খোদা তাবারুকতায়ালা চাইলে এর অবসান হবেই হবে।

প্রসাধনী সামগ্রী এবং পোষক পরিচ্ছদের বাজারও কম যায়নি। লোকারণ্যে ভরপুর এইসকল দোকান, শপিংমল এবং হকার মার্কেটগুলো ভরপুর থেকে ভরপুর হচ্ছে আর নগদ লেনদেনের বোঝা ভারি হচ্ছে। লিকুইট মানি এখন ব্যাংক ও সংরক্ষণাঘার থেকে বের হয়ে লোকালয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে। যেদিকে তাকাবেন সেদিকেই শুধু চাকচিক্যপূর্ণ টাকা আর টাকা। ধনি ও গরীবের মধ্যে কোন ফারাক নেই বরং রয়েছে টাকার ছড়াছড়ি। তবে এতে বেশী কমের একটি কাহিনী থেকেই যায়। যাই হউক টাকাতো বের হয়েছে এবং দেশে টাকা আছে এবং টাকার কোন অভাব নেই তার প্রমান জাতি ও দেশ এবং আন্তর্জাতিক মহল প্রত্যক্ষ করে যাচ্ছে। তাই বাংলাদেশে টাকা নেই টাকার অভাব এবং দেশের মানুষ অভাবে ও কষ্টে আছে এই কথাগুলো এখন সুদুর অতিত। তাই এই ধরনের গুণেধরা ভুল কথার আর এখন কোন বাজার নেই। যে বা যারাই বলছেন এবং বলাতে চাইছেন তাদের জীবনের যবনীকাপাত ঘটেছে এবং সকল অধ্যায়ের সমাপ্তিরও শেষ হয়েছে বলে জাতি বা আগামীর প্রজন্ম ধরে নিয়েছে।

বাংলাদেশ স্মার্ট হয়েছে এবং স্মার্ট এর স্বীকৃতির লক্ষে নিরবে ও স্বরবে কাজ করে যাচ্ছে। তাই বলা যায় এখন গ্রামের/ গঞ্জের ভুলাভালা মানুষগুলোও স্মাট জীবন যাপনে অভ্যস্ত। তবে শহুরে জীবনের মানুষরা এখনও ঐ অজপাড়া গায়ের মানুষের মত স্মাট হতে পারেনি। তাই আসুন আমরা সকলে একযুগে চেষ্টাটুকু চালিয়ে অব্যাহত রাখি এবং স্বীকৃতিটুকু ঘরে নিয়ে সামনে অগ্রসর হই এবং আগামীর নতুন প্রজন্মকে উপহারটুকু দিয়ে নিজেদের দায়িত্বের সমাপ্তি ঘোষণা করি।

নিরাপত্তা এবং নিশ্চয়তা এবং আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর পৃথিবীর ব্যবস্থায় এখন আমরা আশাবাদি ও উজ্জিবীত। যাতায়তে নিবিঘ্নে; নিরাপত্তায় নিবিঘ্নে; অর্থনীতিতে নিবিঘ্নে; আনন্দ উদযাপনে নিবিঘ্নে; ধর্মীয় সংস্কৃতি ও উৎসব উদযাপনে নিবিঘ্নে পথ চলায় সন্তুষ্টির তুষ্টি ও তৃপ্তির হাসি প্রকাশে সমুজ্জ্বল। জাতি এখন অতিত নয় বর্তমান এবং ভবিষ্যতের দিকে দৌঁড়াচ্ছে। এখানে থামানোর কোন বাধাই কাজে আসবে না। তবে ঐ দৌঁড়ানোতে গতি সঞ্চারে সহায়ক ভুমিকা পালনকারী হিসেবে যদি কেউ আবির্ভূত হয় বা হন তাহলে হয়তো জাতি যুগের চাহিদায় এবং সময়ের প্রয়োজনে আপনাকে বা আপনার উদ্ভাবনী শক্তি ও সামর্থ এবং দিক নির্দেশনাকে বা কৌশলকে গ্রহণ করে আগামির চিন্তা ও চেতনায় পরিবর্তন আনয়ন করতে পারবে। এর বাইরে কোন টনিকই আর কাজে আসবে না। তাই সকল কিছুই আগামীর কল্যাণনির্ভর এবং জনতার জন্য প্রযুক্তির দৃশ্যমান অগ্রগতির ছোয়াই অগ্রসরমান হতে হবে।

সরকারি এবং বেসরকারি আর স্বেচ্ছাসেবি ও গৃহকর্মীদের চাহিদানুযায়ী এমনকি সরকারের নিতি ও রিতি অনুযায়ী ছুটি শুরু হয়েছে। সকলেই এখন যার যার গন্তব্যে রওয়ানা হয়েছেন এবং হবেন। আর অনেকেই শহুরে জীবনে অভ্যস্ত থেকে শহুরেই ঈদানন্দ উদযাপন করবেন। তাই সকলের জন্যই রইল শুভ কামনা এবং একরাশ নি:স্বার্থ ও নি:লোভ ভালবাসামিশ্রিত দোয়া। ঈদ মোবারক। ঈদ আমার আপনার সকলের জন্য বয়ে আনুক অনাবিল আনন্দের ঝর্ণাধারা। ঈদ আনন্দে চেতনায় ফিরে আনুক সাম্য ও ভ্রাতৃত্ব এবং সৌহাদ্য আর সম্মান ও সেবার মানবিক মানুষিকতা। দাম্বিকতা পরিহার এবং অসম্মান ও বেয়াদবীর সংস্কৃতির অবসান হউক এই ঈদে। স্ব স্ব ক্ষেত্রের স্ব স্ব অবস্থানের এবং স্ব স্ব গোত্রের সকল আরফাতি ভাইদের মর্যাদা ও সম্মানের জায়াগাটুকু অক্ষুন্ন রাখতে এই ঈদানন্দ আমাদেরকে সহায়তা করবে। নবীদের একটি কথা এবং খোদার অভিপ্রায় হলো “তোমরা যেরকম ব্যবহার আশা কর ঠিক সেই রকম তুমি নিজে আগে করে দেখাও।” এই রীতিতে ঈদানন্দ পুর্ণ হউক এবং পরিপূর্ণতাই পরিপূর্ণ হউক। খোদার আরেকটি কথা “ তোমার দান কোরবানী দেয়ার আগে যদি মনে হয় তোমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে কিছু বলার আছে তাহলে তোমার দান কোরবানী কোরবানগাহের সামনে রেখে আগে তোমার ভাইয়ের সঙ্গে মিটমাট করে আস এবং পরে কোরবানী দাও। তাহলেই তোমার কোরবানী গ্রহণ করা হবে।” সৃষ্টিকর্তার আরো অনেক শিক্ষা এবং দিক্ষা আমাদের জন্য রয়েছে এই কোরবানীকে ঘীরে। খোদা তায়ালা আমাদের অন্তর পরিক্ষা করেন এবং পশু নয় বরং অন্তর পরিস্কার ও সততায় ভরপুর আর খোদার প্রতি অঘাধ বিশ্বাস ও নির্ভরতা এবং তাঁর আদেশ পালনে নি:সন্দেহে এগিয়ে যাওয়ার মাধ্যমেই আমাদের আজ ও আগামীর কোরবানী প্রথার সমাপ্তি টানুক এই আশা ও বিশ্বাস রেখে সৃষ্টিকর্তার অভিপ্রায় ও ইচ্ছা জানা এবং বুঝার আগ্রহ ও ইচ্ছা রেখে আপনাদেরকে আবারো ঈদ মোবারক জানিয়ে এই সংখ্যার লিখায় বিদায় নিলাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published.